শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «   হ্যাকনি সাউথ ও শর্ডিচ আসনে এমপি প্রার্থী শাহেদ হোসাইন  » «   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র সাথে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের মতবিনিময়  » «   মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীবাদের প্রতিবন্ধকতা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

প্রায় দুবছর আগে বিবিসি আফ্রিকার মেয়েদের নিয়ে পুরুষদের পশুত্বের একটা চিত্র তুলে ধরেছিল তাদের এক রিপোর্টে। সেখানে কঙ্গোর পুরুষদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একজন স্বামী বাগউইজা তার স্ত্রীর ওপর কীভাবে নির্যাতন করত, তার বর্ণনা এসেছে। সে রিপোর্টে এমনকি বাগউইজা নিজেই স্বীকার করেছে, সে কীভাবে তার স্ত্রীকে তার নিজের সম্পদ হিসেবে দেখত। তাদের দুজনের ছবিও প্রকাশ করেছে বিবিসি। সে রিপোর্টে বাগউইজা নিজেই উল্লেখ করেছে, তার পাশবিকতার কথা, বিশেষত যৌনতায়ই তার প্রকাশ হতো এবং তা সে করত মূলত তার পৌরুষ দেখানোর জন্যই। অর্থ উপার্জনকারী মেয়েদের ব্যাপারে আফ্রিকান পুরুষদের মনে যে লুকানো বিরাগ রয়েছে- অনেকের মতে সেটাই হলো আধুনিক আফ্রিকান পুরুষদের সংকটের মূল। বহুকাল ধরে এ মহাদেশে পুরুষরা বেড়ে উঠেছে এই ধারণা নিয়ে যে- পুরুষ মানেই হলো শক্তি, যার ক্ষমতা আছে তার নিজের পরিবারকে খাদ্য ও সুরক্ষা দেয়ার। অথচ সময় বদলাচ্ছে। আফ্রিকার পুরুষগুলো বেকারত্বের দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় মেয়েরা আরো স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। কাজ জুটিয়ে নিচ্ছে। পরিবার অনেকটা তাদের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। আর এখানে পুরুষরা আরো ক্রুদ্ধ হচ্ছে, কারণ পৌরুষত্বে লাগছে এই ভেবে যদি সময়টা পাল্টে যায়।

আমরা বিশ্বাস করতে চাই বাংলাদেশ এ অবস্থানে নেই। নারীর ক্ষমতায়ন চলছে দ্রুতগতিতে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যেমন নারী তেমনি রাষ্ট্রের প্রশাসনের উচ্চাসনে বসে আছেন নারীরা। জাতি হিসেবে এটা আমাদের একটা বিশাল অর্জন। এই অর্জনের মাঝেই কিন্তু আমরা কান্না শুনি নারীর। দীর্ঘ নিঃশ্বাস কানে বাজে এখনো নারীর, চারদিক থেকেই। অথচ তা আসছে না খবর হয়ে, ব্যাপকভাবে। একজন শিক্ষকের কাছে যখন তার ছাত্রীরা শ্লীলতাহানির শিকার হয়, তখন ক’জনের চিৎকার শুনি আমরা। সাহসে ভর করে কোনো মেয়ে হয়তো নির্ভার হয়, কিন্তু অনেকেরই চাপাকান্নার কথাগুলো শোনতে হয় পরে কোনো এক সময়ে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা যখন এরকম ভয়ংকর কাণ্ডগুলো ঘটান, তখনো জাতি হিসেবে মানুষ হিসেবে যে কেউ প্রতিবাদ করে, বিচার চায়। বিচার হয় হয়তোবা। যার প্রমাণ নুসরাত হত্যা। পরবর্তীতে রাজনীতির কেউকেটারা তার পক্ষে থাকলেও জনতার জোয়ারের কাছে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল কিংবা অন্যদের বিচারের আওতায় নেয়া হয়। একটা মাদ্রাসার কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটনাগুলো জাতিকে যতটা আক্রান্ত করে, আমাদের বিশেষত ওই সমাজবিজ্ঞানীদের মনোজগতে এতটুকু কি ধাক্কা মারে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনাগুলো। যখনই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম নির্যাতনের চিত্র বেরিয়ে আসে সামনে, তখন সামনে আসে ধর্মের বাতাবরণ। আসল সত্য তখন হারিয়ে যেতে থাকে, ধর্ম সামনে আসে। সমাজ বিজ্ঞানীরা নিয়ে আসেন ধর্মীয় অনুশাসনে সূ² বিচার বিশ্লেষণ। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বিচারে অনৈতিকভাবে ভয় দেখিয়ে যে যৌনাচার চলছে, তাকে কীভাবে দেখছেন আমাদের রাজনীতির মানুষগুলো কিংবা সুশীল সমাজ? কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানীরা মাদ্রাসার ওই ধর্ষক-নির্যাতকদের তুলনা করতে চান না অন্যান্য ধর্ষক কিংবা নির্যাতনকারীর সঙ্গে। কারণ সমাজে যখন আইন লোপ পায়, কিংবা আইন যখন পুরোপুরি বিচারকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তখন বিচারকার্য নীরবে নিভৃতেই কাঁদে। আগেই উল্লেখ করেছি সেই নুসরত হত্যাটা ঢাকা পড়তে পড়তে বেরিয়ে এসেছে। কারণ রাজনৈতিক হোমড়া-চোমড়া, যারা মাদ্রাসা থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পেত, তারাই এই জঘণ্য হত্যাকাণ্ড এবং মাদ্রাসার শিক্ষক কিংবা অন্যদের লাম্পট্য ঢাকতে চেয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইডেন কলেজের দুজন শিক্ষার্থীর ছোট্ট লেখাগুলো গত কয়েক দিন ঘুরেছে। যে যার মতোই এগুলো শেয়ার করছেন। জানি না এই লেখাগুলোর লেখক কিংবা লেখিকার সত্যতা কতটুকু, কিন্তু ইডেন কলেজের নেত্রীদের (ছাত্রী-নেত্রী) যে নিয়ন্ত্রিত নিউজগুলো গুটিকয়েক পত্রিকায় এসেছে তা থেকে কিছুটা হলেও ধারণা করা যায় কী চলছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। সেই লেখাগুলোতে আছে শিক্ষার্থীদের হাহাকার মিশ্রিত নিশ্বাস। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসী। পত্রিকায় লিখেছেন, ইডেন কলেজের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উপার্জনের চিত্র। তাদের মাসিক আয় না-কি ৫ লাখ টাকার মতো। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসী। একজন ছাত্রী-নেত্রীকে এরকম আয় করতে হলে কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়, কেন-ই কলেজ কর্তৃপক্ষ এদের কথায় উঠবস করে, তা বুঝতে হলে কাউকে সমাজ বিশেষজ্ঞ না হলেও চলবে। কারণ ‘ভাইয়া’দের হাতগুলো নেত্রীদের মাথার ওপর থাকে আর নেত্রীদের অধস্তন কর্মীরা তখন আর বোন থাকেন না, তাদের হতেই হয় ক্ষমতার হাতের লাটিম। সহজ কথায় এই কলেজের অনেক শিক্ষার্থীদের অনৈতিকতার বিভিন্ন কথা চাউর হচ্ছে ক্রমশ। এগুলো থেকেই বেরিয়ে আসছে সমাজ-সভ্যতার পীঠস্থান হিসেবে খ্যাত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামধারী নেতাদের বর্বরতার চিত্রগুলো। এখানে কি এই পুরুষগুলোকেই আমরা শুধু বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করব? এ দায় কি নেবে না আমাদের ছাত্রীরাও। ক্ষমতা কিংবা অর্থ-প্রতিপত্তির জন্য তারা নিজেরা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের কথাগুলো উচ্চারণ করে ঠিকই তাদের বক্তৃতায় মিছিলে। কারণ এটাই তো তাদের পুঁজি। কিন্তু শুধু প্রভাব-প্রতিপত্তি কিংবা অর্থ লোপাটের জন্য তারা যেভাবে নিজেদের পণ্য করে, তাও কি আমাদের ভাবায় না। এই জায়গাটাতে নারীরা পণ্য হয়ে উঠেছে নিজেরাই এবং তারাই আবার জোরপূর্বক পণ্য বানাচ্ছে তাদেরই সতীর্থ অনেককেই শুধু বৈষয়িক সুবিধা আদায়ের জন্য।

যারা রাজনীতির মানুষ, যারা প্রগতির মানুষ, যারা শুদ্ধ চেতনার মানুষ, এখানে তাদেরই দায় থাকা প্রয়োজন। এই জায়গাটাকে তাদেরই চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সমাজকে কলুষিত করছে কারা, কাদের প্ররোচনায়-প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠছে কিংবা জেগে উঠছে পশুরা, একটু সাহস করে তাদের চিহ্নিত করুন ওই ধর্মীয় লেবাসধারীদের মতো। ধর্মীয় লেবাসধারী ধর্ষকদের যেমন আমরা সামনে নিয়ে আসি, ঠিক তেমনি এদেরও নিয়ে আসতে হবে একইভাবে। গণমাধ্যমে এসেছে, রাত্রি, অপু বিশ্বাস কিংবা বুবলীদের সঙ্গে সাকিব খানের মেলামেশায় জন্ম নিয়েছে না-কি নিরপরাধ মানব সন্তান- সময় কিংবা প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে শাকিব অকাতরে যখন ভুলে গেছেন তার সন্তানদের, তখনই তার পাশবিকতা আমাদের সামনে এসেছে এবং অপু-রাত্রি-বুবলীরা তখন জেগে ওঠেন। অথচ সাকিবের সব কীর্তিকলাপ জেনেও যখন তারা দিন-মাস বছর পার করেন তার সঙ্গে অনৈতিকভাবে, তখন এ দায় শুধুই কি তার? তাদেরও নিতে হয়।

সারা পৃথিবীতেই নারীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের উপস্থাপন করছে। এ উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটা সেক্টরেই বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোতে নারীদের একটা শক্ত ভিত তৈরি করেছে তারা। এ ভিত্তির মূলে শুধুই মেয়েদের সাহসিকতা নয়, আছে সমাজ আর রাষ্ট্রের নারী-পুরুষদের প্রতি সমতার দৃষ্টি। সেজন্যই এখানে তারা পণ্য হয়ে নয়, বরং সমাজ-সভ্যতার এক অপরিহার্য অংশ হয়েই এই জায়গায় এসেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ দেশগুলোতে নারীর উপস্থাপনে এক ধরনের শৈল্পিক আবেদন আছে। এ শিল্পটা আমাদের মতো দেশগুলোতে প্রভাব ফেলেছে। সেখানে নারীরা নিজেদের উপস্থাপন করছে পশ্চিমা কায়দায়ই। এটা নারীদের জন্য নেতিবাচক নয়। কিন্তু যখন বলা হয় এরা পণ্য হয়ে যাচ্ছে, তখনই প্রশ্ন করতে হয়, কাদের মাধ্যমে এরা পণ্য হয়ে উঠছে। বর্বর ছাত্র কিংবা রাজনৈতিক নেতারা যেমন ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এদের পণ্য বানাচ্ছে, ঠিক তেমনি সন্তানের দাবি নিয়ে এসেও পাত্তা পাচ্ছে না স্ত্রী-সন্তান। বরং শাকিবরা হিরো হয়ে ওঠেন কিং উপাধি নিয়ে। নির্বিকার যেন সমাজের কথাবাজ মানুষগুলো, রাষ্ট্রের এই জ্বলন্ত ইস্যুগুলো নিয়ে ক’জন কথা বলছেন।

আফ্রিকার দেশগুলোর সেই পেছনে থাকা সমাজ বাস্তবতা আমাদের নেই। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটা ভিন্ন অবস্থানে নিজেদের নিয়ে এসেছে। প্রচারণার ঢাকঢোল অন্তত তাই বলছে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাটায় নারীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে নারীদের একটা প্রভাবশালী অংশ যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, তা কি আমরা ভেবে দেখছি? অপু বিশ্বাস কিংবা বুবলীদের মতো স্মার্ট তরুণীদের মতোই নেত্রী তামান্না জেসমিন রিভা কিংবা রাজিয়া সুলতানারাই পুরুষ পশুদের পাশবিকতায় আশকারা দিয়ে নারীবাদের বিরুদ্ধে তারা নিজেদের অবস্থান কি জানান দিচ্ছেন না?

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক