ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ঘাঁটিতে হামলা: নিহত ৬ বাংলাদেশি বিএনপি থেকে তিন দফা বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানকে দলে নিল জামায়াত তিন দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক: ‘ষড়যন্ত্রকারীরা প্রশিক্ষিত শুটার নামিয়েছে মাঠে’ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে চুরির ঘটনা হাদিকে গুলি: প্রধান সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ, ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি হাদির মাথা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গেছে, ঢাকা মেডিকেল থেকে এভারকেয়ারে স্থানান্তর তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন, জানালেন মির্জা ফখরুল ধানমন্ডি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আসিফ মাহমুদ ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে গুলি, নির্বাচনী পরিবেশ বানচালের ‘নীলনকশা’ বলছে বিএনপি

অন্যের জীবন রক্ষায় প্রাণ হারানো বাংলাদেশি দিদারুলের প্রশস্তিগাথা নিউ ইয়র্কে

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:০২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • / 233
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারানো বাংলাদেশি দিদারুল আলমের সাহসিকতার প্রশংসা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে।

৩৬ বছর বয়সী দিদার নিউ ইয়র্ক পুলিশে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত ছিলেন। সোমবার (২৮ জুলাই) নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে একটি বহুতল ভবনে উন্মত্ত এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন তিনিসহ চারজন। হামলাকারী হিসাবে চিহ্নিত শেন ডেভন টামুরা চারজনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

২৭ বছর বয়সী এই যুবক একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে এম-৪ রাইফেল নিয়ে পার্ক এভিনিউর ওই ভবনে ঢুকেছিলেন। কিস্তু কী ছিল তার উদ্দেশ্য, তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশি দিদার ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নিউ ইয়র্ক পুলিশে কাজ করতেন। তার কর্মস্থল ছিল ব্রঙ্কস। দুই ছেলের জনক দিদারের স্ত্রী এখন তৃতীয় সন্তানের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সোমবারের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে দিদারের সাহসিকতার প্রশংসা ঝরে নগর কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কণ্ঠে।

সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, “দিদারুল যা সবচেয়ে ভালোভাবে করতেন, তাই করছিলেন। তিনি জীবন বাঁচাচ্ছিলেন, যা সব পুলিশ সদস্য করে থাকেন। তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি বাংলাদেশি একজন অভিবাসী এবং তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন।”

সোমবার দিদারুল পুলিশের ডিউটিতে ছিলেন না। রুডিন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির হয়ে ভবনে নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। তবে তিনি পুলিশের পোশাকেই ছিলেন।

নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “দিদারুল ইসলাম চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি যেমন জীবনযাপন করেছেন, তেমনি মৃত্যুবরণ করেছেন, একজন বীর হিসাবে।”

তিনি বলেন, “আমরা তাকে যে কাজটি করতে বলেছিলাম, তিনি তাই করছিলেন। তিনি নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, তিনি চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। শহরের কাছে করা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। সাহসী এনওয়াইপিডি সদস্যদের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি, যারা আজ একজন ভাইকে হারিয়েছে,” বলেন পুলিশ কমিশনার।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ সদস্যদের সংগঠন পিবিএ’র প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হেনড্রি নিহত দিদারুলের অতিরিক্ত কাজের ব্যাখ্যায় বলেন, “প্রতিদিন তিনি তার কাজ করতেন এবং প্রতিদিন তিনি তার পরিবারের জন্য অর্থ সংস্থানে বের হতেন, তা অতিরিক্ত কাজ করেই হোক বা তার পরিবারের জন্য যা কিছু করতে হতো। তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ অফিসারের ইউনিফর্ম এবং শিল্ড পরতে গর্ববোধ করতেন।”

বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন দিদারুল হত্যাকাণ্ডে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “দিদারুল ইসলাম আমাদের বিভাগের সেরা গুণাবলীকে মূর্ত করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত নিউ ইয়র্কবাসীদের বিপদ থেকে রক্ষা করার সময় আজ তার জীবন অকালে শেষ হয়ে গেল। আমরা চিরকাল তাকে সম্মান জানাব এবং তার নিঃস্বার্থ সেবাকে স্মরণ করব।”

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেন টামুরা সন্ধ্যায় রাইফেল হাতে ওই ভবনে ঢুকে চারজনকে হত্যার পর ৩৩ তলায় উঠে আত্মহত্যা করেন।

ভবনের নিচতলায় লবিতে ঢুকেই দিদারকে হত্যা করেন শেন টামুরা, তারপর একটি পিলারের আড়ালে লুকিয়ে পড়া এক নারীকে হত্যা করেন তিনি। এরপর গুলি ‍ছুড়তে ছূড়তে লিফটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ডেস্কে থাকা একটি নিরাপত্তকর্মীকে তিনি হত্যা করেন।

লিফটে উঠে ৩৩ তলায় চলে যান টামুরা, যেখানে ভবনটির মালিক রুডিন প্রপার্টিজের অফিসে। সেখানে টামুরার গুলিতে নিহত হন একজন পুরুষ ব্যক্তি। তারপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে নিজের বুকে গুলি চালান টামুরা।

