রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসের নতুন লেজার সার্ভিস ‘বি ওয়েল’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মেয়র লুৎফুর রহমান  » «   প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপির সাথে বিসিএর মতবিনিময়  » «   সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই‘র ইন্তেকাল  » «   ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিয়ানীবাজারে পথচারী ও রোগীদের মধ্যে ইফতার উপহার  » «   ইস্টহ্যান্ডসের রামাদান ফুড প্যাক ডেলিভারী সম্পন্ন  » «   বিসিএ রেস্টুরেন্ট কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এনএইচএস এর ‘টকিং থেরাপিস’ সার্ভিস ক্যাম্পেইন করবে  » «   গ্রেটার বড়লেখা এসোশিয়েশন ইউকে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করবে  » «   স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

করোনাকাল ও চিকিৎসকদের প্রশংসনীয় ভূমিকা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

 

ডাক্তারদের নিকট থেকে সহস্র যোজন দূরে থাকার চেষ্টা করি, সব দিনই। না, কোনও ক্রোধ বা ঘৃণার বশবর্তী হয়ে নয়। আমি সব দিনই বিশ্বাস করি, “Prevention is better than cure”. আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের মধ্যে বেশ ক’জন চিকিৎসক থাকলেও ভুলেও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও আলাপচারিতায় প্রবৃত্ত হই না। তাই, চিকিৎসকদের পেশাদারিত্ব সম্পর্কে তেমন ধারণাও নেই। কিন্তু ইদানীং করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশের কয়েকজন গুণী চিকিৎসকের মৃত্যু ও তাঁদের পেশাদারিত্ব, নিজের জীবন বিপন্ন করে রোগীর সেবা প্রদানের ছবি দেখে কিংবা গল্প শুনে অনেক সময় বিহ্বল হয়ে পড়ি! নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি একজন ডাক্তার হলে এরকম পরিস্থিতিতে আমার ভূমিকা কী হত! করোনা হাসপাতালের চিকিৎসক বাবার পা জড়িয়ে ধরে ঘরে রাখতে ব্যর্থ চেষ্টা করছে একটি শিশুপুত্র! কী করুণ দৃশ্য!

(দুই)

কিছু দিন আগে, সম্ভবত ইরানের এক চিকিৎসকের ছবি ভাইরাল হয়েছিল। করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক বাবা আপাদমস্তক নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে বাড়ির মূল ফটকে দাঁড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে শেষ বারের মতো তাঁর দুটি কচি শিশু সন্তানকে দেখে গিয়েছিলেন! পরে তাঁর মৃত্যু হয় হাসপাতালেই! চোখে জল এসে গিয়েছিল, করুণ দৃশ্যটি দেখে! আরেকজন চিকিৎসক বাবা কাঁচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শিশুপুত্রকে দেখছেন! শিশুটি বাবাকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করছে! এমন দৃশ্য খোঁজলে অসংখ্য পাওয়া যাবে, হয়তো।

(তিন)

আমার মনে হয়, করোনা-উত্তর সমাজব্যবস্থা , রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়বে। গঠন করতে হতে পারে নতুন সমাজব্যবস্থা-রাষ্ট্রব্যবস্থার। দীর্ঘ দিন ব্যবহার কিংবা অপব্যবহারের ফলে বর্তমান এই জরাজীর্ণ সমাজ- রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক ফাঁকফোকর তৈরি হয়েছে! চলার পথে প্রতি পদক্ষেপে দেখা যাচ্ছে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি! কখনও সাবলীল আবার কখনও মন্থর সেই গতি! যে-সকল রাষ্ট্র অতি প্রগতিশীল বলে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল, তাদের গতির সঙ্গে এলায়নমেন্ট সঠিক না-থাকার দরুন বার বার ব্যাপকভাবে হোঁচট খাচ্ছে! আমেরিকা, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সসহ উন্নত রাষ্ট্রগুলো তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ! একটি গাড়ি বা যন্ত্র নির্দিষ্ট সময়ের পর সার্ভিসিংয়ের দরকার পড়ে! সমাজ কিংবা রাষ্ট্রব্যবস্থাও এক একটি বৃহৎ যন্ত্র! বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণজনিত মৃত্যু ও আক্রান্তদের ঘটনাকে যদি আমরা বীভৎস একটি মোটর গাড়ি দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে দেখব যে, মোটর গাড়িটি বিশ্বমানের উৎকৃষ্ট একটি কোম্পানি তৈরি করলেও চালক সুদক্ষ নন অথবা অহঙ্কারী, মদ্যপ ছিলেন! তাই, আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি সকল সুবিধাযুক্ত গাড়িটি বিভিন্নভাবে সিগনাল দিলেও চালক ইচ্ছে করেই সঠিক সময়ে ব্রেক কষেননি বা যান্ত্রিক ত্রুটি সময়মতো সারিয়ে তুলতে সচেষ্ট হননি! চালক, তিনি মোটর গাড়িরই হন, জাহাজেরই হন আর রাষ্ট্রেরই হন, চালক তো চালকই! বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংস হওয়ার করুণ কাহিনি তো সাহিত্য, সিনেমায় অসাধারণ নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে! টাইটানিক ধ্বংস হবে না কিংবা করোনা ভাইরাস আমেরিকাকে কাবু করতে পারবে না, এমন ঔদ্ধত্য পৃথিবীর ইতিহাসে হাতেগোণা হয়তো!

