মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত চক্র ‘বিজয়ের নতুন ইতিহাস’ রচনার অপচেষ্টায়: তারেক রহমান
- আপডেট সময় : ০৯:২২:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 33
ক্ষমতাচ্যুত আগের সরকারের ‘অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার’ কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত একটি চক্র ‘বিজয়ের নতুন ইতিহাস’ রচনার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘‘পরাজিত চক্রকে মোকাবেলায় প্রতিশোধ প্রতিহিংসার পরিবর্তে বিজয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর, সমৃদ্ধ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হোক এবারের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
“শুধু আমার নয়, আমরা সকলে- বিএনপি মনে করে, যতদিন পর্যন্ত এই রাষ্ট্রের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র টেকসই ভিত্তির উপর দাঁড় করানো যাবে না।”
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানী ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সভায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে। তিনি নিজে প্রচারণায় অংশ নেবেন।
এ ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের তুমুল করতালির মধ্যে তিনি বলেন, ‘‘আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে, ওয়ার্ডে-মহল্লায়, অলি- গলিতে, রাজপথে জনগণের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই নির্বাচনে মিছিলে আমিও আপনাদের সঙ্গে থাকব ইনশাল্লাহ।”
১৮ বছর লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান ঢাকায় ফিরবেন বলে ইতিমধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার শুরুতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
৫৪তম বিজয় দিবসের আগের দিন এ বিষয়ক আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বারবার বিকৃত হওয়ার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘‘পতিত, পলায়নপর একটি চক্র শুধুমাত্র নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছিল। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে চেষ্টা করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় ইতিহাসে তারা পরিণত করেছিল।”
সেই ধারাবাহিকতায় এখনও চক্রান্ত অব্যাহত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘পতিত চক্রের অপরিণামদর্শী অপচেষ্টার কারণে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন আবার মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত একটি চক্র বিজয়ের নতুন ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা তারা করছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আজ পর্যন্ত যতবার দেশের গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আমরা দেখেছি ততবারই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে এ সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
‘‘কখনোই জনগণকে ক্ষমতাহীন করে রাষ্ট্রযন্ত্র কখনোই ক্ষমতাশীল হয়ে উঠতে পারে না। জনগণকে ক্ষমতাবান করার পূর্ব শর্তই হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, জনগণ জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এ কারণেই বিএনপির সব সময় রাষ্ট্র এবং সরকারের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই যে কোন মূল্যে দেশে অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে সকল সময় দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন।”
নির্বাচন বানচালে ভীতির পরিবেশ তৈরি প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমি বিজয় দিবসের এই গৌরবজনক সময় দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, যারা স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণকে ভয় দেখাতে চায় তারা অবশ্যই ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ।”
সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে অধিকার প্রতিষ্ঠার মিছিল এগিয়ে নিলে ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হঠতে বাধ্য হবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে প্রমাণিত হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রমাণিত হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রমাণিত হয়েছে জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনতার বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।”
‘এবারের নির্বাচন জটিল’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কিন্তু কেবলমাত্র একটি পরীক্ষামূলক বা অভিজ্ঞতা অর্জনের নির্বাচন নয়। সম্মানিত মহাসচিব সাহেব আজকের অনুষ্ঠানের বলেছেন, আমিও অতীতে বারবার বলেছি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অতীতের যেকোন নির্বাচনের চেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ।
‘‘কেন? এবারের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত আছে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাদ-আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বার্থ এবং সম্ভাবনা। সর্বোপরি এবারের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত আছে, বাংলাদেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বকে সুসংহত রাখার প্রশ্ন।”
‘আগামী দশকটি রূপান্তরের দশক’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘আগামী দশকটি হবে রূপান্তরের দশক। এই চিন্তা নিয়ে আমরা আমাদের দেশ গড়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছি। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, ৪ কোটি বা তারও বেশি তরুণ, কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক কর্মক্ষম এই জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিজয়কে সুসম্মত করাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।”
‘জিয়াউর রহমানের প্রবন্ধ মুক্তিযুদ্ধের অনন্য দলিল’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমান বাবার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘অনেকেই হয়তো জানেন স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ঘটনা বলে নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা একটি প্রবন্ধ রয়েছে এবং সেটির নাম হচ্ছে, ‘একটি জাতির জন্ম’। এই প্রবন্ধ আমাদের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অনন্য দলিল।”
‘কি ছিল ওসমান হাদির অপরাধ?’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের পক্ষের সাহসী সন্তান ওসমান হাদিকে গুলি করার যে ঘটনাটি, এটা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। কি ছিল ওসমান হাদির অপরাধ? একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার মনে যে প্রশ্নগুলো দেখা দিয়েছে- এই কয়েকটি প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই আমার মনে হয় জনগণের সামনেও এই যে ঘাতক, এই ঘাতকদের চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
‘‘আমার মত একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে যে প্রশ্নগুলো দেখা দিয়েছে- এক. বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার বা সরকারকে যদি ব্যর্থ করা যায়- কারা তাহলে খুশি হবে? দুই. নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বহাল রাখা গেলে কারা লাভবান হবে? তিন. দেশের জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কাদের লাভ?
“আমি বিশ্বাস করি এসব প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই হাদির ঘাতকেরা লুকিয়ে রয়েছে। স্বাধীনতা প্রিয় গণতান্ত্রকামী জনগণের শত্রুরা ঘাপটি মেরে রয়েছে এইসব প্রশ্নের ভেতরে।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান বক্তব্য রাখেন।
সৌজন্যে : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

















