শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় থাকছে না বিমানবাহিনী
- আপডেট সময় : ০৬:১৬:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 146
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে নিরাপত্তা দায়িত্ব আবারও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে দেওয়া হচ্ছে। বিমানবাহিনীর টাস্কফোর্সের সদস্যরা ব্যারাকে ফিরে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দফতর।
গত এক বছরে দুই বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও আলোচনা চলতে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অতিরিক্ত ডিআইজিকে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং পুলিশে ক্ষোভ দেখা দেয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
এপিবিএনের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ভেতর থেকে তাদের অফিস পর্যন্ত সরিয়ে দিয়েছে অ্যাভসেক। বিরোধের জের গিয়ে ঠেকে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়, যার মধ্যে রয়েছে— এপিবিএনকে দ্রুত বিমানবন্দরের ভেতরে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব শেষে নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো।
বিরোধের সূচনা
গত বর্ষার গণঅভ্যুত্থানের পর আনসার বিদ্রোহের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় থাকা প্রায় এক হাজার আনসার রাতারাতি দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। তখন বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এপিবিএনকে বিমানবন্দরের ভেতরে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়।
অক্টোবরের শেষ দিকে এপিবিএন অভিযোগ করে, টার্মিনালের ভেতরে তাদের অফিস থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়েছে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক)। এ নিয়ে বিমানবন্দর থানায় জিডিও করা হয়। পরে যাত্রী হয়রানির ঘটনায় বিমানবাহিনীর সদস্যরা সমালোচিত হন।
অ্যাভসেকের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, এপিবিএনের কর্মকর্তারাই ওই ঘটনার ভিডিও গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছেন। সর্বশেষ বেবিচক সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর আসিফ ইকবাল একটি সভায় এপিবিএন অধিনায়কের বিরুদ্ধে শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দেন।
গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী। উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার দফতরের সচিব এম সাইফুল্লাহ পান্না, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মাহমুদুল হোসাইন খান, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়সাল আহমেদ, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অনুপ কুমার তালুকদার, বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর আসিফ ইকবাল এবং শাহজালাল বিমানবন্দরের সাবেক নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম।
সভায় লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “আমাদের কথায় ও কাজে পেশাদারিত্ব ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখতে হবে।”
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “বিমানবন্দরে পুলিশের মূল কাজ অপরাধ প্রতিরোধ ও শনাক্তকরণ। আইনগতভাবে অন্য কোনো সংস্থা এ কাজ করতে পারে না।”
সভার সিদ্ধান্ত
সভায় ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়—
-
বিমানবন্দরের একক কমান্ড, রেগুলেশন ও নিয়ন্ত্রণ বেবিচকের অধীনে থাকবে।
-
এপিবিএন ও অ্যাভসেক বেবিচকের অধীনে দায়িত্ব পালন করবে।
-
দ্রুত এপিবিএন বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের ভেতরে দায়িত্ব নেবে।
-
আইজিপি ও বেবিচক চেয়ারম্যান অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈঠক করবেন।
-
বিমানবাহিনীর টাস্কফোর্স দায়িত্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজ বাহিনীতে ফিরে যাবে।
-
সব বিমানবন্দরে সাপ্তাহিক নিরাপত্তা সভা হবে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তনের অংশ হিসেবে বেবিচককে অপারেটর ও রেগুলেটর হিসেবে পৃথক করার সুপারিশও আলোচনায় উঠে আসে।


















