শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই  » «   লন্ডন মুসলিম সেন্টারে দুই শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফেইথ ইন এনভারনমেন্ট’ সামিট  » «   রোবটিক্স বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদের নেতৃত্বে কুইন মেরি ইউনভার্সিটি অব লন্ডনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাল্টিরোটর সোলার ড্রোন উদ্ভাবন  » «   লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির অফস্টেড রিপোর্টে ‘গুড’ গ্রেড অর্জন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস : ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা  » «   ব্যারিস্টার নাজির আহমদের “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন”নামে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও  সাংস্কৃতিক পরিষদের ২০২৫-২৬ পরিচালনা পর্ষদ গঠন  » «   গ্রেটার ফতেহপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সভা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত  » «   আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মিল আর গুজব রাজনীতি  » «   পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ডা. শফিকুর রহমান  » «   প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন  » «   শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

শিক্ষাগুরু



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

শিক্ষকরা হচ্ছেন অন্য যেকোনো পেশাজীবীদের তুলনায় অনেকাংশে অধিক সভ্যতার অভিভাবক।

হিউমার চ্যাপ্টারে  চমৎকার একটি উদ্ধৃতি বহুল চর্চিত – কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় কাউকে বিদ্যা বা জ্ঞান দান করে না বরং সেটা কোথায় পাওয়া যায় সে ব্যাপারে নির্দেশ করে মাত্র।

শিক্ষকদের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে- একজন অধ্যাপক সমাজের অন্যদের চেয়ে বেশী জ্ঞানী হয়ে থাকেন  তা কিন্তু না বরং তার অজ্ঞতা থাকে অধিকতর গোছানো।

বিয়ানীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষকবৃন্দকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর অভিযোগ, ভালো-মন্দ সবকিছুর মিশেলে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ।

ফেইসবুকের একটি ফেইক আইডি থেকে শিক্ষকদের  বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষকদের শুভাকাঙ্খীরা কথা বলতে গিয়ে ফেইক আইডির কথা উল্লেখ করে ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন । কিন্তু একটু সাধারণভাবে চিন্তা করলেই বুঝা যায়- ফেইক আইডির ব্যক্তিটি হয়তো কলেজের স্টুডেন্ট নয় কিংবা স্টুডেন্ট হতেও পারে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ফেইক আইডিতে উঠে আসা অভিযোগগুলো কলেজ প্রশাসন কী গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বা নিচ্ছে কিংবা এ ব্যাপারে কলেজ প্রশাসন শিক্ষকদের  পক্ষ থেকে কোন প্রেস রিলিজ কিংবা প্রেস কনফারেন্স হয়েছে কিনা ?

ব্যক্তিগতভাবে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে বিয়ানীবাজারের শিক্ষক তথা আপামর জনসাধারণের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে যে বিষয়টি আজ থেকে দুই যুগ আগেও দেখেছি- সেটা এখনো বহমান।

আমাদের আশেপাশে লেখাপড়া জানা লোকেরা নিজেদের পন্ডিত ভাবতে গিয়ে অন্যদের হেয় প্রতিপন্ন করে কথা বলার একটি ট্রেন্ড সমাজে চালু আছে এবং এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই আছেন যারা কিছু সংখ্যক বই পড়ে এবং  একাডেমিক কিছু ডিগ্রী অর্জন করে সুশীল হতে গিয়ে সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নেন। যা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটে বলে আমার মনে হয় না।

নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে  অন্যের মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করা ।নিজের পোশাকের স্বাধীনতার মানে এই নয় অন্যের পোশাক নিয়ে কথা বলা। জ্ঞান অর্জনের মানে এই নয় যে অন্যের জ্ঞান কিংবা অজ্ঞতা নিয়ে বাজেভাবে কথা বলা ।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মরত থাকবেন তখন সেই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি এবং প্রতিষ্ঠানের সম্মান মর্যাদা এগুলো মেনে চলা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।সেটা হোক ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে থেকে।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়ে থাকে সেগুলোর জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছু হয়েও প্রিন্সিপাল বরাবরে অভিযোগপত্র দেয়া যেত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ব্যাপার উঠে আসার জন্য শিক্ষকের অপসারণ কিংবা অপব্যবহারের চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে উঠবে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হবে।

এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে দেশ-বিদেশের প্রবাসী,ব্যবসায়ী এবং এলাকার সর্বসাধারণের আর্থিক,সামাজিক, মানসিক এবং কায়িক পরিশ্রমের বদৌলতে। সেজন্য এই কলেজের মর্যাদা রক্ষার জন্য অতিসত্বর এলাকার মুরুব্বিয়ান- জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসা উচিত।

একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে মিলাদ মো: জয়নুলের নেতৃত্বে আমরা যখন বিয়ানীবাজারে সাপ্তাহিক দিবালোক পত্রিকার যাত্রা শুরু করি তখন অগ্রজ সাবুল আহমদ, মো. মিলাদ জয়নুল সহ সবাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলাম কোন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যেন আমাদের  নিউজ করতে না হয়।

এমনকি যদি কেউ অপরাধীও হয় তারপরেও যেন যথাসাধ্য সেগুলোকে অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা না হয় । কারণ একজন শিক্ষক হলেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত লোক,সভ্যতার অভিভাবক।

একজন বা দুজনের সাথে শিক্ষকের মনোমালিন্য হতেই পারে কিন্তু একজন শিক্ষকের অধীনে অসংখ্য ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। সেই হিসেবে একজন শিক্ষকের নৈতিক অধঃপতন পুরো একটি প্রজন্ম কে তাদের আদর্শের জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

শিক্ষকদের মর্যাদা বজায় রাখার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব আরো বেশি। বাস্তবে দেখা যায় অনেক শিক্ষকের একাডেমিক সবই আছে শুধু  নৈতিকতা আর  প্রকৃত শিক্ষাটা যেন না।

আমাদের  পাঠশালার পাঠ্যবইয়ে ‘ শিক্ষাগুরুর শির’ কবিতায় বাদশা আলমগীরের শিক্ষকদের প্রতি মহানুভবতার গল্পটি অনেকেরই জানা। সেজন্য সেটা আবার না বলে আমেরিকার এক শিক্ষকের গল্প দিয়েই ইতি টানতেছি।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখনই কোন স্কুলে ভিজিট করেন তখন সুযোগ  অনুযায়ী ক্লাসরুম পরিদর্শনে যান।তো রেওয়াজ হলো প্রেসিডেন্ট যখন কোন ক্লাসরুমে ঢুকেন তখন ঐ ক্লাসের শিক্ষক মাথার টুপি খুলে কিংবা না থাকলেও  বাউ করে (একটু মাথা নিচু করে) শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।কিন্তু ঐদিন দেখা গেল সেই ক্লাসরুমের শিক্ষক সেরকম কিছু করেননি।

ব্যাপারটি প্রেসিডেন্ট অফিস কক্ষে এসে নিশ্চিত হবার জন্য শিক্ষক মহোদয়কে ডেকে এন কারণ জিজ্ঞেস করলে সেই শিক্ষক জবাব দিয়েছিলেন,মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমি আমার আচরণের জন্য দুঃখিত এবং করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী।

আমি আমার ছাত্রদের সামনে এজন্যই বাউ করিনি- যেন আমার ছাত্ররা দেখে, একজন শিক্ষক হলেন এমন ব্যক্তি যিনি কিনা প্রেসিডেন্টের সামনেও মাথা নত করেন না । শিক্ষকদের সম্মান বুঝাতে এইটা করেছি মাত্র। প্রেসিডেন্ট সেই শিক্ষক কে তিরস্কার না করে পুরস্কৃত করেছিলেন।

বিয়ানীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে সৃষ্ট  সমস্যার সমাধানে কলেজ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা খুবই জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ ।

একই সাথে শিক্ষকদের  ব্যাপারে যদি আচরণগত কোন সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের  সাথে কলেজ প্রশাসনের বসা উচিত।  কাউন্সিলিং করা উচিত এবং বাক স্বাধীনতার ব্যাপারে শিক্ষকদের বক্তব্যগুলো ভবিষ্যতে যাতে পুনরাবৃত্তি  না হয়- সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষক কেন্দ্র হতে বিচ্যুত হয়ে বৃত্তে চলে গেলে উনাকে আবারো কেন্দ্রে নিয়ে আসা বাকিদের দায়িত্ব। আমেরিকার সেই শিক্ষককের মতো আদর্শ শিক্ষক আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশী দরকার। কোন পন্থী কিংবা দলীয় মোড়কে আবৃত্ত জ্ঞান ভান্ডার হতে আলোর পরিবর্তে তাপ আসে যা সমাজ বিনির্মাণে ক্ষতিকর।

২৩ আগস্ট

লেখক: রম্য ও ক্রীড়া লেখক। টরেন্টো, কানাডা।

 

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন