ক্রীড়াঙ্গনে খেলাধুলার সাথে মারামারির চিত্র খুবই চলমান একটি ক্রীড়াকান্ড। পেশাদারিত্বের দুহাই দিয়ে যতই সেগুলি কে আড়াল করার চেস্টা করা হউক না কেন ; বাস্তবতা কিন্তু মারামারির চিত্রকেই প্রতিফলিত করে যাচ্ছে।
ফুটবল -ক্রিকেট এর আইন কানুনগুলো দেখলেই পরিষ্কার বুঝা যায় এই মারামারি থেকে পরিত্রানের জন্য প্রতিটি ক্রীড়া রিলেটেড দায়িত্বশীলরা এগুলি নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করে যাচ্ছেন।
আধুনিক ফুটবল,ক্রিকেটে প্রতিটি বিভাগের জন্য যেমন আলাদা আলাদা কোচ রাখা হচ্ছে তেমনি যুক্ত করা হয়েছে মেন্টর -সাইকোলজিস্ট – এনালাইসিস সহ সামষ্ঠিক ব্যাপার গুলির উন্নতির জন্য অসংখ্য লেকচার সেশনের!
মাঠের মারামারির জন্য আম্পায়ার -ম্যাচ রেফারিসহ নানা অফিসিয়াল থাকলে ও বাহিরের কর্মকান্ডের জন্য বোর্ড কিংবা ক্লাব ম্যানেজমেন্টকেই এগুলির দেখভাল করতে হয়।
মাঠের মারামারির ব্যাপারে অনেকাংশেই সেগুলি কে ক্লাসিক্যাল একটি রুপ দেওয়ার চেস্টা করা হয় এবং ইতিহাসের পাতায় সেগুলিকে সেভাবেই মূল্যায়ন করা হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। কিন্তু মাঠের বাহিরের ঘটনা গুলোকে চেষ্টা করেও আড়াল করা যায় না, কারন খ্যাতিমান হওয়া মানে- খ্যাতির বিড়ম্বনাকেও আপন করে নিতে হয়।
পাকিস্থানের ক্রিকেটার ইনজামাম একবার ক্রিজ ছেড়ে গ্যালারিতে গিয়ে এক দর্শককে পিঠিয়েছিলেন, তাকে “আলু আলু” চিৎকার দিয়ে চেতানোর জন্য।
শোয়েব আক্তার একবার মতের মিল না হওয়াতে তর্কে জড়িয়ে ব্যাট দিয়ে পিঠিয়েছিলেন- দলেরই আরেক ফাস্ট বোলার আসিফকে।
হরভজন সিং একবার থাপ্পড়-ই মেরে বসেন শ্রীশান্তকে। বেচারা কেদেঁ কেটে নীল হয়ে যান।
মাইক গ্যাটিং এর ইংল্যান্ড দল এক সিরিজি পাকিস্থানী আম্পায়ারের বিপক্ষে ক্ষেপে গিয়ে তাকে হোটেল রুমের বাথটাবে চুবানি দিয়েছিল।
নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর পানশালায় গিয়ে ভাংচুরের কারনে দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন।
ইংল্যান্ডের ফ্লিনটপ থেকে বেনস্টুক অনেকেই তেমন ঘটনার জন্মদিয়েছেন।
মজার ব্যাপার হলো এসব ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট বোর্ড ব্যবস্থা নিয়েছে -শোধরানোর জন্য মনোবিদ নিয়োগ দিয়েছে কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশই মনে হয় ব্যতিক্রম। যেখানে মিডিয়া থেকে ভক্ত সবাই চমৎকারভাবে দুইভাগ হয়ে যায় এবং এসব ঝামেলাতে জড়িয়ে পড়া ক্রিকেটারদের ‘নায়ক’ কিংবা ‘খলনায়ক’ বানানোর দুটি পথ বেছে নেন- যা খুবই নিন্দনীয় উদাহরণ।
ইতিপূর্বে দেশের প্রথম মেগাস্টার আশরাফুল দর্শক পিঠিয়ে আলোচিত হয়েছেন।
শাহাদাত হোসেন -রুবেল হোসেন -নাসির হোসেন – আরাফাত সানী – সাব্বির হোসেন সহ অনেকেই মাঠের বাহিরের নিন্দনীয় কর্মকান্ডের জন্য নিন্দিত হয়েছেন। মামলার আসামীও হতে হয়েছে ।
তামিম দর্শকদের গালি দিয়ে -মুসফিক টীমমেটের উপর চড়াও হয়ে; হয়েছেন আলোচিত -সমালোচিত।
কিন্তু সম্ভবত এক্ষেত্রেও বিশ্বের নাম্বার ওয়ান হয়ে আছেন আমাদের একমাত্র পান্ডব সাকিব আল হাসান। বিতর্ক যেন তার নিত্য সঙ্গী। উল্টোভাবে বলা যায়, বিতর্কিত কর্মকান্ডতে মনে হয় সাকিব যেমন স্বাচ্ছ্যন্দ; তেমনি আচ্ছন্ন ও ।
কি মাঠে ; কি মাঠের বাহিরে বির্তক যেন সাকিবের কিটব্যাগেই থাকে।
সাবেক প্লেয়ারদের রেকর্ড নিয়ে কলাম লেখা, ড্রেসিংরুমে বসে অশ্লীল অঙ্গভংগী করা, বেটিং এর সাথে জড়ানো,একাধিক বার ভক্তদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়া, মাঠে প্লেয়ার- আম্পায়ার সহ অসংখ্য অখেলোয়াড়ী আচরন করেই ক্ষান্ত হননি,লাথি মেরে স্টাম্প ভাংগার মতো কাজও করেছেন- এই পান্ডব।
সাইকোলজিক্যালী চিন্তা করলে এইটা আসলে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা আর ক্ষমতার ছায়াই সাকিবকে আক্রান্ত করেছে নিঃসন্দেহে।কারন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আর সাকিবের অবস্থান ক্ষমতার একই ছাতার নীচে সমান্তরালে। মোস্তফা কামালের পায়ের কাছে বসে পড়া সাকিব এংরি কিংবা প্রতিবাদী হতে পারেন কিন্ত আইপিএলে কখনোই কি সেই ব্যক্তিত্ব দেখা গেছে ? যায় নাই, কারন, সেই ম্যানেজমেন্ট এল্যাও করবে না যেটি নিয়মিতই নতজানু হয়ে মেনে নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
চিন্তা করুন যাকে সাকিব ক্যাপ দিয়ে বাড়ি দিচ্ছেন -সে যদি পাল্টা আঘাত করতো কিংবা ভবিষ্যতে কেউ তেমনটি করে ফেলে তখন কী জবাব থাকবে?
শচীন -কোহলী – মেসিদের তারকা খ্যাতি এবং তাদের সে অনুযায়ী চলাফেরা দেখে বড় হওয়া প্রজন্মকে তারকার চাপ বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বিসিবির দুর্বল প্লেয়ার ব্যবস্থাপনার কারনেই আসলে আমাদের ক্রিকেটারদের মাঝে এই অস্থিরতা নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে যা তারুণ্যের আইডল হিসাবে ক্রিকেট প্লেয়ারদের অবস্থানকে এক্কেবারে বিচ্যুত করে দিচ্ছে নিঃসন্দেহে।।।
ফুজেল আহমদ: লেখক, ক্রীড়া বিশ্লেষক
টরন্টো। কানাডা।
১২ মার্চ ২০২৩সাল
আরও পড়ুন: