আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার গর্ভধারিণী মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। প্রায় ৬০ শতাংশ অকেজো কিডনি নিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন মা শামসুন নাহার তসনিম। সংবাদ সম্মেলনে মা শামসুন নাহার তসনিম এমন অভিযোগ করে উত্তরার নিজ বাড়িতে ফেরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
২০ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন নাহার তসনিম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।
তুরিন আফরোজের মা সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার ৬০ শতাংশ কিডনি অকেজো। এ অবস্থায় বাড়ি ভাড়ার টাকাসহ চিকিৎসার টাকাও নিয়ে গেছে তার মেয়ে।
শামসুন নাহার তসনিম বলেন, ‘আজ দুই বছর তিন মাস ঊনিশ দিন আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আঠারো দিন পরে তুরিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন- আমাদের ভাড়াটিয়াদের থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলতো। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়। অপরিচিত লোকদের রাত-বিরাত ঘরে প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে তার সঙ্গে প্রায়ই লাগতো (ঝগড়া)। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই, র্যার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ভয় দেখাতো এবং বলতো ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনো কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করার ভয় দেখাতো। আমি তো ধারা বুঝি না। আরও বলতো, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসবো।’
শামসুন নাহার তসনিম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি নীলফামারী যেতে পারি না, সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষীগত করেছে। প্রতিবাদ করলে প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম করেও হুমকি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব জানাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হই। ভেবেছিলাম তিনি একজন মা। ওনার ঘরে এমন হলে উনি কী করতেন? আমরা জানি উনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমি চাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। আমি আজ মিডিয়ার মাধ্যমে ওনার সহযোগিতা কামনা করছি। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। ৬৫ শতাংশ কিডনি অকেজো (এই বলে কাঁদতে থাকেন তিনি)। সঙ্গে আবার ডায়াবেটিসও। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়িভাড়া থেকে পেতাম সেটাও সে কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই এখানে-সেখানে থেকে বেড়াই। আমি আমার দেশ ছেড়ে এ বয়সে কেন বিদেশে পড়ে থাকবো? এ দেশ আমার জন্মস্থান ও আমার ৪৮ বছরের সংসার। আমি তো এখানেই থাকতে চাই। আমি আমার সংসারে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তুরিনের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির বলেন, ‘ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার (বিধবা) মাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটি আর তা হলো, দেশে আমাদের সম্পদ কুক্ষীগত করা। চক্ষু লজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার অভাগিনী মা ক্ষমতাসীন কাউকে অবমাননা করতে চাইনি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার বাসা থেকে আমাদের বের করে দেওয়ার পরও রাজউক কর্তৃক কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমার অনুপস্থিতিতে নিজ স্বার্থ কাজে লাগিয়ে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে সংবিধানবহির্ভূত কাজে বাধ্য করে আমাদের মা-ছেলের ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয় নীলফামারীতেও আমাদের চাচাতো ভাই ও বোনদের জমিজমা জিম্মি করে রেখেছে।’ তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, নিজের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ১৪ জুন শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মা ও ভাই।
এর আগেও ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করেছিলেন তার মা।
এছাড়াও ‘২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার এবং অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নেন।‘ মামলায় উল্লেখ করে গত ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।