ব্রিটেনে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রির বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটার্রাস এসোসিয়েশন ( বিসিএ) বর্ণাঢ্য আয়োজনে ১৬তম বিসিএ এওয়ার্ডস প্রদান করেছে।
৩০ অক্টোবর , রবিবার লন্ডনের বিখ্যাত পার্ক প্লাজায় ব্রিটেনের মূলধারার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কারী ইন্ড্রাস্ট্রির বিভিন্ন শাখার বিশিষ্টজন এবং সেলিব্রেটি পারসোনালিটিদের উপস্থিতিতে প্রদান করা হয়। এবছর রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে থেকে নির্বাচিত সেরা দশ ‘বেষ্ট কারী হাউস ’, সেরা দশ ‘শেফ অফ দ্যা ইয়ার’ ,৩টি ‘কমিউনিটি ওনার’ এবং ১টি করে ‘নিউ কামার’ ও ‘ইউরোপিয়ান রেস্টুরেন্ট’ বিসিএ এওয়ার্ডস প্রদান করা হয়।
কারী ইন্ড্রাস্ট্রি নিয়ে বিসিএ’র ধারাবাহিক কাজের প্রেরণা ও সাফল্যগুলোকে ক্যাটারার্স ও কারী লাভার্সদের হৃদয়ের আরও কাছে নেয়ার লক্ষ্যে এবারের এওয়ার্ড এর শ্লোগাণ হচ্ছে- সেলিব্রেটিং সাকসেস এন্ড ইন্সপায়ারিং আদারর্স।
বিশ্বব্যাপী কারী লাভার্সদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় বিশিষ্ট উপস্থাপক গ্রেক ওয়্যালিস এমবিই ও তাসমিন লুসিয়া খানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় জমকালো আয়োজনে ছিল নানা বৈচিত্র ও সৃজনশীলতার ছাপ।
সহস্রাধিক আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে সন্ধ্যা ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে ছিল ব্রিটেনের সেলিব্রেটিদের অংশগ্রহনে মুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাথে অতিথিরা আথিয়েতায় উপভোগ করেছেন ব্রিটিশ- বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রির নানা স্বাদ ও পদের মৌলিক খাবার।
বিসিএ এওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারী অফ স্টেইট ফর ডিজিটাল,কালচার,মিডিয়া এন্ড স্পোর্টস মিশেল ডোনেলান এমপি ।
তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রির চিহ্নিত সমস্যাগুলো আমি সরকারের সংশ্লিষ্টদের সামনে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবো।
যুক্তরাজ্যে চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সময়ে নতুন কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া সম্ভব না হলেও সরকার কারী ইন্ড্রাস্ট্রির সমস্যা ও দাবির বিষয়ে অবগত আছে।ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অব্যাহত অবদান রাখায় কারী ইন্ড্রাস্ট্রির সংকট মোবাবেলার জন্য সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।
নিজেকে একজন বাংলাদেশী কারী লাভার্স হিসাবে তুলে ধরে মিশেল ডোনেলান এমপি বলেন,আমি বিশ্বাস করি এখানে আমার মতো উপস্থিত সকলেও নানা পদের কারী পছন্দ করেন এবং যা এদেশের খাবার সংস্কৃতি বিকাশেও অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, যুক্তরাজ্যের শেডো সেক্রেটারী অফ স্টেইট ফর জাস্টিজ স্টিভ রীড ওবিই এমপি, স্যার স্টিপেন টিমস এমপি, স্যার গ্যারী স্ট্রিটার, পল স্কলি এমপি, রোশনারা আলী এমপি,রোড ক্যাডবারী এমপি, নীয়া গ্রেফথ এমপি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেডো সেক্রেটারী অফ স্টেইট ফর জাস্টিজ স্টিভ রীড ওবিই কারী ইন্ড্রাস্ট্রির অব্যাহত স্টাফ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে স্টাফ আনার দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশী কারী ব্রিটেনের প্রবৃত্তি ও খাবার সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
স্টিভ রীড ওবিই ইন্ড্রাস্টির সংকট সময়ে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে বলেন, লেবার পার্টির সদস্য হিসাবে আমি কারী শিল্পের সমস্যা সমাধানে কাজ করবো।ইন্ড্রাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা দরকার।
বিসিএ এওয়ার্ডকে বর্ণাঢ্য ও উপভোগ্য অনুষ্ঠান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধারাবাহিক এওয়ার্ড ইন্ড্রাস্ট্রির টেলেন্টদের বের করে আনছে এবং অসংখ্য স্টাফ এথেকে অনুপ্রাণীত হচ্ছেন।যা খুবই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান ঝুনু। সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন- বিসিএর প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ওবিই, সেক্রেটারী জেনারেল মিটু চৌধুরী ও চিফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ব্রিটেনের জীবন যাত্রার উর্ধগতি সহ চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সময়ে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে ব্যবসায়ীরা মারাত্নক সংকট সময় পার করছেন। ১৬তম বিসিএ এওয়ার্ডস চলমান বিপর্যয়ে গোটা ইন্ড্রাস্ট্রিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কারী লাভার্সদের প্রিয় ও ঐতিহ্যবাহি ডিশ টিক্কামাসালা খ্যাত ব্রিটেনের রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে দিন দিন হারিয়ে যাবার আশংকায় আছে। এই সংকট সময়ে হসপিটালিটি সেক্টরের স্টাফ সংকট মোকাবেলার জন্য ইমিগ্রেশন নীতি আরও সহজ করা খুব জরুরী।
বক্তারা সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষিত ভ্যাট হ্রাস ও ফ্রিজকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,যুক্তরাজ্যে প্রায় ১২হাজার রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন বিসিএ আজকের অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য সরকার, সংসদ সদস্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে অব্যাহতভাবে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছে।
বিসিএ প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ওবিই বলেন, বিসিএ এওয়ার্ডস যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রিতে অত্যন্ত মর্যাদাকর এওয়ার্ড। যা সত্যিকার অর্থেই কারী শিল্পের বিবদমান সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এই শিল্পের সম্ভাবনা ও আলোকিত দিকগুলো মূল ধারায় তুলে ধরছে।
বিসিএ সেক্রেটারী জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, বিসিএ এওয়ার্ডস বাংলাদেশী কারী শিল্পকে শুধু আলোকিত করছে না এটি ব্রিটেনের গোটা কারী ইন্ড্রাস্টির উন্নয়নে কাজ করছে।
তিনি বলেন, বিসিএ এওয়ার্ডস কারী শিল্পের ব্রান্ডিং এবং সামগ্রিকভাবে ব্যবসার প্রসারে রাখছে বিরাট ভূমিকা। বিসিএ এজন্য গর্বিত।
বিসিএ’র প্রধান কোষাধ্যক্ষ, সাইদুর রহমান বিপুল বলেন, বিসিএ এওয়ার্ডস ব্রিটেনে বাংলাদেশী কারী শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে। রেস্টুরেন্ট এবং টেকওয়ে ব্যবসায়ী ও স্টাফদের কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুপ্রাণীত করা হয়। অর্থনীতির ব্যাকবউন খ্যাত বাংলাদেশী কারী শিল্পকে আরও মৌলিকভাবে মূলধারায় তুলে ধরতে বিসিএ ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে।
এওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান ঝুনু বলেন, আমাদের এওয়ার্ডস নাইট হলো- ব্রিটেনে কারী শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। যেখানে মূলত কারী শিল্পের ঐতিহ্যিক নানা বিষয় অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বিসিএ বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রির নানা শাখার প্রতিভাবানদের কর্মসৃজন মেইনস্ট্রিমে তুলে ধরছে।
১৬তম বিসিএ এওয়ার্ড অনুষ্ঠানের স্পন্সর হচ্ছে-কোবরা বিয়ার,কিংফিশার বিয়ার, উবার ইটস , স্কয়ার মাইল ইন্সুরেন্স, মাই ডিডি পয়েন্টস, গান্ধি ওরিয়েন্টাল ফুডস লিমিটেড, কিংস বাজার, পেটাপ, রাধুনী,উইডো একাউন্টিং, মোক, ডাবলিউয়্যুপিসি, লন্ডন টি একচেইঞ্জ, অক্সওর, সুপার পলো, এমআর প্রিন্টার, এরোমা আইসক্রীম। অনুষ্ঠানে স্পন্সরদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়।