প্রবল বর্ষণে অসমের বরাক উপত্যকার তিন জেলা যথাক্রমে, করিমগঞ্জ, কাছাড় ও হাইলাকান্দিতে একই দিনে ভূমি ধসে ২১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে সমগ্র উপত্যকা জুড়ে দমকা বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টির দরুন পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মারা যান করিমগঞ্জ জেলার কালিগঞ্জের পার্শ্ববর্তী করিমপুরের একই পরিবারের পাঁচ সদস্য। হতদরিদ্র আজির উদ্দিন (৪৭), তাঁর স্ত্রী রেজিয়া বেগম(৪০), দুই ছেলে যথাক্রমে, আফতার হোসেন(১০), আনোয়ার উদ্দিন(৭) ও মেয়ে তাহেরা বেগম (৫)। তা ছাড়া, গ্রামের ইউছুফ আলির মেয়ে জয়নাব বিবি (১৪) অন্য একটি ভূমিধসের ঘটনায় মারা যায়। গ্রামবাসীরা ঘটনার পরপরই উভয়ক্ষেত্রে উদ্ধারকার্য শুরু করলেও কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, কাছাড় জেলার জয়পুরে একই দিনে একইভাবে ভূমিধসে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের ৭জন সদস্য। বরাতজোরে রক্ষা পান দুজন। কাকভোরে প্রবল বৃষ্টির দরুন নয় সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের আটজনই ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ঘরের পেছনে থাকা গাছ ভাঙ্গার বিকট শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হন তৈয়বুন নেছা (৪০)। কিন্তু কোনওমতে ঘরের দরজা খুলতেই পেছনের পাহাড় হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাদের ঘরের উপর! তিনিসহ পরিবারের বাকি সাত সদস্যও মাটির নীচে চাপা পড়ে যান। কিন্তু লোকজন এসে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও বাকি সাত সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিহতরা হলেন, গৃহকর্তা তাজিম উদ্দিন লস্কর (৪৬), তিন মেয়ে যথাক্রমে, আনোয়ারা বেগম লস্কর (২৫), আমলা বেগম লস্কর (১৪), সুমলা বেগম লস্কর (১২), তিন ছেলে যথাক্রমে, আলম হুসেইন লস্কর (১৯), আবিস উদ্দিন লস্কর (১৭) ও রেহিম উদ্দিন লস্কর (৮)। বাড়িতে না-থাকায় বরাতজোরে বেঁচে যান গৃহস্থের ছেলে শাহ আলম (১৮)।
একই দিনে, একই সময় হাইলাকান্দি জেলায়ও ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন একই পরিবারের ছয় জনসহ মোট আট জন। মোহনপুর আরএ গ্রামের নিহত ছয় জনের মধ্যে তিনটি শিশুও রয়েছে। নিহতরা হলেন, কুটন মিয়া লস্কর (৪০), জুলফা বেগম লস্কর (৩০), রহিমা বেগম লস্কর (৬), পুতুলি বেগম লস্কর (৪), নাজিরা বেগম লস্কর (৬) ও মতিউর রহমান লস্কর (৭০)। তাছাড়া, মোহনপুর গ্রান্ট ও চন্দ্রপুর গ্রান্টে একজন করে ধসচাপা পড়ে নিহত হন। নিহতরা হলেন, চান্দমণি মাল(৫) ও রূপচান্দ সরকার (৪৫)। আহত হন আরও তিনজন। যথাক্রমে, নজরুল হোসেন লস্কর(১৩), আসহাই বিবি লস্কার(৫৫) ও নিজাম উদ্দিন শেখ(৫০)। পৃথক তিনটি ঘটনায় হাইলাকান্দিতে মৃতের সংখ্যা আট জন। আহতদের হাইলাকান্দির স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবর্গ নিহতদের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন। নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছে। কাছাড়ের জেলা উপায়ুক্ত শ্রীমতি কীর্তি জল্লি রাতেই কাছাড়ের নিহত সাত জনের নিকটাত্মীয় শাহ আলমের হাতে চার লক্ষ টাকা করে মোট আটাশ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। একই দিনে একুশ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সমগ্র বরাক উপত্যকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, এ-পর্যন্ত করোনার সংক্রমণে অসমে মৃতের সংখ্যা চার জন।