কবি, বহুমাত্রিক লেখক ও সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিকে তাঁর জন্মভূমি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে লন্ডনে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
১৫ জুলাই সোমবার পূর্ব লণ্ডনের একটি হলে ‘সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে- যুক্তরাজ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সামাজিক সংগঠন বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, বাংলা পোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ।
সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুবিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে মুস্তাফিজ শফিকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এসময় সংবর্ধিত অতিথির সহধর্মিণী নুরজাহান আক্তারকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এছাড়াও বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন মুস্তাফিজ শফিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়।
সংবর্ধিত অতিথি মুস্তাফিজ শফি বলেন, পেশাগত জীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছি কিন্তু আজেকের সম্মানটি আমার কাছে সবচেয়ে বড় সম্মানের। যুক্তরাজ্যবাসী আমার শিকড়ভূমির সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে আমাকে সম্মানিত করা হয়েছে। এই অর্জন আমি মাথার উপরে রাখলাম, বুকের গভীরে রাখলাম।
মুস্তাফিজ শফি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশীদের মূলধারায় নানা সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলেন-বৃটিশ পার্লামেন্টে এখন আমাদের শুধু চারজন এমপি নয়,এদের দুজন মন্ত্রীত্বও পেয়েছেন। আমাদেরকে এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। আমি স্বপ্ন দেখি আগামীতে- বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কেউ বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী হবে।
তিনি নিজের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তার ব্যক্তিগত বড় স্বপ্নটি উল্লেখ করেন- ‘আমি স্বপ্ন দেখি- একটি জাতীয় দৈনিক সিলেটী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হোক। সেটার দায়িত্বে থেকে আমি দেশে ও প্রবাসে বিশেষকরে সিলেট বিভাগের সমস্যা, সম্ভাবনা, সাফল্য নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের বহু অর্জন নানাকারণে প্রকাশিত হয়না।’
বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে-কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমার অর্জনের বেশীরভাগে জড়িয়ে আছে আমার পরিবার, শিক্ষকবৃন্দ ও বেড়ে ওঠা পরিবেশ। এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত আমার সহপাঠি, অগ্রজ, অনুজ আছেন যারা বিভিন্ন পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত, যা আমাকে তৃপ্তি দেয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও লন্ডন বাংল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ বলেন, মুস্তাফিজ শফি যে উচ্চতায় আছেন সেখান থেকে জাতীয় ও সামাজিক কোন কনসার্ন নিয়ে কথা বললে রাস্ট্রের সর্ব্বোচ্চ পর্যায়ে সহজে পৌছবে।এবং ইতিমধ্যে তিনি কাজের মাধ্যমে সেই উদাহরণ রেখেছেন।
লন্ডন বাংলা প্রেক্লাবের এই সাবেক সভাপতি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আমলাতান্ত্রিকতার কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলেন- শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিপরীত চিত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছানো অত্যন্ত জরুরী। পেশাগত কাজের মাধ্যমে এরকম অনেক কাজ আপনি করেছেনও।
সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের জেষ্ঠ সহ সভাপতি ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী মুস্তাফিজ শফির মৌলিক ও সৃজনশীল কাজের প্রসংশা করে বলেন, তিনি সত্যিকার অর্থেই বহুমাত্রিক । জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের দায়িত্বের পাশাপাশি লিখেছেন ২৪টি বই। তার লেখা বই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহায়ক পাঠ্য সূচিতে অন্তর্ভূক্ত। মুজিববর্ষে তার সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ৩টি গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন- তৎকালীন রাস্টপতি মো. আব্দুল হামিদ।
লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বিলেতে শতবছর পার করা বাংলাভাষী গণমাধ্যমের ইতিহাস ও কমিউনিটি বান্ধব সংবাদ প্রকাশের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন- আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন মূলধারায় সাংবাদিকতায়ও আলোকিত ছাপ রাখছে। বৃটিশ-বাংলাদেশী অনেক লেখকের বই বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা থেকে বের হচ্ছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস এর নির্বাহী মেয়র এর ষ্ট্রাটিজিক এডভাইজার মুহাম্মদ জুবায়ের ছাত্রাবস্থায় মুস্তাফিজ শফির বিলেতে প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক সুরমা ও জনমত পত্রিকায় লেখালেখির কথা উল্লেখ করে বলেন-তিনি যতো বার বিলেতে আসেন সংবাদপত্রের অফিসে বেড়াতে আসেন ও খোজ-খবর নেন । তিনি আমাদের একজন আত্নিক স্বজন।
সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইছির মাহমুদ বলেন, মুস্তাফিজ শফির কাজের ধারাবাহিকতায় একটি বিষয় পরিস্কার- তিনি আগামীতে বৃহত্তর সিলেট তথা বাংলাদেশের জন্য অনন্য সম্মান বয়ে আনবেন। একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যখন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকেন তখন এইসব বিষয় নিয়ে কাজের ফলাফলও সরাসরি পাওয়া যায়।
সৃজনের আলোয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বহুমাত্রিক মুস্তাফিজ শফিকে জানার উদ্যোগটি প্রসংসার দাবী রাখে। গুণী এই মানুষের অনেক কিছু জানার সুযোগ হলো।
সন্ধ্যা ৭:৩০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে মুস্তাফিজ শফির কর্মসৃজন নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী পলিন মাঝি পরিবেশন করেন কবি মুস্তাফিজ শফির জনপ্রিয় কয়েকটি কবিতা।
বিশেষ অতিথি হিসাবে আরও বক্তব্য রাখেন সমিতির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান, সাবেক সভাপতি আব্দুস শফিক, কাউন্সিলার আজিজুর রহমান তকী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস নুরুজ্জামানজামান জামান, বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন ওদুদ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ছরওয়ার আহমদ, সাবেক জিএস জেবুল ইসলাম, সমিতির কোষাধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কবি ও সংগঠক ইকবাল হোসেন বুলবুল, লন্ডন মহানগর যুবলীগের সভাপতি তারেক আহমদ, বালাগঞ্জ-ওসমানী নগর সমিতির সভাপতি রশীদ আহমদ।
সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, নির্বাহি সদস্য নূর উদ্দীন লোদী, আব্দুর রহিম শামীম ও জিদ্দি চৌধুরী, টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফয়সল আহমদ রুহেল ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নির্বাহি সদস্য সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী, সমিতির উপদেষ্টা আসাব উদ্দিন আহমদ ও কামাল হোসাইন, সাবেক সহ সভাপতি আলাউদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ জয় ও ওহিদ চৌধুরী, সহ কোষাধ্যক্ষ ফয়সল আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, রিলিফ এন্ড ডিজাস্টার সেক্রেটারী মোহাম্মদ আলী, ট্যুরিজম সেক্রেটারী রাসেল চৌধুরী, তথ্য সম্পাদক ওয়াহিদ খান রানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জামাল খান, নির্বাহি সদস্য গুলজার আহমদ, ময়নুল ইসলাম, আবিদ হোসেন আফসার, এডভোকেট কামরুজ্জামান ও আবিদ চৌধুরী ।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংবর্ধিত অতিথি মুস্তাফিজ শফিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো – টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন ইউকে, শালেশ্বর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে, মাথিউরা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে, জলঢুপ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে, মুল্লাপুর ফ্রেন্ডস সোসাইটি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব, যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিয়ানীবাজার অঞ্চলের সাংবাদিকবৃন্দ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ এর সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ ও জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।
শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন- মৌলানা হাসান আহমদ।মুস্তাফিজ শফির কর্মসৃজন নিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি সাংবাদিক আনোয়ারুল ইসলাম অভি।