আজ ঐতিহাসিক ১৭ই এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এইদিনে দেশী-বিদেশী প্রায় পঞ্চাশজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাামে যুদ্ধরত বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রাামকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতায় রূপদানের জন্য মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম বাগানে শপথ নিয়েছিল একটি অস্থায়ী তথা যুদ্ধকালীন সরকার। শপথ অনুষ্ঠানের প্রাাক্কালে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ মেহেরপুরের ওই জায়গাটির নামকরণ করেছিলেন মুজিবনগর।
পরেরদিন দেশ-বিদেশের মিডিয়াতে যুদ্ধকালীন সরকারকে মুজিবনগর সরকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। অবশ্য এই সরকারের রাজধানীও ছিল কাগজে কলমে মুজিবনগরেই যদিও কার্যক্রম পরিচালিত হতো কলকাতা থেকে। এই সরকারকে অনেকে বলে অস্থায়ী সরকার, কেউ বলে যুদ্ধকালীন সরকার, কেউ কেউ বলে প্রবাসী সরকার, আবার মুজিবনগর সরকার তো বলেই।
যে নামেই বলি না কেন এই সরকারটি গঠিত হয়েছিল ১০ই এপ্রিল/১৯৭১, কলকাতায়। ওই সময়ে গণপরিষদ ও প্রাাদেশিক পরিষদের যে ক‘জন সদস্য কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন তাদের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয়েছিল যুদ্ধকালীন সরকার তথা মুজিবনগর সরকার।
তাজউদ্দিন আহমদের নির্দেশে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের তত্ত¡াবধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়ন করা হয় যার আইনগত দিকগুলো ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ঠিক করে ঘোষণাপত্রটি চুড়ান্ত করে ছিলেন।
ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ই এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠনের দিন প্রচার করা হয় এবং ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেন। এই ঘোষণাপত্রটিই মূলত যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সংবিধান হিসেবে বিবেচিত হতো, যা পরবর্তীতে মূল সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
মুজিবনগর সরকারের কাঠামো নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে। এটা কী সংসদীয় কাঠামোর সরকার ছিল নাকি রাষ্ট্রপতি শাসিত কাঠামোর সরকার ছিল? যেখানে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয়েছিল, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে যে পরিমাণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় তা কল্পনাও করা যায় না।
ইতিহাস নিয়ে যারা বিতর্ক করেন এমন অনেককে বলতে শুনেছি মুজিবনগর সরকার যদি ‘৭০ এর নির্বাচনের প্রতিফলিত সরকার হয় তাহলে তো সরকারটির কাঠামো হওয়ার কথা ছিল সংসদীয় প্রকৃতির কারণ ’৭০ এর নির্বাচন ছিল সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রপতি নয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না মুজিবনগর সরকারকে স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচিত সরকার গঠিত হয় তার সাথে তুলনা করার কোন অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। বরং এটি ছিল উদ্বুত পরিস্থিতিতে একটি দেশের স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীকে পরিচালনার জন্য গঠিত একটি যুদ্ধকালীন সরকার।
এ ধরণের যুদ্ধকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূত্রিতার কোন সুযোগ নেই। যে বিষয়টি আমরা দেখি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায়। অপর দিকে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে আমরা যেমনটা দেখি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় লাগে। কাজেই যুদ্ধকালীন সরকার ব্যবস্থা তাও সাধারণ কোন যুদ্ধ নয় বরং যুদ্ধটিই ছিল মুক্তির যুদ্ধ, একটি প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে আরেকটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ।
এমন পরিস্থিতিতে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা খুব একটা কার্যকরী হওয়ার সুযোগ নেই যদিও মুজিবনগর সরকারটি গঠিত হয়েছিল ’৭০ এর নির্বাচনে জাতীয় (এমএনএ) ও প্রাদেশিক পরিষদের (এমপিএ) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। যেই কারণে বহির্বিশ্বে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন ছিল না।
মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, অবিসংবাদিত নেতা শেখ মজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এবং এটাও বলা আছে, আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সম্পর্কে বলা আছে, রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমুহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়ণের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। যেখানে বলা হয়, ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল তা রক্ষার্থে এই আদেশ বলবৎ করা হয় এবং এই আদেশে এটাও স্পষ্ট করে বলা হয় যে এই আদেশ ২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যদি বিশ্বাস করতে হয় তাহলে প্রথমেই মুজিবনগর সরকারকে মানতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে। আর মুজিবনগর সরকারকে বিশ্বাস করলে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বীকার করতে হবে। এখানে ইতিহাসের ফাঁক খোঁজার কোন সুযোগ নেই।
অনেক দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত রাজনীতিবিদকেই ইদানিংকালে ইতিহাসের নতুন ব্যাখা দিতে শোনা যাচ্ছে। আমি সে দিকে যেতে চাইনা। শুধু বঙ্গবন্ধু কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হলেন সেটা একটু তুলে ধরার চেষ্টা করবো। এটা অবশ্য আমাদের জেনে রাখা উচিত বঙ্গবন্ধু কোন সামরিক পাড়া থেকে কিংবা কোন ক্যু করে হঠাৎই ক্ষমতার মসনদে বসে পড়েননি। আন্দোলন সংগ্রাম করতে করতে জীবনের যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন রাজপথে-জেলের চার দেওয়ালে। হাজার বছরের পরাধীন বাঙালীকে দেখিয়েছেন মুক্তির পথ, হয়েছেন মুক্তির কান্ডারী, এনেছেন বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে যখন পাক হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, সারাদেশের মুক্তিকামী মানুষ তখন দিশেহারা। কেউ জানেনা কি ঘটতে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যে। বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা সবাই তখন চরম দুঃশ্চিন্তায়। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারের প্রাক্কালে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ইপিআর এর একটি ছোট্ট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে গেছেন যা ঐদিনই অর্থাৎ ২৬শে মার্চ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান দেশবাসীকে পাঠ করে শোনান এবং ২৭শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা দেশবাসীকে অবগত করেন সেহেতু আর পেছনে ফেরার কোন সুযোগ তৎকালীন জাতীয় নেতৃবৃন্দের ছিল না। চারদিকে তখন পাকবাহিনীর বর্বর হামলায় হাজারে হাজারে মানুষ মরছে প্রতিনিয়ত।
এমন একটি অবস্থায় দেশের ভেতরে কোন প্রকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড কিংবা সরকার পরিচালনা করার মতো পরিবেশ সেদিন ছিলনা বিধায় নেতৃবৃন্দ নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়েছিল। জাতীয় নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যসহ স্বাধীনতাকামী অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ কলকাতায় সমবেত হয়েছিল।
এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একজন বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হিসেবে তাজউদ্দিন আহমদ ৪ঠা এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দিল্লিতে তার সরকারী বাসভবনে দেখা করার সুযোগ পেলেন, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম।
তাজউদ্দিন আহমদ সেদিন ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ জানান। ইন্দিরা গান্ধী উত্তরে বলেছিলেন, সময় হলে সবই হবে। বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি যুদ্ধকালীন সরকার গঠনের পরামর্শ সেদিন তাজউদ্দিন আহমদ ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।
দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে তাজউদ্দিন আহমদ প্রাদেশিক পরিষদের যে কয়জন সদস্য সেদিন কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন তাদের নিয়ে ১০ই এপ্রিল একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। তাঁদের তখন একটাই লক্ষ্য দেশকে স্বাধীন করতে হবে। তাঁরা ভাল করেই জানতেন স্বাধীনতা কখনই কোন বিচ্ছিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কোন যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া অপরিকল্পিত যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। আর যে কারণে তারা প্রয়োজন বোধ করলেন স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে একটি যুদ্ধকালীন সরকার কাঠামোর। যে সরকার একাধারে যুদ্ধ পরিচালনা করবে অন্যদিকে বহিঃবিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন আদায় করবে।
এই রাজনৈতিক দূরদর্শীতা থেকেই মূলত এই যুদ্ধকালীন সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠন। এই সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম- মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধ। কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে পরিচালিত হয় সশস্ত্র সংগ্রাম।
ইতিহাসের দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যুদ্ধ শেষ হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পেয়েও বাঙালী অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে কখন আসবে স্বাধীনতার মহানায়ক। অবশেষে সকল অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান পাকিস্থানের কারাগার থেকে লন্ডন হয়ে দেশে আসলেন।
যুদ্ধকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি দেশে ফিরে আবেগাপ্লুত হলেন, কান্নায় বুক ভাসালেন, সেই সাথে দৃপ্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলেন, “আমি বাঙ্গালী, আমি মুসলমান একবার মরে, বারবার মরেনা”। পরের দিনই অর্থাৎ ১১ই জানুয়ারী/১৯৭২ ক্যাবিনেট মিটিং ডাকলেন এবং ঐ মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ পরিচালিত হবে সংসদীয় গণতন্ত্রের আদলে। যেহেতু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তথা যুদ্ধকালীন সরকারের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া ছিল যা সংসদীয় সরকার পদ্ধতির সাথে যায় না।
সেই কারণে বঙ্গবন্ধু সেদিন ড. কামাল হোসেনকে ডেকে পরামর্শ চাইলেন কিভাবে সরকারের কাঠামো সংসদীয় পদ্ধতির করা যায়। ড. কামাল সেদিন পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, “President Shall perform all his function on the advice of the prime minister” এই বাক্যটি গেজেটভুক্ত করে ঘোষণাপত্রে সংযোজন করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং অন্য আরেকজন যদি রাষ্ট্রপতি হন তাহলে সংসদীয় সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ওই রাষ্ট্রপতির আর তেমন কোন নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না। কারণ রাষ্ট্রপতি যা কিছুর অনুমোদন দেবেন সেটা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী দেবেন, তবেই সংসদীয় পদ্ধতির ভাষা প্রতিফলিত হবে।
ড. কামালের সেই পরামর্শ চুড়ান্ত হলে বঙ্গবন্ধু এই সংশোধনী গেজেটভুক্ত করার জন্য প্রেসে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ জানুয়ারী/১৯৭২ বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। আর তাজউদ্দিন আহমদ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
ইতিহাসের এই সত্যকে যদি কেউ অস্বীকার করে এবং ইতিহাস না জেনে শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায় তাহলে ইতিহাসে তাদের অবস্থান কোথায় হবে সেটাও ইতিহাসই ঠিক করবে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ভেঙ্গে ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে যারা জায়গা খুঁজে তারাই ইতিহাস বিকৃত করে, তারা ইতিহাসের সত্যকে মিথ্যার আদলে ঢাকতে চায়, তারা নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের ভুল ব্যাখা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চায়। কিন্তু তারা আসলে জানে না ইতিহাস তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত সত্য। ইতিহাস বিকৃতকারী ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
কাজেই দলমত নির্বিশেষে সকলেরই উচিত সকল ভেদাভেদ ভুলে ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মেনে নিয়ে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সকল বির্তক নিরসনের নিয়ামক হিসেবে বেছে নেয়া এবং একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইতিহাস নিয়ে টানাটানি না করে বরং নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশে ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
গাজী মহিবুর রহমান: কলাম লেখক