সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির অফস্টেড রিপোর্টে ‘গুড’ গ্রেড অর্জন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস : ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা  » «   ব্যারিস্টার নাজির আহমদের “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন”নামে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও  সাংস্কৃতিক পরিষদের ২০২৫-২৬ পরিচালনা পর্ষদ গঠন  » «   গ্রেটার ফতেহপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সভা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত  » «   আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মিল আর গুজব রাজনীতি  » «   পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ডা. শফিকুর রহমান  » «   প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন  » «   শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «   লন্ডনে চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্যবাহী মেজবানী ও মিলন মেলা  » «   কাউন্সিল অব মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান, দেড়শত হাজার পাউন্ডের বেশি সংগ্রহ  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

উৎকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও কবি নজরুল



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

মানবতাবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ দিবস সমাগত। তাঁর অসংখ্য কবিতা ও গান তাঁকে অমর করে রেখেছে। ধূমকেতুর মতো বাংলা সাহিত্যাকাশে তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। অনেকটা ধূমকেতুর মতো তিনি আবার আড়ালও হয়ে গেলেন! ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, (১১জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে যাঁর জন্ম, ২৯ আগস্ট,১৯৭৬ (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) রবিবার সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পি জি হাসপাতাল (বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়)-এ তাঁর মহাপ্রয়াণ!

কবি কাজী নজরুল ইসলাম-ই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র কবি, যিনি অন্তত তিনটি রাষ্ট্রের হয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন! প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ সৈন্য বাহিনী বিপুলসংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য হারায়। ফলে, নতুন করে ভারতীয় যুবকদের নিযুক্তি দিতে তৎপর হয় ব্রিটিশ সরকার। কিশোর নজরুল ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ভারতীয় শাখা ৪৯ ব্রিগেড রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। যুদ্ধে বিজয় হাসিল হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার রেজিমেন্টটি ভেঙে দিলে নজরুলও স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি স্বস্তিতে ছিলেন না! ভারতবাসীর প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এবার গর্জে উঠলেন! লিখে ফেললেন বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি “বিদ্রোহী” কবিতা! ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি কবিতাটি ‘বিজলী’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হতে-ই টনক নড়ে গেল ব্রিটিশ সরকারের! পাঠকবর্গের হৃদয় আকৃষ্ট করে নিলেন সদ্য যুদ্ধফেরত তরুণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম! ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে যিনি নির্ধিধায় অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সেই তিনি-ই এবার ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কলম-যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন! ১৯২২-এর ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হল তাঁর আরেকটি বিখ্যাত কবিতা। “আনন্দময়ীর আগমনে”। তাঁর-ই সম্পাদিত পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র ১২শ সংখ্যায় কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ সরকার তাঁর কলম নামক চাবুকের আঘাত সহ্য করতে না-পেরে তাঁকে জেলে পুরল! কিন্তু জেলে গিয়েও স্বস্তি দিলেন না ব্রিটিশ সরকারকে! কবিগুরুর একটি কবিতার প্যারোডি লিখলেন এভাবে, “তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে,/ তুমি ধন্য ধন্য হে!/ আমার এ গান, তোমার-ই ধ্যান,/ তুমি ধন্য ধন্য হে।।/ রেখেছ সান্ত্রী পাহারা দোরে,/ আঁধার কক্ষে জামাই-আদরে,/ বেঁধেছ শিকল-প্রণয-ডোরে,/ তুমি ধন্য ধন্য হে।।” ব্রিটিশ সরকার কারাগারে তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালালেও তিনি তাঁর কলম বিক্রি করেননি! ব্রিটিশ সরকার তাঁকে জেলে পাঠিয়ে-ই ক্ষান্ত হয়নি! তাঁর সাতটি গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করেছিল! শুধু ভারতবর্ষ নয়, সমগ্র পৃথিবীতে এমন ঘটনা বিরল! তাঁর বাজেয়াপ্ত সাতটি গ্রন্থ হচ্ছে : যুগবাণী, বিষের বাঁশী, ভাঙার গান, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্রমঙ্গল, প্রলয়-শিখা, চন্দ্রবিন্দু। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য তিনি প্রথমবার এক বছরের জন্য দণ্ড ভোগ করেন!

১৯৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত! ১৯৪২ সালের ৯ জুলাই তিনি আক্রান্ত হন। কিন্তু তাঁর ব্রিটিশবিরোধী কবিতা ও গান পাকিস্তানি হায়নাদের কাঁপন ধরিয়ে দেয়! মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর ভাঙার গান গেয়ে গেয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করলেন অকুতোভয়! কবি নজরুলের সংগীত ও কবিতার সংখ্যা প্রায় চার হাজার। তন্মধ্যে সংগীত-ই তিন হাজারের অধিক।

সাম্প্রতিককালে, এতদ্দেশে এক শ্রেণির উৎকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক রাজনীতি শুরু হয়েছে! রবীন্দ্রযুগের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে একশ্রেণির চেতনাজীবি কবি, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী তাঁদের চেতনাবিরোধী বলে জ্ঞান করতে শুরু করেছেন! তাই, খ্যাতনামা গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ও ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে গাওয়া সেই বিখ্যাত গানটি সম্প্রীতির ঠেলায় বদলে গিয়ে হল: “হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ/ চেতনায় উনিশ” বলে! কী গর্হিত অপরাধ! গানের কলি থেকে, কবিতার পংক্তি থেকে শব্দ বাদ দিয়ে কোন বার্তাটি দেয়া হল? কবির শহর শিলচরের বেশকিছুসংখ্যক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চের উদ্যোগে প্রতি বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি, চিঠিতে, ব্যানারে, লিফলেটে এই বিকৃত পংক্তিগুলো উদ্ধৃত করা হয়ে থাকে! কেউ প্রতিবাদ করেছেন বলে শুনিনি! মূল গীতিকার লিখেছিলেন : “সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ/চেতনাতে নজরুল”। এভাবে,’সম্প্রীতি’-র ঠেলায় কত কিছু-ই না বদলে গেল! ঐতিহাসিক স্থানের নাম, ঐতিহাসিক স্টেশনের নাম, ঐতিহ্যবাহী ভবনের নাম, ঐতিহাসিক উদ্যানের নাম! কত কী! চেতনাবাজরা আপসহীন কলমচি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চেতনার পরিপন্থী বলে গানের কলি থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন!
মানবতাবাদী, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সাম্যবাদী, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে গিয়ে গীতিকার শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ও ভারতরত্ন ভূপেন হাজারিকার সুরারোপিত ও কণ্ঠ দেয়া উপর্যুক্ত গানটির বিকৃতির কথা মনে পড়ে গেল। তাই, প্রতিবাদটুকু থাক কালের সাক্ষী হিসেবে

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন-

করিমগঞ্জ দিবস


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক