ব্রিটেনের বাংলাভাষী গণমাধ্যমের অত্যন্ত পরিচিত ও প্রিয়মুখ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্রডকাস্টার ও কমিউনিটি কর্মী – সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই আজ ১২ এপ্রিল শুক্রবার ২:৩০ মিনিটে লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন) ।
তিনি কয়েক বছর থেকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। তবে কিছু দিন থেকে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল।
তার মৃত্যুর সংবাদে বিশেষ করে সংবাদকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমেছে। অনেকেই সামাজিক যোগোযোগে তার অমায়িক ব্যবহার ও সৃজনশীল কর্মকান্ডের প্রসংশা করে রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন।
মরহুম সৈয়দ আফসার উদ্দিন এর জানাজার নামাজ ১৩ এপ্রিল শনিবার ইস্ট লন্ডন মসজিদে বাদ যোহর অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে Gardens of Peace, 1 Five Oaks Lane, Chigwell IG7 4QP দাফন করা হবে।
মৃত্যকালে তিনি স্ত্রী , তিন সন্তান – শাবাব, মেহরাব ও জারা সহ অসংখ্য আত্নীয় স্বজন শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন।
অত্যন্ত স্বজ্জন ,মেধাবী ও প্রাণোজ্জ্বল সৈয়দ আফসার উদ্দিন ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ব্রিটেনের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল – “চ্যানেল এস” এর জ্যেষ্ঠ সংবাদ পাঠক ।
তার বাচন ও উপস্থাপনা শৈলীর জন্য অনেক সংবাদ পাঠক ও অগণিত দর্শকের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন ১৯৯৯ সালে ব্রিটেনের প্রথম স্যাটেলাইট বাংলা টিভি চ্যানেল – বাংলা টিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে তিনি নিজেকে সংযুক্ত করেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন সৈয়দ আফসার উদ্দিন সংবাদ ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক গ্রূপের স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।বাংলাদেশ টেলিভিশনে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রিটেনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস রেডিওতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, খেলাধুলা এবং ম্যাগাজিন প্রোগ্রামে কাজ করেছেন আট বছর। চার বছরের জন্য ভয়েস অফ আমেরিকা রেডিওর লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।
শিক্ষকতায় তাঁর রয়েছে ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা। বাংলাসহ পাঁচটি বিষয়ে ইয়ার সেভেন থেকে এ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন হেড অব ইয়ার এবং ডাইরেক্টর অফ স্কুল হিসেবে কাজ করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বছর তিনেক আগে বাধ্য হয়ে তাঁকে অবসরে যেতে হয়। পাশাপাশি জিসিএসই বাংলার পরীক্ষক হিসেবে একিউএ এক্সাম বোর্ডের সাথে যুক্ত আছেন ১৯৯৬ সাল থেকে ।
সন্ধ্যাকালীন চাকুরী হিসেবে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সৈয়দ আফসার উদ্দিন ESOL লেকচারার হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কলেজে কাজ করেন।
তিনি ২০১৭ সালে সেরা পুরুষ সংবাদ উপস্থাপক বিভাগের অধীনে “ইস্টউড” পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৯ সালে ব্রিটেনের অনলাইন গণমাধ্যম ৫২ বাংলা টিভি সৈয়দ আফসার কে ব্রিটেনে শিক্ষা, সাংবাদিকতা, ও কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য “৫২ বাংলা টিভি বিশেষ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০১৯” প্রদান করে।
একই বছর সানরাইজ টুডে অনলাইন টিভি, সাংবাদিকতায় অসাধারণ অবদানের জন্য সৈয়দ আফসার কে “বিশেষ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করে।
টাওয়ার হ্যামলেটস এ শিক্ষা ও সমাজ সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে প্রয়াত মহামান্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে “এমবিই” সম্মানে ভূষিত করেন।
২০২২ সালে শিক্ষা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাঁকে আন্তর্জাতিক সম্মাননা – “ফ্রিম্যান অব দ্যা সিটি অব লন্ডন” প্রদান করা হয়। একই বছর সাংবাদিকতা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ” ব্রিটিশ বাংলাদেশী হুজ হু অ্যাওয়ার্ড ” দেয়া হয়। এছাড়াও সৈয়দ আফসার উদ্দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
২০২৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং ব্রিটিশ বাংলা মিডিয়াতে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব তাকে “আজীবন সম্মাননা” (“Life Time Achievement Award”) প্রদান করে।
তিনি তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য। তিনি ৫২বাংলায় নিয়মিত কলাম লিখতেন।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন এর দেশের বাড়ি চট্রগ্রামের মিরশ্বরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা “তাকিয়া বাড়ি” (সৈয়দ বাড়ি) । জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার সহধর্মিনীর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথ পুরের সৈয়দ পুর গ্রামে।
পারিবারিক জীবনে মরহুম সৈয়দ আফসার উদ্দিন স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।