ঢাকা ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা

কমলাপুরে মেট্রোরেল: ‘দ্বিগুণ মূল্যে’ কাজ পেল ভারতীয় কোম্পানি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / 207

মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের কাজ চলছে

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ–যান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড টুব্রু—প্রাথমিক বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি মূল্যে।

২০২০–২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়।

মেট্রোরেল বর্ধিতকরণের এই অংশের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা রক্ষা করতে পারেনি। চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

তবে ডিএমটিসিএল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। তাদের ভাষায়, ভারতীয় কোম্পানি আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিল; আলোচনার মাধ্যমে সেটি কমিয়ে আনাই এখনকার সাফল্য।

দরপত্রের শুরুতে লারসন অ্যান্ড টুব্রুর প্রস্তাব ছিল প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। প্রাক্কলনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাম হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার এত উচ্চ দরে কাজ দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সঙ্গে করা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদের মনোনীত ঠিকাদার দিয়েই কাজটি করাতে হচ্ছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথমে সরকার ৪০০ কোটি টাকায় কাজের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার, কাঁচামাল সরবরাহের জটিলতা ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত বরাদ্দে কাজ করতে রাজি হয়নি। অবশেষে দর–কষাকষির পর উভয় পক্ষ ৪৬৫ কোটি টাকায় চুক্তিতে পৌঁছায়।

সদ্য বিদায়ী প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, “২০২২ সালের ডলারের দর অনুযায়ী ২৭৪ কোটি টাকায় করার কথা ছিল। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ৪৬৫ কোটি টাকায় করতে হচ্ছে।”

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার চেয়ে ৩০–৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছি।”

এই ৪৬৫ কোটি টাকায় লাইনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্টেশনের লিফট, এসকেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে সমন্বিত দরজা খোলার গেট, মনিটর, সিসি ক্যামেরা, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্য ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে অনেক ছোট এই অংশেই খরচ প্রায় অর্ধেক।

সরকার বলছে, যাত্রীসুবিধা এবং কমলাপুর থেকে যাত্রীপ্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনাই এই সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তৈরি করেছে। ডিএমটিসিএল আশা করছে, কমলাপুর স্টেশন চালু হলে বছরে অন্তত আরও ১২৬ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশে অধিকাংশ পিলারের কাজ শেষের পথে। তবে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি—দুই–একটি করে বসানো হচ্ছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, কাজের সার্বিক অগ্রগতি বর্তমানে প্রায় ৫৯ শতাংশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

কমলাপুরে মেট্রোরেল: ‘দ্বিগুণ মূল্যে’ কাজ পেল ভারতীয় কোম্পানি

আপডেট সময় : ০৪:৫৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্প্রসারণ প্রকল্পে বিদ্যুৎ–যান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড টুব্রু—প্রাথমিক বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি মূল্যে।

২০২০–২১ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়েছে ৪৬৫ কোটি টাকায়।

মেট্রোরেল বর্ধিতকরণের এই অংশের কাজ নির্ধারিত সময়সীমা রক্ষা করতে পারেনি। চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

তবে ডিএমটিসিএল এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলছেন, আলোচনার মাধ্যমে ব্যয় কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে। তাদের ভাষায়, ভারতীয় কোম্পানি আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিল; আলোচনার মাধ্যমে সেটি কমিয়ে আনাই এখনকার সাফল্য।

দরপত্রের শুরুতে লারসন অ্যান্ড টুব্রুর প্রস্তাব ছিল প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। প্রাক্কলনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাম হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার এত উচ্চ দরে কাজ দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা জাইকার সঙ্গে করা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাদের মনোনীত ঠিকাদার দিয়েই কাজটি করাতে হচ্ছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথমে সরকার ৪০০ কোটি টাকায় কাজের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার, কাঁচামাল সরবরাহের জটিলতা ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত বরাদ্দে কাজ করতে রাজি হয়নি। অবশেষে দর–কষাকষির পর উভয় পক্ষ ৪৬৫ কোটি টাকায় চুক্তিতে পৌঁছায়।

সদ্য বিদায়ী প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া বলেন, “২০২২ সালের ডলারের দর অনুযায়ী ২৭৪ কোটি টাকায় করার কথা ছিল। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ৪৬৫ কোটি টাকায় করতে হচ্ছে।”

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যা চেয়েছে তার চেয়ে ৩০–৪০ শতাংশ কম মূল্যে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছি।”

এই ৪৬৫ কোটি টাকায় লাইনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, স্টেশনের লিফট, এসকেলেটর, ট্রেনের দরজার সঙ্গে সমন্বিত দরজা খোলার গেট, মনিটর, সিসি ক্যামেরা, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের জন্য ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে অনেক ছোট এই অংশেই খরচ প্রায় অর্ধেক।

সরকার বলছে, যাত্রীসুবিধা এবং কমলাপুর থেকে যাত্রীপ্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনাই এই সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা তৈরি করেছে। ডিএমটিসিএল আশা করছে, কমলাপুর স্টেশন চালু হলে বছরে অন্তত আরও ১২৬ কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে।

মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশে অধিকাংশ পিলারের কাজ শেষের পথে। তবে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি—দুই–একটি করে বসানো হচ্ছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, কাজের সার্বিক অগ্রগতি বর্তমানে প্রায় ৫৯ শতাংশ।