পরিবারে ও এলাকায় গোবরে পদ্মফুল ছিল আমার বড় ছেলেটি। মামুন ছিল আমার পরিবারে সকলের আদরে। ওকে নিয়ে আমার পরিবারের অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল। ওর লেখাপড়ার জন্য আমার দুই মেয়ে গাজীপুর মাওনায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করতো। আমি কখনো তরকারি, কখনো চা বিক্রী ও দিনমজুরের কাজ করে মাওনায় ভাড়া বাসায় থেকে আমার সংসার চালিয়ে ছোট ছেলে আরাফাতসহ কলমাকান্দায় আল মামুনের লেখাপড়া খরচ চালাইছি। আমাদের যে আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ তা আবার কাউকে বুঝতে দিত না মামুন। নিজ গ্রামসহ পাশ্ববর্তী গ্রামেও কারো বিপদ, সমস্যা কথা শুনলে সে এগিয়ে যেত। মাঝে মাঝে আমারে কইতো বাবা আমি তোমার বড় ছেলে অথচ আমি তোমাদের দায়িত্ব নিতে পারতেছি না। আমি শুনছি আর্থিক দুর্দশার কথা তুলইয়া ধরিয়া নাকি লেখালেখি করছে। পরে নাকি ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে। আমি মূর্খ মানুষ, লেখাপড়া জানি না। আমার সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেলরে ভাই। কান্নাজড়িত কন্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন প্রতিবেদককে মৃত আল মামুনের বাবা রফিকুল ইসলাম। অপরদিকে মামুনের মা শেফালী আক্তার সন্তানের শোকে আহাজারী করছেন আর শুধু কাঁদছেন আর কাঁদছেন। তিন ভাই -বোন বাকরুদ্ধ। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত রোববার (২৫ অক্টোবর) ভোরে নেত্রকোণার কলমাকান্দায় পরিবারের ব্যাপক আর্থিক সংকট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ফেইসবুকে আবেগঘন পোষ্ট দেয়া ছাত্রলীগের কর্মী ও কলমাকান্দা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আল মামুন এর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের খবরটি মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমলোচনায় বিষয়টি সারাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায ভাইরাল হওয়ায় । কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মৃত ছাত্রলীগ কর্মী আল মামুন এর পরিবারের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নির্দেশে প্রতিনিধি দলের দায়িত্বে কলমাকান্দা উপজেলার সন্তান ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উওর গণযোগাযোগ উপ -সম্পাদক মো. আওয়াল মিয়া প্রতিবেদককে জানান মৃত আল মামুন পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
এবিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু’র সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী জানান, মামুনের বাবার সাথে কথা বলেছি, মামুন বেঁচে থাকলে বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের জন্য যা করতো, তার কিছুটা হলেও করার চেষ্টা করবো, পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ। আজ থেকে মামুনের পরিবার আমার পরিবার, আমাদের ” টিম পজিটিভ বাংলাদেশ – টিপিবি ” এর পরিবার।