স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহতরা সবাই ‘পাহাড়ি’। তবে কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত এবং মেজরসহ ১৩ জন সেনাসদস্য, গুইমারা থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে। অতি শিগগির তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ বলেন, “২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তিনজন যুবক মারা গেছেন। কয়েকজন আহত আছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “তারা গুলিতে না ঢিলের আঘাতে মারা গেছে, সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।” বর্তমানে গুইমারার পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের রবিবার সন্ধ্যায় জানান, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ জেলা হাসপাতালে আনা হয়েছে। সেগুলো মর্গে রাখা হয়েছে এবং সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত হবে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে গুইমারা থেকে আনা চারজন আহত চিকিৎসাধীন আছেন।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে পাহাড়ি এক কিশোরী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করে স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ, যাকে আদালত ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রবিবার সকালে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে বিক্ষোভ করা হয়।
অবরোধ চলাকালে রবিবার দুপুরে গুইমারার রামেসু বাজারে আগুন দেওয়া হয়। এতে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ও পাশের বসতবাড়ি পুড়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বাজারে আগুনে দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। জানা গেছে, বাজারের দোকানগুলোর মালিকদের অধিকাংশই পাহাড়ি।
ঘটনার পর গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। এর আগে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং অন্তত ছয়জন আহত হন বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মংসাজাই মারমা ও কংজরী মারমা জানান, অবরোধের সমর্থনে তাঁরা খাদ্যগুদামের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। তাঁদের অভিযোগ, এক পর্যায়ে বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান। এরপর আতঙ্কে সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ২০-২৫ জন মুখোশ পরা লোক বাজার ও বসতবাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দোকানপাট, বসতঘর ও একাধিক মোটরসাইকেলও পুড়ে যায়।