টামুরা ওই ভবনে ঢুকেছিলেন ৬টা ২৮ এ; তার এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর ৭টা ৫২ মিনিটে পরিস্থিনি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় পুলিশ।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অন্যের জীবন রক্ষায় প্রাণ হারানো বাংলাদেশি দিদারুলের প্রশস্তিগাথা নিউ ইয়র্কে

আপডেট সময় : ০৫:০২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

অন্যদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারানো বাংলাদেশি দিদারুল আলমের সাহসিকতার প্রশংসা চলছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে।

৩৬ বছর বয়সী দিদার নিউ ইয়র্ক পুলিশে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত ছিলেন। সোমবার (২৮ জুলাই) নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে একটি বহুতল ভবনে উন্মত্ত এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন তিনিসহ চারজন। হামলাকারী হিসাবে চিহ্নিত শেন ডেভন টামুরা চারজনকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

২৭ বছর বয়সী এই যুবক একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে এম-৪ রাইফেল নিয়ে পার্ক এভিনিউর ওই ভবনে ঢুকেছিলেন। কিস্তু কী ছিল তার উদ্দেশ্য, তা জানা যায়নি।

বাংলাদেশি দিদার ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নিউ ইয়র্ক পুলিশে কাজ করতেন। তার কর্মস্থল ছিল ব্রঙ্কস। দুই ছেলের জনক দিদারের স্ত্রী এখন তৃতীয় সন্তানের অপেক্ষায় রয়েছেন।

সোমবারের ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে দিদারের সাহসিকতার প্রশংসা ঝরে নগর কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের কণ্ঠে।

সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, “দিদারুল যা সবচেয়ে ভালোভাবে করতেন, তাই করছিলেন। তিনি জীবন বাঁচাচ্ছিলেন, যা সব পুলিশ সদস্য করে থাকেন। তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি বাংলাদেশি একজন অভিবাসী এবং তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন।”

সোমবার দিদারুল পুলিশের ডিউটিতে ছিলেন না। রুডিন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির হয়ে ভবনে নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। তবে তিনি পুলিশের পোশাকেই ছিলেন।

নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “দিদারুল ইসলাম চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি যেমন জীবনযাপন করেছেন, তেমনি মৃত্যুবরণ করেছেন, একজন বীর হিসাবে।”

তিনি বলেন, “আমরা তাকে যে কাজটি করতে বলেছিলাম, তিনি তাই করছিলেন। তিনি নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, তিনি চূড়ান্ত আত্মত্যাগ করেছেন। শহরের কাছে করা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। সাহসী এনওয়াইপিডি সদস্যদের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি, যারা আজ একজন ভাইকে হারিয়েছে,” বলেন পুলিশ কমিশনার।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ সদস্যদের সংগঠন পিবিএ’র প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হেনড্রি নিহত দিদারুলের অতিরিক্ত কাজের ব্যাখ্যায় বলেন, “প্রতিদিন তিনি তার কাজ করতেন এবং প্রতিদিন তিনি তার পরিবারের জন্য অর্থ সংস্থানে বের হতেন, তা অতিরিক্ত কাজ করেই হোক বা তার পরিবারের জন্য যা কিছু করতে হতো। তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ অফিসারের ইউনিফর্ম এবং শিল্ড পরতে গর্ববোধ করতেন।”

বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন দিদারুল হত্যাকাণ্ডে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, “দিদারুল ইসলাম আমাদের বিভাগের সেরা গুণাবলীকে মূর্ত করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত নিউ ইয়র্কবাসীদের বিপদ থেকে রক্ষা করার সময় আজ তার জীবন অকালে শেষ হয়ে গেল। আমরা চিরকাল তাকে সম্মান জানাব এবং তার নিঃস্বার্থ সেবাকে স্মরণ করব।”

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেন টামুরা সন্ধ্যায় রাইফেল হাতে ওই ভবনে ঢুকে চারজনকে হত্যার পর ৩৩ তলায় উঠে আত্মহত্যা করেন।

ভবনের নিচতলায় লবিতে ঢুকেই দিদারকে হত্যা করেন শেন টামুরা, তারপর একটি পিলারের আড়ালে লুকিয়ে পড়া এক নারীকে হত্যা করেন তিনি। এরপর গুলি ‍ছুড়তে ছূড়তে লিফটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ডেস্কে থাকা একটি নিরাপত্তকর্মীকে তিনি হত্যা করেন।

লিফটে উঠে ৩৩ তলায় চলে যান টামুরা, যেখানে ভবনটির মালিক রুডিন প্রপার্টিজের অফিসে। সেখানে টামুরার গুলিতে নিহত হন একজন পুরুষ ব্যক্তি। তারপর গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে নিজের বুকে গুলি চালান টামুরা।

টামুরা ওই ভবনে ঢুকেছিলেন ৬টা ২৮ এ; তার এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর ৭টা ৫২ মিনিটে পরিস্থিনি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় পুলিশ।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক পোস্ট