শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই  » «   লন্ডন মুসলিম সেন্টারে দুই শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফেইথ ইন এনভারনমেন্ট’ সামিট  » «   রোবটিক্স বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদের নেতৃত্বে কুইন মেরি ইউনভার্সিটি অব লন্ডনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাল্টিরোটর সোলার ড্রোন উদ্ভাবন  » «   লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির অফস্টেড রিপোর্টে ‘গুড’ গ্রেড অর্জন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস : ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা  » «   ব্যারিস্টার নাজির আহমদের “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন”নামে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও  সাংস্কৃতিক পরিষদের ২০২৫-২৬ পরিচালনা পর্ষদ গঠন  » «   গ্রেটার ফতেহপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সভা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত  » «   আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মিল আর গুজব রাজনীতি  » «   পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ডা. শফিকুর রহমান  » «   প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন  » «   শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘মিথ্যা’ বলা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

খবরের পেছনের খবরে সাধারণ মানুষের খুব একটা আগ্রহ নেই। বিশেষত পশ্চিমের ভোগবাদী দেশগুলো গণমাধ্যমকে কেন জানি বড় বেশি বিশ্বাস করতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গ কিংবা কেনই বা ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ কিংবা রাশিয়ার আগ্রাসন, তা খুব একটা আলোচনায়ই আসছে না। যেভাবেই হোক, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ সময়ে যুক্তরাজ্যেও আছেন হিরো হয়ে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কাছেও এভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাকে।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করলে তিনি খুব একটা গায়ে মাখতে চান না। এমনকি তাকে নিয়ে যখন বিরোধী দলের সাংসদরা হাসিঠাট্টা করে, তখনো তিনি নির্বিকারভাবে পার্লামেন্টে উত্তর দিতে থাকেন। কারণ তিনি মিথ্যা বলেন প্রায়ই। মিথ্যায় ধরা পড়লে বলেন, তিনি এটা বুঝেননি।

সম্প্রতি যেটা ঘটে গেল তাকে নিয়ে, তা হাস্যকর। একটা অতি আলোচিত ব্যাপার এটা। এর আগেও তাকে বলা হয়েছিল, কোভিড মহামারির সময় তিনি ব্রিটেনের বেঁধে দেয়া নিয়ম ভেঙেছেন। তিনি তা অস্বীকার করেন। ২০২০ সালের জুন মাসে কোভিড নিয়ম অমান্য করে বরিস তার স্ত্রীকে নিয়ে একটি জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত হন। সে সময় রুশি সোনাকও এই পার্টিতে ছিলেন। পরবর্তীতে গণমাধ্যমে এ নিয়ে যখন জোরালো আলোচনা উঠে এবং বরিস তা অস্বীকার করতে থাকেন এবং নিয়ম ভঙ্গ হয়নি বলে দাবি করেন। তখন স্বাধীন তদন্ত চলে এবং তদন্তে তিনি যে আইন ভঙ্গ করেছেন, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি, তার স্ত্রী এবং কোভিডের সময় বহু উচ্চারিত দেশটির ট্রেজারার রুশি সোনাকও এ দোষে দুষ্ট হন। অর্থাৎ তিনিও কোভিড নিয়ন্ত্রণে বেঁধে দেয়া আইন ভঙ্গ করে পার্টিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিবিসি জানাচ্ছে করোনা ভাইরাসের কঠোর নিয়ম-নীতির সময়ে আইন ভেঙে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে এবং হোয়াইট হলে অনুষ্ঠিত এ রকম ১২টি জনসমাগমের তদন্ত করছে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ। মজার ব্যাপার হলো, তাদেরসহ সরকারের পঞ্চাশ জনেরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে পুলিশ এ নিয়ে জরিমানা করেছে। এবং অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে তারাও তাদের দোষ স্বীকার করেছেন।

এ নিয়ম ভঙ্গের কারণে বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবি উঠে বিরোধী দলগুলো থেকে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। এমনকি তার দলের তিনজন সদস্য ছাড়া সবাই তাকে এ ইস্যুতে সমর্থনও দেন। অথচ এ রকম অভিযোগেই তার এক উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংকে সরে যেতে হয়েছিল। এবং সে সময় তিনিও তাকে সরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এ নিয়ে কামিংও বিভিন্নভাবে বরিস জনসনকে জনতার কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। সরকারের নির্ধারিত আইন লঙ্ঘন করলে একধরনের অঘোষিত নিয়মই হলো, কোনো এমপি তাদের সংসদীয় আইন-প্রথা জেনেও যদি ভুল পথ (মিসলিড) ধরেন, তাহলে তার পদত্যাগ করা একধরনের প্রত্যাশিত ব্যাপার। আর সেজন্যই বিরোধী দলের নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় বরিস জনসনকে ‘আইন লঙ্ঘনকারী এবং মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ রাজনীতিতে এর একটা ছায়া পড়ার কথা। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে প্রমাণিত একটা সত্যকে কেন্দ্র করে এবং মিথ্যা বলেই শেষ পর্যন্ত দোষও স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী, সেহেতু রাজনীতির নিয়ম না হলেও ঐতিহ্য অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করাই উচিত। এ ইস্যু ছাড়াও বরিস জনসনের অর্থমন্ত্রী রুশি সোনাকের স্ত্রী কিংবা তার পরিবারের যুক্তরাজ্যে কর প্রদান নিয়ে অর্থনৈতিক যে অসঙ্গতি, তা নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম কিংবা পার্লামেন্ট উত্তেজিত এবং এতেও একধরনের পরাজয়ই হয়েছে রুশি সোনাকের। কারণ শেষ পর্যন্ত জনসমক্ষে উচ্চারিত কর প্রদান করতে সম্মত হয়েছেন রুশি সোনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। শুধু তাই না, ট্যাক্সবিহীন কোনো দেশে তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোঁজ নেয়ারও দাবি উঠেছে। এ নিয়ে আবারো রুশি সোনাকের পদত্যাগের ব্যাপারটি উঠে এলে বরিস তার অর্থমন্ত্রীর পক্ষই নিয়েছেন। অর্থাৎ বরিসের সরকার শত সমালোচনায়ও একটুও নড়বে না।

বরিস নিয়ে সংসদ সরগরম থাকলেও এর চেয়ে অধিক তাপ নিয়ে গণমাধ্যম উত্তপ্ত করে রেখেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ নয়, রাশিয়া ইউক্রেনকে দখল করছে এ রকম ভাবটাই প্রতিফলিত হচ্ছে গণমাধ্যমে। খবরের পেছনের খবরে সাধারণ মানুষের খুব একটা আগ্রহ নেই। বিশেষত পশ্চিমের ভোগবাদী দেশগুলো গণমাধ্যমকে কেন জানি বড় বেশি বিশ্বাস করতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গ কিংবা কেনই বা ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ কিংবা রাশিয়ার আগ্রাসন, তা খুব একটা আলোচনায়ই আসছে না। যেভাবেই হোক, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ সময়ে যুক্তরাজ্যেও আছেন হিরো হয়ে। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কাছেও এভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাকে।

আমেরিকার পরই ব্রিটেন এগিয়ে আছে ইউক্রেন নিয়ে। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা প্রত্যক্ষ করছি গণমাধ্যমের মধ্য দিয়েই। ইউক্রেনের নারী আর শিশুদের শরণার্থী হওয়ার মিছিল দেখছে বিশ্ব। ৮-৯ মিলিয়ন মানুষের দেশান্তরি হওয়া, শিশুদের কান্নার দৃশ্য যে কোনো সংবেদনশীল মানুষের হৃদয়ে খোঁচা দিয়ে যায়। আর সে কারণে মানুষ যুদ্ধের কারণ দেখে না, দেখে না বিশ্ব মোড়লদের শুধুমাত্র মোড়লিপনা রক্ষার প্রতিযোগিতায় কীভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কীভাবেই উঠে আসছে গণকবরের লোম জাগানিয়া অধ্যায়গুলো। বিশ্ব নিরাপত্তার চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। সেজন্যই আমেরিকা কিংবা ইউরোপের বন্ধুত্বকে আরো দৃঢ় করতে বরিস ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেন গেছেন, দেখে এসেছেন বিধ্বস্ত দেশটি এবং স্বাভাবিকভাবেই হাত বাড়িয়ে এসেছেন অর্থ কিংবা অস্ত্র সরবরাহের। সাংসদরাও ইউক্রেনের দোহাই দিয়ে তাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। এসব করতে গিয়ে ব্রিটিশ জনগণের খুব একটা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না তিনি। আর এই সংবেদনশীলতাকেই কাজে লাগিয়ে বরিস জনসন বেঁচে যাচ্ছেন বর্তমান দেশটির চরম সংকটের সময়ও।

অথচ দেশটা অতিক্রম করছে এক সংকটময় সময়। জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এমনিতেই নাগরিকদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছিল। এবার নতুন করে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিটি বাসায় বছরে দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে শুধু নিজেদের শীত থেকে বাঁচাতে কিংবা রান্নাবান্না করতে। ভালো চাকরি আছে এমন মানুষও হিসাব করে চলতে হচ্ছে।

ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ওএনএস) বলছে, একটি পরিবারের নিত্যদিনের খাবার ব্রেডের দাম (রুটি) ২.৩ শতাংশ বেড়েছে এবং এক বছরের ব্যবধানে তা ৫.৫ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল। বেড়েছে জামাকাপড় ও জুতার দাম ৯.৮ শতাংশ। খাদ্যের জন্য তেল ও চর্বিজাতীয় খাবারে ব্যয় হচ্ছে ৭.২ শতাংশ এবং তা গত এক বছরের আগের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। দুধের খরচ ১.৭ এবং এক বছর আগের তুলনায় ১৩.২ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল। ক’দিন আগে সুপার মার্কেট থেকে হঠাৎ করে টমেটো উধাও হয়ে গিয়েছিল। দুর্ভিক্ষ নয়, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সরকার। প্রয়োজনীয় ভর্তুকি আসছে না সরকারের পক্ষ থেকে। অথচ যুদ্ধের জন্য কয়েকশ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ সহযোগিতা দিয়ে আরো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।

টোরি দলের সমর্থন নিঃসন্দেহে আগের অবস্থানে নেই। করোনাকালের ক্রান্তিসময় অতিক্রম করতে পেরেছে সরকার শুধু মানুষের করুণা নিয়ে। কিন্তু বর্তমান সংকট সহসা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ যুদ্ধে সমর্থন দেয়া যতটুকু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে মানুষ, তার চেয়ে বেশি হতাশায় নিমজ্জিত হবে নাগরিক যদি জনগণের মৌলিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব না দেয় সরকার। টোরি সমর্থিত সরকার মানুষের নিত্যদিনের ন্যূনতম চাহিদার প্রতি কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে, তা উপরের ওই পরিসংখ্যান থেকেই ধরে নিতে পারি আমরা। এ কারণে বয়স্ক মানুষ (অবসরে যাওয়া পেনশনার) কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস যে উঠছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সত্যি কথা বলতে কি লেবার দলও নেতৃত্ব দিয়ে খুব একটা চমক লাগাতে পারছে না। বরং লিডার, ডেপুটি লিডারের মাঝে দ্বন্ধটা আন্তঃদলীয় রাজনীতিতে কিছুটা হলেও বিরূপ অবস্থার মাঝ দিয়েই যায় মাঝে মাঝে। লেবার লিডার হিসেবে জেরেমি করবিনের চলে যাওয়ার পর ম্যানচেস্টারের মেয়র এন্ডু বারনামই একমাত্র চমক লাগানো দলের নেতা হিসেবে ঝিলিক দিলেও লিডার হিসেবে লাইমলাইটে আসতে পারেননি তিনি। টোরির জনপ্রিয়তার এই ধসে একমাত্র একজন করবিন না হলেও এন্ডু বারনামই হয়তো পথ দেখাতে পারেন আবারো ব্রিটেনকে। গত নির্বাচনে লেবার দলের জয় হলে অর্থাৎ করবিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে ইউক্রেন-রাশিয়ার এ ট্র্যাজেডি হয়তো এ রকম দেখতে হতো না গোটা বিশ্বকে এবং ব্রিটেনও এই সংকটের মুখোমুখি হতো না।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক, প্রধান সম্পাদক; ৫২বাংলাটিভি ডটকম

আরও পড়ুন-

ন্যাটো’র ‘তোলা দুধ’ দিয়ে কি নেভানো যাবে মিসাইলের আগুন?


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক