বাংলাদেশ থেকে আগের তুলনায় কানাডার ভিসা প্রাপ্তি সহজ হওয়াতে বাংলা কমিউনিটির আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে টরেন্টোর বাংলা টাউন খ্যাত ডেনফ্রুর্ট এরিয়াতে।আগত বাংলাদেশীদের মধ্যে বড় একটি অংশ হচ্ছেন সিলেটের ।সেই সুবাদে সিলেট থেকেই শুরু হচ্ছে বিমান যাত্রা- ইমিগ্রেশন ক্রসিং এর গ্রীন কিংবা রেড সিগন্যাল।
আমি দুই মাসের ট্যুরে দেশে গিয়েছিলাম এবং ১৬ই মার্চ বাংলাদেশ বিমানের ফিরতি ফ্লাইটে এসে কানাডায় অবতরণ করি। আমার সিলেট থেকে টরেন্টো আসার পথে কাকতালীয়ভাবে অনেকগুলো ইমিগ্রেশন হার্ডল অতিক্রম করতে হয়েছে নিজেকে। সাথে নিজের কয়েকজন বন্ধুকেও করতে হয়েছে। সেটাই মূলত শেয়ার করছি। যারা কানাডায় নতুন আসবেন তাদের ভ্রমণ যাত্রায় হয়তো কিছুটা কাজে লাগতে পারে।
প্রথমেই বলি, আমার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, সিলেটের ইমিগ্রেশন সিস্টেম তুলনামূলক অনেক আপডেট এবং ইমিগ্রেশনের চলমান ইস্যু বা কনসার্ণ গুলো তারা খতিয়ে দেখছেন সতর্কতার সাথে।ইমিগ্রেশন অফিসাররা যাত্রীদের গতিবিধি জেনে ও তাদের জায়গায় তারা ক্লিয়ার হতে চাচ্ছেন সর্বাগ্রে।তাদের সাথে আলাপে যা বুঝেছি, যদিও সেটি ভিন্ন আলাপের দাবী রাখে।বিশেষ করে, যাত্রির বহনকৃত লাগেজের নিদৃষ্ট ওজনের ব্যাপারে তারা খুবই কঠোর অথবা নিয়মতান্ত্রিক বলা চলে।
আপনার বহনকৃত লাগেজের ওজন ২৩ কেজির উপরে হলেই আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে নতুন সমস্যার। ব্যাগ খুলে মালামাল সরানোর নির্দেশ এখন খুব স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে। মাঝে মধ্যে হয়তো দুই /এক কেজি ছাড়ও পেতে পারেন তবে তা অফিসারের একান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। হ্যান্ড ব্যাগে ৭ কেজির উপরে হলে সেখানেও নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে । এজন্য দিতে হতে পারে আলাদা চার্জ। হ্যান্ড ব্যাগের সাথে আলাদা একটি ব্যাকপ্যাক নেয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও আটকে যাবেন। তবে মহিলাদের পার্স ব্যাগের ব্যাপারে তারা কিছুটা নমনীয়।
এবার ইমিগ্রেশন হতে বোডিং পাস নেওয়ার পালা। আপনি ডাবল বোডিং এর কথা বলুন। এটা সাধারণত তারা দিয়ে দেয়। আপনি জিজ্ঞাস করা মানে স্মার্ট মুভ। সিলেটের ইমিগ্রেশন ডেক্সে আপনাকে হোটেল বুকিং এবং ইনভাইটেশন লেটার নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে নিশ্চিত।এটা ঢাকা হতে ফ্লাইট হলে সেখানেও নিশ্চিত জিজ্ঞেস করা হবে।
কোন ধরনের ঝামেলা এড়াতে চাইলে- আপনার জেনুইন হোটেল বুকিং এবং সেটার ইমেইল কনফার্মেশন এর সাথে পেমেন্ট কনফার্মেশন অবশ্যই শো করতে হবে
ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার এন্ড্রুস করা ডলার গণনা করতে পারে যেটা আমাদের লাইনের সামনের একাধিক যাত্রীর ক্ষেত্রে হয়েছে ।দ্বিতীয়ত আপনাকে কেউ যদি ইনভাইটেশন দিয়ে থাকে সেই ইনভাইটেশনের ভ্যালিডিটি কিংবা সত্যতা তারা যাচাই করবে ।আমার সামনের যাত্রীদের সাথে এটা হতে দেখেছি ।
যেমন আমার ফ্রেন্ড কে প্রথমে তার হোটেল রিজার্ভেশন নিয়ে প্রশ্ন করে এবং সে তার হোটেল রিজার্ভেশনের কপি দেখায় কিন্তু তারা রিজার্ভরেশন এবং পেমেন্টকৃত মানি রিসিটের নাম্বারে ত্রুটি থাকার কারণে তাকে নতুনভাবে রিজার্ভেশন করতে বলা হয়। সে সাথে সাথে সেটা পূনরায় করে।কিন্তু একদিনের পেমেন্ট এবং তিন দিনের রিজার্ভরেশন করেও ইমিগ্রেশন অফিসার সন্তুষ্ট হয়নি।
অফিসার তার ইনভাইটেশন পেপার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে ।আমি এই ফ্রেন্ডকে ইনভাইটেশন দিয়েছিলাম এবং আমরা একসাথেই ট্রাভেল করছিলাম। সে তখন ইমিগ্রেশন অফিসার আমার কথা বললে ; অফিসার আমার কাছ থেকে আমার পিয়ারকার্ড -ড্রাইভিং লাইসেন্স-বিলিং এড্রেসসহ বিভিন্ন তথ্যাদি চেক করে। একই সাথে আমি যে ইনভাইটেশন দিয়েছি সেটা আমার ফ্রেন্ডকে প্রিন্ট করে আনতে বলে এবং তাদের সামনেই আমাকে আবারো স্বাক্ষর করতে হয়।ব্যাপারটা আমার কাছে হয়রানি মনে হয়নি। কারণ আমার ফ্রেন্ড এর পেপার ওয়ার্কের ত্রুটির কারণে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে।
তারপর আমরা সিলেটের ইমিগ্রেশন শেষ করে ঢাকাতে আসি। ঢাকাতে হোটেল রিজার্ভেশন ছিল এবং সেটা শেষ করে আমরা টরেন্টোগামী বিমান বাংলাদেশ এর “অচিন পাখি”তে আরোহন করি।
কানাডায় আসার পর আমি স্বাভাবিকভাবেই আমার রেসিডেন্ট লাইন দিয়ে সহজে বেরিয়ে যাই ।কিন্তু আমার ফ্রেন্ড এবং তার ফ্যামিলিকে ভিজিটর লাইনে আসতে হয়। একপর্যায়ে পিয়ার্সন ইমিগ্রেশন তার পুরো ফ্যামিলিকে আটকায়।
তাদেরকে কেউ কি এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে আসবে কি না সেটার কথা বলে ।আমার ফ্রেন্ড প্রতি উত্তর তাদের হ্যাঁ জানায়।বর্ডার এজেন্সির একটি নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে কল আসে।
এখানে আমার ফ্রেন্ড তাৎক্ষণিকভাবে আমি যে তাদের সাথে এসেছি সেটি না বলে – “আমি তাদেরকে রিসিভ করতে আসবো” বলাতে একটা খটকা লেগে যায় ।বর্ডার এজেন্সি থেকে আমাকে কল দিয়ে বলে – আজ তোমার পরিচিত কেউ কি কানাডাতে আসবে এমন কিছু এক্সপেক্টিং করছি কি না?
আমি প্রতিউত্তরে হ্যাঁ বল্লে তারা -নাম কি? এবং সাথে কে কে আসবে? থাকবে কোথায়? এয়ারপোর্ট থেকে যাবে কীভাবে? সে আমার কোন টাইপের রিলেটিভ? ফাদার সাইড নাকি মাদার সাইড- ইত্যাদির উত্তর জানতে চায়।
তাৎক্ষণিকভাবে আমি তাদের বলি আমি আসছি তবে অনেক বিলম্ব হতে পারে। তোমরা তাদেরকে ছেড়ে দিতে পারো এবং তারা আমার বাসায় চলে আসবে ।প্রতিউত্তরে ইমিগ্রেশন অফিসার জানায় -আমরা তাদেরকে ছাড়ছি না যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আসছো, তুমি এসে তাদেরকে রিসিভ করে নিয়ে যাও।
তারপর আমি তাদের কথামতো হ্যাঁ বলি এবং এজন্য বিলম্ব হতে পারে সেটা আবারো রিপিট করি।আমার ফ্রেন্ড এবং তার ফ্যামিলিসহ বাচ্চাদের অবস্থা দেখে হয়তো ইমিগ্রেশন অফিসারের দয়া হয় এবং সে তাদেরকে বেরিয়ে যেতে বলে। এবং তারা বেরিয়ে আসে।
এখানে কয়েকটি সতর্কতা রয়েছে। যেগুলো যাত্রীদের মাথায় রাখা উচিত বলে মনে করি-
প্রথমত ব্যাগেজ এর ব্যাপারে ।আপনি ক্লিয়ার থাকতে হবে ওজনের ব্যাপারে ।প্রথমেই আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন এবং অতিরিক্ত ব্যাগেজের কারণে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে যান সেটা আপনাকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
কারণ আপনার যদি প্লান থাকে আপনি কানাডায় থেকেই যাবেন সেজন্য হয়তো প্রস্তুতি নিয়ে আসছেন।কিন্তু একজন ভিজিটর এতগুলো ব্যাগেজ নিয়ে সাধারণত ভিজিট করে না। সেটা মাথায় রাখা উচিত।
দ্বিতীয়ত আপনার সামনে যে সমস্যাগুলি আছে সেগুলো আপনি পূরণ করুন এবং নিশ্চিত করুন।
লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ভিসা করছেন। কানাডাতে আসছেন কিন্তু হোটেল রিজার্ভেশন এর ক্ষেত্রে এজেন্ট কর্তৃক বানানো ফেইক পেপার নিয়ে নিজেকে বিপদে ফেলা নি:সন্দেহে বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তৃতীয়ত আপনাদের ভিসার ক্ষেত্রে যদি ইনভাইটেশন এর সম্পর্ক থাকে তবে অবশ্যই যিনি ইনভাইটেশন দিয়েছেন তার সাথে আগে যোগাযোগ করেই তবে এয়ারলাইনে আরোহন করুন। আপনি আসছেন যে তারিখে সেটা যেনো ইনভাইটার অবগত থাকেন ।কারণ ব্যতিক্রম কিছু দেখলে বর্ডার এজেন্সি থেকে কল দেবে এটা কনফার্ম । যদি ভুয়া কিংবা আপনার ইনভাইটার ফোনে আপনাকে যদি না চিনেন তাহলে ও হয়তো আপনি কানাডাতে ঢুকে যেতে পারবেন ।কিন্তু আপনার নামের আইডির পাশে একটি ফ্লাগ উঠে যাবে প্রথম দিন থেকেই। প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন ।আপনি একজন প্রতারক। বাকি জীবনে যা কখনো আপনার জীবনযাপনে একটি ভয়ংকর ক্ষত চিহ্ন হয়ে রয়েই যাবে এবং ভুক্তভোগী হয়ে যাবেন।
আপনাদের যাত্রা শুভ হোক । বিদেশ ভ্রমণ কিংবা বিদেশে অবস্থান আরামদায়ক হউক। ইমিগ্রান্ডদের দেশ কানাডা। এখানে বসবাসরত বড় অংশই ইমিগ্রান্ড।আপনি হয়তো সরকারের কোন প্লানেরই অংশ । সময়ই সব কিছু সহজ করে দিবে।সাময়িক ভোগান্তির ধাক্কা সামলে উঠার জন্য আগাম অভিনন্দন।
ফুজেল আহমদ : রম্য লেখক।টরন্টো, কানাডা।
২৭ মার্চ ২০২৪ ইংরেজি