সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
করোনা পাল্টে দিয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনাভ্যাস।আমাদের চারপাশে একটা অদ্ভুত অনিশ্চয়তা ভর করে বসেছে।খাদ্য,চাকুরি, লেখাপড়া, চিকিৎসার অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশ্ব তথা বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শিখনফল।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ। শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি।কবে আবার শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করা যাবে সেটাও অনিশ্চিত।
শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিকল্প হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও বলব, মায়ের দুধের যেমন বিকল্প নেই তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের শিখনফলের বাইরে আরো অনেক কিছু শেখে।তবে অনিবার্য কোনো কারণে মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত শিশুকে যেমন বিকল্প শিশু খাদ্যের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে হয়,তেমনি চলমান এই করোনা সংকটেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে। তাই সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমকে ফলপ্রসু ও কার্যকর করার বিকল্প প্রয়াস কিভাবে হচ্ছে তা তুলে ধরা হলো।
জুম ক্লাস (Zoom Class): বর্তমানে বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল কার্যক্রম হচ্ছে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসেবা প্রদান। Zoom App এর মাধ্যমে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষকেরা বাড়িতে বসে ক্লাস নিচ্ছেন। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থীকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসের এডমিনের দায়িত্বে রয়েছেন ৬ জন আইসিটি এক্সপার্ট শিক্ষক। তাদের কাজ হচ্ছে বিষয় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে সংযুক্ত করা, ক্লাসের কার্যক্রম তদারকি করা এবং ক্লাস চলাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা। বিদ্যালয়েরে এই কার্যক্রম বর্তমান সময়ে খুবই ফলপ্রসূ প্রমাণিত হচ্ছে।
এ কার্যক্রম পহেলা জুন থেকে শুরু হয়েছে।এতে মোট ৩৮জন সাধারন শিক্ষক ও ৬ জন এডমিনসহ মোট ৪৪জন শিক্ষক সংযুক্ত আছেন।
অনলাইন স্কুল (Online School): সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে ২টি অনলাইন স্কুল চালু করা হয়েছে। একটি স্কুলের নাম সিলেট মহানগর সরকারি মাধ্যমিক অনলাইন স্কুল । যেখানে সিলেট মহানগরের চারটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে চারটি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরাসহ বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থী অনলাইনের শিক্ষাসেবা দ্বারা উপকৃত হয়।
ভার্চুয়াল পাইলট স্কুল, সিলেট (Virtual Pilot School, Sylhet) : Virtual Pilot School, Sylhet সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপ। এখানে শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সপ্তাহে তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এতে শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীএবং অভিভাবকরাই যুক্ত আছেন।
গেইম বেইসড প্লাটফর্ম কাহোত,কুইজলেট এবং কুইজ(Use of Game- Based Platform Khoot,Quizlet and Quizz) : অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে আনন্দদায়ক ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য শিক্ষকবৃন্দ বিভিন্ন ধরনের Game Based Learning Platform ব্যবহার করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে Kahoot, Quizlet,Quizards and Quizz.
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম (Multimedia Classroom): সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঁচটি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দ মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট ব্যাবহার করে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
আইসিটি লার্নিং সেন্টার (ICT Learning Center): সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে আইসিটি লার্নিং সেন্টার বা ILC স্থাপিত হয়। উক্ত আইএলসিতে একুশটি ল্যাপটপ, একটি স্মার্ট টিভি ও একটি আইপিএস রয়েছে। আইএলসিতে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে। আইএলসিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা RELM (Repository to E-learning Module) ব্যবহার করে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
স্টুডেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ( Students Management Software): বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমস্ত অফিসিয়াল ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়।
এক্সাম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার (Exam Management Software): বিদ্যালয়ের এক্সাম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়। ইইএমেস(EEMS): EEMS এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে SMS এ যোগাযোগ ও অন্যান্য ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হয়।
ওয়েবসাইট (Website): বিদ্যালয়ে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। উক্ত ওয়েবসাইটে বিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রমের তথ্য রয়েছে। বর্তমানে উক্ত ওয়েবসাইটটি আরো আপডেট করা হচ্ছে।
ফেসবুক পেজ (Facebook Page): সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে একটি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ রয়েছে। উক্ত ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি ও জরুরী নির্দেশনা এবং অন্যান্য ডিজিটাল কার্যক্রমের বিবরণ স্যোশাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়।
শিক্ষক বাতায়ন কার্যক্রম (Teachers Portal Activities): বিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষক, শিক্ষক বাতায়নের সদস্য। শিক্ষকেরা শিক্ষক বাতায়ন থেকে মানসম্পন্ন কন্টেন্ট ডাউনলোড করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দ নিজস্ব কন্টেন্ট তৈরি করে শিক্ষক বাতায়নে নিয়মিত আপলোড করেন।
মুক্তপাঠ কার্যক্রম (Muktopaath Activities): বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন শিক্ষক মুক্তপাঠের সদস্য। তারা মুক্তপাঠের ভিডিও টিউটিরিয়েল গ্রহণ করে নিজেদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন।
কিশোর বাতায়ন কার্যক্রম (Kishor Batayon): বিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থীকে আইসিটি শিক্ষকদের উদ্যোগে কিশোর বাতায়নের সদস্য করা হয়েছে। উক্ত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে।
গুগল ক্লাস্রুমের ব্যবহার (Use of Google Classroom): গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের নিয়মিত ইন্টারেকশন স্থাপিত হয়েছে। উক্ত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক এবং এসাইনমেন্ট প্রদান করে থাকেন,বিভিন্ন শিক্ষামূলক কন্টেন্ট শেয়ার করেন এবং বাড়ির কাজ ও এসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণ করেন।
গুগল ড্রাইভ ও গুগল ফর্মের ব্যবহার (Use of Google Drive and Google Form): গুগল ড্রাইভের মাধ্যমে শিক্ষকেরা পারস্পরিক বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট শেয়ার করে থাকেন এবং গুগল ফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জরুরী তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।
০১.০৭.২০২০
মো.কবির খান, প্রধান শিক্ষক;সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন