ঢাকা ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দর থেকে কারাগারে: ইন্টেরিমের প্রতি শিল্পীদের ক্ষোভ ও তিরস্কার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:০০:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • / 272
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় রবিবার (১৮ মে ২০২৫) নায়িকা-গায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে আটক পরে গ্রেফতার দেখায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। জানা গেছে, নায়িকার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়। সোমবার (১৯ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর, জুলাই বিপ্লবের পুরোটা সময় নুসরাত ফারিয়া ছিলেন দেশের বাইরে। অনেকেই মনে করছেন, মামলা নয়, ফারিয়ার অপরাধ ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয়। এমন বিস্ময়কর ঘটনায় রবিবার থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল হ্যান্ডেল ফেসবুকে। সরকারের এমন কাণ্ডে বিস্মিত শিল্পীরা। অনেকেই নুসরাত ফারিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন, করেছেন তুমুল প্রতিবাদ।

নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম লিখেছেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!’

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন একজন সক্রিয় জুলাই বিপ্লবী। তিনি প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘কী লজ্জার বিষয়! যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে এই মেয়েটির কোনও সম্পর্ক নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি, যেখানে ন্যায়বিচার সাধারণভাবে প্রচলিত। তবে এই ঘটনাটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।’

চিত্রনায়িকা পরীমণি বিষয়টি নিয়ে মজা করে লিখেছেন, ‘কথা হচ্ছে, কোনোকালেই কথা বলতে পারবা না মনু। ঘুমাও ঘুমাও। ঘুমই উত্তম।’

নায়িকা মাহিয়া মাহি লিখেছেন, ‘কী লজ্জা! তিনি একজন শিল্পী!’

নায়ক বাপ্পী চৌধুরী লিখেছেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী নুসরাত ফারিয়ার শাস্তি হোক। নইলে মুক্তি দেওয়া হোক এ পরিস্থিতি থেকে। কিন্তু কোনও চরিত্রে অভিনয়ের কারণে বা ঢালাওভাবে যে গায়েবি মামলা হচ্ছে তার শিকার হলে বেদনাদায়ক।’

অভিনেত্রী নওশাবা লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র কী ভুলে যাচ্ছে?! আপনারা বাংলাদেশকে কথা দিয়েছিলেন, তার বাকস্বাধীনতা থাকবে, শিল্পী তার শিল্প চর্চা করবে আপন লয়ে, আরও কত কী! গোল্ডফিশ মেমোরি হলে তো হবে না! মনে করানোর ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে!’

নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য আর আজগুবি অভিযোগে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতার হয়রানিমূলক!’

সাংবাদিক-গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, ‘দুনিয়াজোড়া দুর্ভাগা শিল্পীদের তালিকা হলে নুসরাত ফারিয়ার রোল নাম্বার হবে ৪ বা ৫। তার কিছুই ঠিকঠাক হলো না এদেশে। সে গান গাইলো, কোরিওগ্রাফি নিয়ে আপত্তি। সে আইটেম গানে অভিনয় করলো সেখানে লিরিকে বিপত্তি। সে গাড়ি কিনলো সেখানে সামনে নিয়ে আসা হলো তার ক্রয় ক্ষমতা, সম্পত্তি। সে দেশে অভিনয় করলো সেটা নিয়েও হতে হতে হলো না কোনও নিষ্পত্তি। ঠেকলো গিয়ে গ্রেফতারে। অনেক কিছুই হয়তো করা হয়নি এদেশে তার, তবে এটাও জোর দিয়ে বলা যায় হত্যাচেষ্টার মতো অপরাধও সে করেনি। দুর্ভাগ্য মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তার বড় উদাহরণ ফারিয়া। বাংলাদেশের সবচেয়ে স্মার্ট অভিনেত্রী এই দেশকে কিছু না দিয়ে ফুরিয়ে গেলো। যেতে হলো জেল অবধি। তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।’

অভিনেতা খায়রুল বাশার প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘উনি অভিনেত্রী, ওনার কাজ অভিনয় করা। গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ সে করবেন; এই উনার কাজ। আমার ধারণা উনি রাজনীতি সচেতনও না এবং উনি কোনও রাজনীতি করেনও না। এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়া কান্নাও করেন নাই। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা? ওই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সকলকেই অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল, অনেকেই অডিশন দিয়েছেন। যারা অডিশন দিয়ে সিলেক্টেড হয়েছেন তারাই অভিনয় করেছেন। এটা সিম্পল! এখানে কেউ রাজনীতি করতে যাননি। অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোনও ক্রাইম না। যদি তাই হয়, তবে নুসরাত ফারিয়ার সাথে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোনও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন, এক্ষেত্রে শিল্পীদের করণীয় কি হবে? পরবর্তীতে অন্য সরকার তাদের হেনস্তা করবে এই মেনে হুকুমের দাস হবে? নাকি শিল্পীরা কখনোই কোনও সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আয়োজনের অংশ হবে না?’

অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা লিখেছেন, ‘ক্ষমতা, অবস্থান, দুর্নীতি…এটি একটি লুপ!’

নির্মাতা আফজাল হোসেন মুন্না লিখেছেন, ‘আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের পুরোটা সময় বিদেশ থাকার পরেও হত্যা মামলার আসামী! ৯ মাস পর এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার! ঘটনা এইখানেই শেষ হয় নাই, ফারিয়ার কারাগারেও যাওয়া লাগলো! এই ব্যাপক সময় ও শক্তি ক্ষয়কারী সংশ্লিষ্ট লোকজন আপনারা বিবেক, আয়না, আত্মীয়, বন্ধুদের দিকে তাকাতে বিব্রত বোধ করেন না? মানে হাসেন, কাঁদেন, শ্বাস নেন কিভাবে?’

কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী লিখেছেন, ‘জেলখানার আর দরকার কি? পুরোটাই তো জেলখানা।’

অভিনেতা সোহেল রানা লিখেছেন, ‘দায়িত্ব নিয়া বলেন এই রাষ্ট্রে শিল্পী কিভাবে তার কর্মটা করবে?’

নির্মাতা শঙ্খদাশ গুপ্ত লিখেছেন, ‘হাস্যকর! পুরো বিচার ব্যবস্থা একটি রসিকতায় পরিণত হয়েছে!’

নির্মাতা ইমেল হক এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদসহ চিহ্নিত অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করা হয় আর নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাহ সরকার, বাহ!’

সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান একটি ছড়া লিখেছেন। ছড়াটি এমন-

চোখের সামনে পার পেয়ে যায়
বোয়াল মাগুর রুই,
নরম কোমল নায়িকা ধরে
জেলের ভেতর থুই।
মন্ত্রী-নেতার সখ্যে যদি
খু*নের মামলা হয়,
তুমি আমি গান কবিতায়
কেউই মুক্ত নয়।
আজ ফারিয়া কালকে তুমি
পরশু হয়তো আমি,
হতেই পারি জুলাই সেনা
আমরা নইতো দামী।
অভিনয়ের সূত্রে যদি
কাউকে ধরলে প্রিয়
তোমার খালু ক্যামনে পালায়
পারলে জবাব দিয়ো।
ফ্যাসিবাদের বিদায় দিলাম
এটা কেমন দৃশ্য,
সংস্কারের খবর কিন্তু
নিচ্ছে বহির্বিশ্ব।
আসল কাজে ঠনঠনে হায়
কী যা তা করছো,
অন্যকে নয় নিজেরেই কি
আগাম তুমি ভরছো!

অন্যদিকে অভিনেতা মোস্তফিজুর নূর ইমরান লিখেছেন, ‘আমরা শিল্পী। আমরা স্বাধীন। আমরা সার্বজনীন। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা শুধু আমাদের কাজ করি।’
এরপর তিনি সতর্ক করে লিখেছেন, ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: শিল্প ও শিল্পীর অবমূল্যায়ন, জাতির ধ্বংসের কারণ। শিল্পী যদি সত্যিই অপরাধী প্রমাণিত হয়, অবশ্যই তার সুষ্ঠু বিচার হোক। আত্নপক্ষ সমর্থন থাকুক। কোনও অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলেও তার বিচার আইন অনুযায়ী অবশ্যই হোক। কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে এমন কোনও ফায়দা যদি নিয়ে থাকেন, যেটার কারণে কারও ক্ষতি হয়েছে, তবে অবশ্যই ন্যায়বিচার হোক। দুর্নীতি থাকলে সেটা প্রমাণ হোক, সেই অনুযায়ী শাস্তিও হোক। কিন্তু মিথ্যা মামলা, আটক, হয়রানি, পাবলিক, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল, মব ভায়োলেন্স- এসব মানহানি বন্ধ হোক এখনই।’

নাট্য নির্দেশক আলী হায়দার প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এমন উদ্ভট আর অপরিপক্ব সরকার এই দেশের মানুষ জীবনেও দেখেনাই; আশাকরি দেখবেও না। কাকে ধরে কাকে ছাড়ে তার কোনও কারণ নাই। অকারণ বাড়াবাড়ি হচ্ছে ইন্টেরিম! এসবের এমন জবাব এই জাতি দেবে তা আপনাদের ভাবনার বাইরে থাকবে। নুসরাত ফারিয়া ন্যায্য বিচার পাক এই দাবি জানাচ্ছি।’

ফারিয়া গ্রেপ্তার হলে তিশা-ফারুকীরও হওয়ার কথা: রাশেদ খাঁন

গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘হালকা’ করতেই ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তার কথায়, “নুসরাত ফরিয়াদের গ্রেফতার করে মূলত গণহত্যার বিচারকে হালকা করা হচ্ছে। নুসরাত ফারিয়া গ্রেফতার হলে তিশারাও গ্রেফতার হবে। এমনকি সারাজীবন আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়ার জন্য ফারুকীও এরেস্ট হওয়ার কথা।”

রবিবার গভীর রাতে ফেইসবুক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। নায়িকা নুসরাতের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ ধরে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রাখেন, “কোন সন্দেহ সংশয় থাকলে বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তদন্ত করতে পারতো। কিন্তু রাঘববোয়াল ছেড়ে ছিঁচকে চোর ধরে হৈচৈ তৈরি করার মহত্ত্ব কী?”

এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার দুপুরে বলেছেন, নুসরাত ফারিয়ার মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি নিরপরাধ কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর সেই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ মাসে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীসহ ২৮৩ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা গত ২৯ এপ্রিল তা এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় গুলি চালানো হলে তা এনামুলের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

প্রসঙ্গত, নুসরাত ফারিয়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এ ছাড়া মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় তিনি। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নুসরাত ফারিয়া। ওই সিনেমায় শেখ হাসিনার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে সংস্কৃতি উপদেষ্টার স্ত্রী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দর থেকে কারাগারে: ইন্টেরিমের প্রতি শিল্পীদের ক্ষোভ ও তিরস্কার

আপডেট সময় : ০৬:০০:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় রবিবার (১৮ মে ২০২৫) নায়িকা-গায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে আটক পরে গ্রেফতার দেখায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। জানা গেছে, নায়িকার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়। সোমবার (১৯ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর, জুলাই বিপ্লবের পুরোটা সময় নুসরাত ফারিয়া ছিলেন দেশের বাইরে। অনেকেই মনে করছেন, মামলা নয়, ফারিয়ার অপরাধ ‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয়। এমন বিস্ময়কর ঘটনায় রবিবার থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল হ্যান্ডেল ফেসবুকে। সরকারের এমন কাণ্ডে বিস্মিত শিল্পীরা। অনেকেই নুসরাত ফারিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন, করেছেন তুমুল প্রতিবাদ।

নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম লিখেছেন, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ!’

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন একজন সক্রিয় জুলাই বিপ্লবী। তিনি প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘কী লজ্জার বিষয়! যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে এই মেয়েটির কোনও সম্পর্ক নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি, যেখানে ন্যায়বিচার সাধারণভাবে প্রচলিত। তবে এই ঘটনাটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।’

চিত্রনায়িকা পরীমণি বিষয়টি নিয়ে মজা করে লিখেছেন, ‘কথা হচ্ছে, কোনোকালেই কথা বলতে পারবা না মনু। ঘুমাও ঘুমাও। ঘুমই উত্তম।’

নায়িকা মাহিয়া মাহি লিখেছেন, ‘কী লজ্জা! তিনি একজন শিল্পী!’

নায়ক বাপ্পী চৌধুরী লিখেছেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী নুসরাত ফারিয়ার শাস্তি হোক। নইলে মুক্তি দেওয়া হোক এ পরিস্থিতি থেকে। কিন্তু কোনও চরিত্রে অভিনয়ের কারণে বা ঢালাওভাবে যে গায়েবি মামলা হচ্ছে তার শিকার হলে বেদনাদায়ক।’

অভিনেত্রী নওশাবা লিখেছেন, ‘রাষ্ট্র কী ভুলে যাচ্ছে?! আপনারা বাংলাদেশকে কথা দিয়েছিলেন, তার বাকস্বাধীনতা থাকবে, শিল্পী তার শিল্প চর্চা করবে আপন লয়ে, আরও কত কী! গোল্ডফিশ মেমোরি হলে তো হবে না! মনে করানোর ব্যবস্থা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে!’

নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য আর আজগুবি অভিযোগে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতার হয়রানিমূলক!’

সাংবাদিক-গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, ‘দুনিয়াজোড়া দুর্ভাগা শিল্পীদের তালিকা হলে নুসরাত ফারিয়ার রোল নাম্বার হবে ৪ বা ৫। তার কিছুই ঠিকঠাক হলো না এদেশে। সে গান গাইলো, কোরিওগ্রাফি নিয়ে আপত্তি। সে আইটেম গানে অভিনয় করলো সেখানে লিরিকে বিপত্তি। সে গাড়ি কিনলো সেখানে সামনে নিয়ে আসা হলো তার ক্রয় ক্ষমতা, সম্পত্তি। সে দেশে অভিনয় করলো সেটা নিয়েও হতে হতে হলো না কোনও নিষ্পত্তি। ঠেকলো গিয়ে গ্রেফতারে। অনেক কিছুই হয়তো করা হয়নি এদেশে তার, তবে এটাও জোর দিয়ে বলা যায় হত্যাচেষ্টার মতো অপরাধও সে করেনি। দুর্ভাগ্য মানুষকে কোথায় নিয়ে যায় তার বড় উদাহরণ ফারিয়া। বাংলাদেশের সবচেয়ে স্মার্ট অভিনেত্রী এই দেশকে কিছু না দিয়ে ফুরিয়ে গেলো। যেতে হলো জেল অবধি। তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।’

অভিনেতা খায়রুল বাশার প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘উনি অভিনেত্রী, ওনার কাজ অভিনয় করা। গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ সে করবেন; এই উনার কাজ। আমার ধারণা উনি রাজনীতি সচেতনও না এবং উনি কোনও রাজনীতি করেনও না। এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়া কান্নাও করেন নাই। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা? ওই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সকলকেই অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল, অনেকেই অডিশন দিয়েছেন। যারা অডিশন দিয়ে সিলেক্টেড হয়েছেন তারাই অভিনয় করেছেন। এটা সিম্পল! এখানে কেউ রাজনীতি করতে যাননি। অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোনও ক্রাইম না। যদি তাই হয়, তবে নুসরাত ফারিয়ার সাথে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোনও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন, এক্ষেত্রে শিল্পীদের করণীয় কি হবে? পরবর্তীতে অন্য সরকার তাদের হেনস্তা করবে এই মেনে হুকুমের দাস হবে? নাকি শিল্পীরা কখনোই কোনও সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আয়োজনের অংশ হবে না?’

অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা লিখেছেন, ‘ক্ষমতা, অবস্থান, দুর্নীতি…এটি একটি লুপ!’

নির্মাতা আফজাল হোসেন মুন্না লিখেছেন, ‘আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের পুরোটা সময় বিদেশ থাকার পরেও হত্যা মামলার আসামী! ৯ মাস পর এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার! ঘটনা এইখানেই শেষ হয় নাই, ফারিয়ার কারাগারেও যাওয়া লাগলো! এই ব্যাপক সময় ও শক্তি ক্ষয়কারী সংশ্লিষ্ট লোকজন আপনারা বিবেক, আয়না, আত্মীয়, বন্ধুদের দিকে তাকাতে বিব্রত বোধ করেন না? মানে হাসেন, কাঁদেন, শ্বাস নেন কিভাবে?’

কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী লিখেছেন, ‘জেলখানার আর দরকার কি? পুরোটাই তো জেলখানা।’

অভিনেতা সোহেল রানা লিখেছেন, ‘দায়িত্ব নিয়া বলেন এই রাষ্ট্রে শিল্পী কিভাবে তার কর্মটা করবে?’

নির্মাতা শঙ্খদাশ গুপ্ত লিখেছেন, ‘হাস্যকর! পুরো বিচার ব্যবস্থা একটি রসিকতায় পরিণত হয়েছে!’

নির্মাতা ইমেল হক এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘আব্দুল হামিদসহ চিহ্নিত অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করা হয় আর নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। বাহ সরকার, বাহ!’

সংগীতশিল্পী লুৎফর হাসান একটি ছড়া লিখেছেন। ছড়াটি এমন-

চোখের সামনে পার পেয়ে যায়
বোয়াল মাগুর রুই,
নরম কোমল নায়িকা ধরে
জেলের ভেতর থুই।
মন্ত্রী-নেতার সখ্যে যদি
খু*নের মামলা হয়,
তুমি আমি গান কবিতায়
কেউই মুক্ত নয়।
আজ ফারিয়া কালকে তুমি
পরশু হয়তো আমি,
হতেই পারি জুলাই সেনা
আমরা নইতো দামী।
অভিনয়ের সূত্রে যদি
কাউকে ধরলে প্রিয়
তোমার খালু ক্যামনে পালায়
পারলে জবাব দিয়ো।
ফ্যাসিবাদের বিদায় দিলাম
এটা কেমন দৃশ্য,
সংস্কারের খবর কিন্তু
নিচ্ছে বহির্বিশ্ব।
আসল কাজে ঠনঠনে হায়
কী যা তা করছো,
অন্যকে নয় নিজেরেই কি
আগাম তুমি ভরছো!

অন্যদিকে অভিনেতা মোস্তফিজুর নূর ইমরান লিখেছেন, ‘আমরা শিল্পী। আমরা স্বাধীন। আমরা সার্বজনীন। আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা শুধু আমাদের কাজ করি।’
এরপর তিনি সতর্ক করে লিখেছেন, ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: শিল্প ও শিল্পীর অবমূল্যায়ন, জাতির ধ্বংসের কারণ। শিল্পী যদি সত্যিই অপরাধী প্রমাণিত হয়, অবশ্যই তার সুষ্ঠু বিচার হোক। আত্নপক্ষ সমর্থন থাকুক। কোনও অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলেও তার বিচার আইন অনুযায়ী অবশ্যই হোক। কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে এমন কোনও ফায়দা যদি নিয়ে থাকেন, যেটার কারণে কারও ক্ষতি হয়েছে, তবে অবশ্যই ন্যায়বিচার হোক। দুর্নীতি থাকলে সেটা প্রমাণ হোক, সেই অনুযায়ী শাস্তিও হোক। কিন্তু মিথ্যা মামলা, আটক, হয়রানি, পাবলিক, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল, মব ভায়োলেন্স- এসব মানহানি বন্ধ হোক এখনই।’

নাট্য নির্দেশক আলী হায়দার প্রতিবাদ করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে এমন উদ্ভট আর অপরিপক্ব সরকার এই দেশের মানুষ জীবনেও দেখেনাই; আশাকরি দেখবেও না। কাকে ধরে কাকে ছাড়ে তার কোনও কারণ নাই। অকারণ বাড়াবাড়ি হচ্ছে ইন্টেরিম! এসবের এমন জবাব এই জাতি দেবে তা আপনাদের ভাবনার বাইরে থাকবে। নুসরাত ফারিয়া ন্যায্য বিচার পাক এই দাবি জানাচ্ছি।’

ফারিয়া গ্রেপ্তার হলে তিশা-ফারুকীরও হওয়ার কথা: রাশেদ খাঁন

গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে ‘হালকা’ করতেই ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তার কথায়, “নুসরাত ফরিয়াদের গ্রেফতার করে মূলত গণহত্যার বিচারকে হালকা করা হচ্ছে। নুসরাত ফারিয়া গ্রেফতার হলে তিশারাও গ্রেফতার হবে। এমনকি সারাজীবন আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়ার জন্য ফারুকীও এরেস্ট হওয়ার কথা।”

রবিবার গভীর রাতে ফেইসবুক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। নায়িকা নুসরাতের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ ধরে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রাখেন, “কোন সন্দেহ সংশয় থাকলে বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তদন্ত করতে পারতো। কিন্তু রাঘববোয়াল ছেড়ে ছিঁচকে চোর ধরে হৈচৈ তৈরি করার মহত্ত্ব কী?”

এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার দুপুরে বলেছেন, নুসরাত ফারিয়ার মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি নিরপরাধ কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর সেই কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ মাসে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীসহ ২৮৩ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা গত ২৯ এপ্রিল তা এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় গুলি চালানো হলে তা এনামুলের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

প্রসঙ্গত, নুসরাত ফারিয়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এ ছাড়া মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় তিনি। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নুসরাত ফারিয়া। ওই সিনেমায় শেখ হাসিনার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, যিনি ব্যক্তিগত জীবনে সংস্কৃতি উপদেষ্টার স্ত্রী।