সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথিত পঞ্চপান্ডবের একজন হিসাবে মিডিয়াবাজি করা হয় হরহামেশাই। কিন্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই দাবী করে বসেন পঞ্চপান্ডব আবার কি ?
পান্ডব একজনই এবং সেটা তিনি নিজে।
এরপর আরো কয়েকদিন সংবাদ শিরোনামের মতোই আলোচনা -সমালোচনা মিলিয়ে ছিলেন টপ চার্টে। মাঠের ক্রিকেট কিংবা বাহিরের ক্রিকেট -অক্রিকেট সব মিলিয়ে সাকিব আল হাসান কিন্ত প্রমান করেই যাচ্ছেন পান্ডব বলতে যদি কিছু বুঝানো হয় তাহলে সেটা তিনি এবং সেটিও শুধু মাঠে নয় ;মাঠের বাহিরের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ২৯৬ উইকেট ঝুলিতে নিয়ে এবং ক্রশাল ম্যাচে মাত্র ৩.৫০ ইকনোমিতে ১০ ওভার বোলিং করে শিকার করেন চারটি গুরুত্বপূর্ন উইকেট।
ওয়ানডে ক্রিকেটে পঞ্চম স্পিনার এবং মাত্র ১৪ তম বোলার হিসাবে ৩০০ উইকেটের বনেদী ক্লাবে প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসাবে প্রবেশ করেন বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান।
২০০৬ সালের ৬ ই আগস্ট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে এল্টন চিগুম্বুরাকে আউট করে উইকেট এর পরিসংখ্যানে যে খাতা খুলেছিলেন সাকিব আজ ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষিক্ত রেহান আহমেদ কে আউট করে ৩০০ ক্লাবের মেম্বার হন বাংলাদেশের একমাত্র পান্ডব।
মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে খেলার মাঝে আছেন এমন বোলারদের মাঝে সাকিব-ই একমাত্র বোলার যিনি ৩০০ উইকেট ক্লাবের একমাত্র সক্রিয় সদস্য।
এক্ষেত্রে সাকিব দ্বিতীয় দ্রুততম স্পিনার হিসাবে প্রবেশ করেছেন- থ্রী হান্ড্রেড ক্লাবে, যেখানে একই প্রজাতির বোলার হিসাবে প্রথম ছিলেন মুরালিধরন, যিনি ম্যাচ খেলেছিলেন ২০২ আর সাকিবের লেগেছে ২২৭।
এই ২২৭ ম্যাচের পরিসংখ্যান একজন বোলার হিসাবেই যেখানে ঈর্ষনীয় সেখানে অলরাউন্ডার হিসাবে তো প্রায় অস্পর্শনীয় লেভেলে চলে যাচ্ছেন সাকিব।
ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৪ বার ;আর ৪ উইকেট নিয়েছেন -১০ বার।
আরেকটি বিরল রেকর্ড এর মালিকানাও পেয়ে যান সাকিব। বিশ্বের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে ৩০০ উইকেট এবং ৬০০০ রানের ডাবল অর্জন করেন পান্ডব সাকিব। এক্ষেত্রে তিনি আবার দ্রুততম। জয়সুরিয়ার লেগেছিলো ৩৯৭ ম্যাচ আর শহীদ আফ্রিদীর ৪১৪ ম্যাচ। সাকিবের সাকুল্যে -২২৭ ম্যাচ।
একই ম্যাচে ব্যাটিং এ হাফ সেঞ্চুরির সাথে চার উইকেট নিয়েছেন ৪ বার। পিছনে ফেলেছেন শহীদ আফ্রিদী এবং ক্রিস গেইল কে যারা এই কর্মটি করেছেন তিনবার করে।
আর হাফ সেঞ্চুরির সাথে ৩ উইকেট এমন পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রেও সাকিব শীর্ষে। সাকিব যেখানে এই কান্ডটি মাত্র ২২৭ ম্যাচে ঘটিয়েছেন ৯ বার। সেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শহীদ আফ্রিদী ৩৯৮ এবং ২৮৭ ম্যাচ খেলে শোয়েব মালিক দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন ৮ বার করে। রানিং প্লেয়ারদের মাঝে সাকিব ই চলমান।
ইম্পেক্ট প্লেয়ার হিসাবে এবং দলে নিজের উপস্থিতির ক্ষেত্রে সাকিবের ধারেকাছেও নেই কোন দেশী কিংবা বিদেশী প্লেয়ার। বাংলাদেশ আসলে সাকিব নিয়ে খেলা মানেই ১২ জন প্লেয়ার নিয়ে খেলা। আজ যেমন ব্যাটিং এ ৭৫(৭১) এরপর বোলিং এ ৪/৩৫ কি বলবেন দলের স্ট্রাইক বোলার নাকি মেইন ব্যাটসম্যান ! দুদিকেই টপ এ ।
মেধাবীরা নাকি অমনোযোগী কিংবা বেয়াড়া হয়। পরিসংখ্যানও কিন্ত তাই বলে। শোয়েব আক্তার – শেন ওয়ার্ন -বেন স্টোক -রস টেইলর- যুবরাজ সিং – শহীদ আফ্রিদী এমন অসংখ্য উদাহরন আছে। এসব ক্ষেত্রে বোর্ড এর দায়িত্ব হলো- সেসব প্লেয়ারদের কন্ট্রোলে রাখা -তাদের সেই মান বের করে আনার জন্য ইন্ডিভিজুয়েল প্ল্যান নিয়ে কাজ করা।
কখনো কখনো দলের কাপ্তানকেও সেই দায়িত্ব নেয়া -সৌরভ যেমন নিয়েছিলেন –যুবরাজদের ,ওয়াসিম আকরাম নিয়েছিলেন- আফ্রিদীদের; তেমন কেউ নেই বাংলাদের ক্রিকেট বোর্ড কিংবা কাপ্তানিতে। তা না হলে সাকিব আল হাসানের ওয়ান ডে পরিসংখ্যান এখন কোথায় থাকতো- সেটা ভেবে সাকিবিয়ানদের আফসোস করা ছাড়া কিচ্ছু নেই।
শচীন কিংবা মেসির মতো একটি সমাপ্তির প্রত্যাশায় সাকিবিয়ানরা। যদিও অনেক বড় সে স্বপ্ন। সাকিব ছাড়া সে স্বপ্ন বাড়ি যাবেই বা কি করে!
ফুজেল আহমদ: লেখক, ক্রীড়া বিশ্লেষক
টরেন্টো।কানাডা।৭ ই মার্চ -২০২৩ সাল ।