ধর্ম নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, লাশ গাছে ঝুলিয়ে আগুন
- আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 54
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল মালেক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানিতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দিপু চন্দ্র দাশ ওই কারখানার শ্রমিক ছিলেন। তিনি তারাকান্দা উপজেলার রবি চন্দ্র দাশের ছেলে।
পিটিয়ে হত্যা করা শ্রমিককে ‘কোম্পানির লোকেরাই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তার বোন।
নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস বলেন, “উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে তার বিরোধ থাকার কথা শুনেছি। সেই কারণেই হয়তো থাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
শুক্রবার বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, “আমার ভাই বিএ পাস, সে বাটন মোবাইল ব্যবহার করে। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার মত মানুষ সে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “কোম্পানির লোকজন ভাইকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতো। তাহলে তার এমন নির্মম মৃত্যু হতো না।”
নিহত দিপু চন্দ্র দাস (২৮) জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। দুই বছর ধরে তিনি ভালুকার জামিরদিয়া পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্ধপোড়া লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় বলে রাতে জানিয়েছিলেন ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল মালেক।
নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, “পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল দিপু। তাকে এভাবে মারা হবে কোনদিন ভাবতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলের কী দোষ ছিল বলেন? ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে দেশে তো আইন ছিল। সেই আইনে তো বিচার হতো। আমরা গরিব তাই ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি।”
নিহতের স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, “আমার একমাত্র সন্তান বাবা হারা হয়েছে। অভাবের সংসারে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো ভেবে পাচ্ছি না। হত্যার যেনো বিচার হয় রাষ্ট্রের কাছে এটাই চাওয়া।”
এ বিষয়ে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে কারখানার গেইটে গিয়ে দেখা করতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি।
তবে কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড ফিরোজ মিয়া জানান, দিপু চন্দ্র দাস ধর্ম অপমান না করেছেন বলে কোম্পানির ভেতর এবং বাহিরে জানাজানি হলে লোকজন গেইটের সামনে এসে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায়। পরে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাকে জনতার হাতে তুলে দেন।”
ভালুকা মডেল থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেন, শতশত মানুষের মধ্যে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পরে পুলিশ দুই ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে রাত আড়াইটার দিকে দিপু চন্দ্র দাসের মরদেহ মর্গে পাঠায়।
পরিবারের লোকজন অভিযোগ করলে মামলা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।


















