আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনালে হাসানুল হক ইনুর বিচার শুরুর আদেশ
- আপডেট সময় : ০২:৪৯:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / 84
জুলাই আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যা করার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু-র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন।
রোববার (২ নভেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী-এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই আদেশ দেন। আগামী ২৩ নভেম্বর মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনায় উপস্থাপন করার দিন ধার্য করা হয়েছে।
চব্বিশের অভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় সাত জন হত্যাসহ মোট আটটি অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ইনুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ইনুকে গ্রেপ্তার করা হয়; এরপর বিভিন্ন মামলায় তাকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পক্ষের কৌঁসুলি মিজানুল ইসলাম অভিযোগ দাখিলের দিন (২৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালে বলেছেন— “হাসানুল হক ইনু ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এবং জাসদের সুপ্রিম। তিনি নিয়মিত শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন এবং তিনি ঊর্ধ্বতন অবস্থান থেকে স্থানীয় এসপি এবং তার দলীয় ক্যাডার বাহিনীকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিতেন।
“শেখ হাসিনাকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সশস্ত্র ক্যাডারদেরকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠনে নির্দেশনা দিতেন।”
মিজানুল বলেন, ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর ফেনালাপ দাখিল করা হয়েছে; এবং এই ফোনালাপ ট্রান্সক্রিপ্টসহ বিশেষজ্ঞ মতামত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইনু ভারতের ‘মিরর নাউ’ অনলাইন পোর্টালসহ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
কৌঁসুলির যুক্তি অনুসারে, অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে— ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নির্দেশ দেওয়া; ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে নিরস্ত্র জনতাকে চিহ্নিত করে লক্ষ করে হামলা; ছত্রিসেনা নামিয়ে বোমিং ও গুলি চালানো; এসব নির্দেশ স্থানীয় কুষ্টিয়ার এসপিকে অবহিত করা।
মিজানুল টোনাল বলে বলেন, “কথোপকথনে আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের ধরা হবে, তারপর স্ক্রলে নিউজে আসবে যে তাদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ছেড়ে ছেড়ে দেওয়া হবে আরকি – মানে তাদের মেরে ফেলা হবে।
“এছাড়া ফোনালাপ থেকে যেটা উঠে এসেছে, জঙ্গি নাটকের কার্ডটা খেলতে হবে। আন্দোলনকারীদেরকে জঙ্গি বলা হবে, তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হবে। এটা প্রচার করা হবে যে জঙ্গি আক্রমণে তারা নিহত হয়েছে। ৫ অগাস্ট কারফিউ উঠিয়ে দিয়ে প্রতিটা ওয়ার্ড থেকে ২ হাজার লোক ঢাকায় জমায়েত করতে হবে। শিবিরের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে। বিএনপিকে ধ্বংস করে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, কথোপকথনে দুই নেতার নাম শোনা গেছে—জোনয়েদ সাকি ও সাইফুল হক, এবং তাদেরকে দলে কীভাবে নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিজানুলের বক্তব্য ছিল, “শেখ হাসিনার নির্দেশে যে ধরনের নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া হয়, তার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন হাসানুল হক ইনু।”
পক্ষপ্রতিপক্ষের যুক্তি ও প্রস্তাবিত প্রমাণাদি শুনিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২ অবশেষে বিচার শুরুর আদেশ দেন এবং প্রসিকিউশনের সূচনায় ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। মামলার আট অভিযোগের মধ্যে দুটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ— একজনকে মাথায় গুলি করে হত্যা এবং ছয়জনকে গুলি করে হত্যা—এগুলো অনুসন্ধান ও প্রমাণ উপস্থাপনের লক্ষ্যে আনা হবে।

















