ওসমান হাদির মৃত্যু, শাহবাগ ও ঢাবি উত্তাল, শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক, সংযমের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
- আপডেট সময় : ১২:০০:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 75
এক সপ্তাহ আগে ভোটের প্রচারণায় গিয়ে গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢাকায় হাদির অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া নিউরোসার্জন আব্দুল আহাদ বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাঈদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাদি আর নাই।”
একই সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তায় বলা হয়, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও ফেসবুকে পোস্ট করে হাদির মৃত্যুর খবর জানান। তিনি লেখেন, “আবরার, আবু সাঈদদের মতো হাদী না থেকেও আরো বেশি করে থাকবেন বাংলাদেশের বুকে। ইউ ফেইলড টু কিল ওসমান হাদী!”
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের উদ্দেশ্যে বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন একটি চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে হাদিকে দেখে এসে বুধবার রাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’।
বৃহস্পতিবার বিকালে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ওসমান হাদি ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’ রয়েছেন এবং সিঙ্গাপুরেই তার অস্ত্রোপচারের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিন উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকেও হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাতে আসে তার মৃত্যুর খবর।
হাদির মৃত্যুর খবরে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন জুলাই মঞ্চের কর্মী ও সমর্থকেরা।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে হাদির মৃত্যুর সংবাদ আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ শুরু হয়।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা ‘আধিপত্যবাদবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে টিএসসির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’; ‘হাদি ভাই মরল কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘রুখে দাও জনগণ, ভারতীয় আগ্রাসন’—এ ধরনের স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের সেখানে বলেন, “আজকে আমার কথা বলার মত অবস্থা নেই। দুহাজার মানুষের জীবনের পর আজকেও কেন আমাদের তাকে হারাতে হলো। এ ব্যর্থ ইন্টেরিমের কারণে আজকে হাদীকে শহীদ হতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পুলিশ জানারও তার হাদির হত্যাকারীরা তার পাশে অবস্থান করছে। রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সব জানত। তারা জানত সবই। তাদের জানার মধ্যেই আজকে আমাদের হাদির শহীদ হতে হল।
“আর যদি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা না জানে, তাহলে তাদের কেন বেতন দেয়া হচ্ছে। আজকে সুশীলরা টকশোতে কথা বলতে বলতে আমাদেরকে হত্যাযজ্ঞ করে তুলেছে।”
বক্তব্য শেষে এবি জুবায়ের উপস্থিত সবাইকে শপথ করান। শপথবাক্যে তিনি বলেন, “আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব।”
এদিকে টিএসসি থেকে মিছিল বের করে জাতীয় ছাত্রশক্তি। তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’; ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও, রুখে দাও’; ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’—এ ধরনের স্লোগান দেন।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গেলে তিনি হামলার শিকার হন।
চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে তার মাথায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
ঢাকায় হাদির অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া নিউরোসার্জন আব্দুল আহাদ বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের হাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া বার্তায় বলা হয়, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।”
হাদির জন্য শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক
শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃতুতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্বে নেবে রাষ্ট্র।
‘হঠকারী হবেন না’, সংযমের আহ্বান ইউনূসের
শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর সবাইকে ধৈর্য ও সংযমের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে
দ্রুত আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন।
শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে তিনি শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।

