(চার)

চিকিৎসকদের কথা বলছিলাম। চিকিৎসকদের ব্যাপারে অনেক ‘নেতিবাচক’ ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে। ‘সমাজ’ বলে আমরা সাধারণত যা বুঝি, চিকিৎসকরা সেই আটপৌরে সমাজের অন্তর্গত নন! তাঁরা অনেকটা ‘পৃথক সমাজ’- এর বাসিন্দা! তারও কারণ আছে বৈকী! সাধারণত, পড়াশুনায় মেধাবীরা-ই জয়েন্ট এন্ট্রান্স-এর মাধ্যমে কঠিন ‘প্রতিপক্ষ’কে পরাজিত করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার ‘যোগ্যতা’ ‘অর্জন’ করেন। ফলে, উক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে তাঁদেরকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। রাতদিন সিলেবাস শেষ করার একটা তাগাদা কাজ করে। এমতাবস্থায়, পরিবারের সদস্য ছাড়া, অন্যান্য পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে স্বভাবতই একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। তখন, মেডিক্যাল পড়ুয়ারা নিজেদের ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে নিজস্ব একটি ছোট্টো পরিসর বা ‘সমাজ’ তৈরি করে নেয়। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সেই পরিসরটি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিধি বিস্তার করতে শুরু করে। তখন আর অতীতের দিকে ফিরে তাকাবার অবকাশ খুব কমই পাওয়া যায়। আর উক্ত পরিধির বাইরে যাঁরা থাকেন, সে আত্মীয় হোন বা বাল্যবন্ধু, খেলার সাথী, তাঁরা ধীরে ধীরে বৃত্ত থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েন। ফলে, এক সময় বাল্যবন্ধুটি স্বনামধন্য চিকিৎসক হলেও সব কথা তাঁর সঙ্গে ‘শেয়ার’ করার অবকাশ থাকে না। পেশাগত একটা বাধ্যবাধকতাও এক্ষেত্রে বৈরী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়! যার দরুন সমাজে প্রচ্ছন্নভাবে দুটি ‘আপাত প্রতিপক্ষ’ শ্রেণির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। বলা যায়, একটি বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক-ভৌগোলিক পরিসরে থেকেও দুটি আলাদা সমাজ বা বৃহৎ-এর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি সমাজ অর্থাৎ ‘দ্বৈতসমাজ’ -এর সৃষ্টি হয়!

চিকিৎসকরা স্বভাবতই ‘অভিজাত’ ‘শিক্ষিত শ্রেণির’ প্রতিনিধিত্ব করেন! কারণ, এই বৃত্তটি কেবল শিক্ষিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকলে উক্ত সমাজের সদস্য হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। পক্ষান্তরে, বৃহত্তর সমাজের সদস্য যাঁরা,তাঁদের মধ্যে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, অশিক্ষিতদের নিয়ে গঠিত হয় বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সহযোগে একটি আটপৌরে সমাজ। এখানে, প্রকৌশলী, স্থপতি, অধ্যাপক, রাজনীতিক, আইনজীবী, সরকারি চাকরিজীবী, কর্মসংস্থানহীন শিক্ষিত যুবক-যুবতী সকলেই অন্তর্ভুক্ত। এই বৃহত্তর সমাজ থেকেই ক্ষুদ্র সমাজের উৎপত্তি! এরা-ই, অর্থাৎ এই ক্ষুদ্র চিকিৎসক সমাজটি-ই সমাজের ‘এক আনা’! বাকি সব ‘পনেরো আনা’র অন্তর্ভুক্ত! এক আনা ছাড়া যেমন ‘ষোলো আনা’ পূরণ হয় না, তেমনই, ‘পনেরো আনা’ ছাড়া ‘এক আনা’ও অসম্পূর্ণ! কিন্তু দুটি শ্রেণির মধ্যে বা সমাজের মধ্যে একটি অকথিত সূক্ষ্ম সংঘাতও আছে! খালি চোখে যা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু যখন সেই সংঘাতটি প্রকট হয়, তখন আবার দুর্লভও নয়! অনেকের নিকট বিসদৃশ ঠেকলেও তা অস্বীকার করার উপায় থাকে না।

বলা-ই বাহুল্য যে, কিছুসংখ্যক চিকিৎসক যেমন পেশার খাতিরে হোক বা মানবিকতার কারণেই হোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা প্রদানে দ্বিধাবোধ করেন না, তেমনই, কতিপয় চিকিৎসক নিজের অহমিকার দরুনই হোক বা অন্য কোনও অজ্ঞাত কারণেই হোক, পারিপার্শ্বিকতাকে রীতিমতো তাচ্ছিল্য করেন! ফলে, তৈরি হয় দূরত্ব! একজন অধ্যাপক বা স্থপতিও যে সমান মেধাবী, তা কেউ কেউ অস্বীকার করার মতো ‘ধৃষ্টতা’ দেখিয়ে বৃহত্তর সমাজের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন! তাঁরা কেউ কেউ ভুলে যেতে চেষ্টা করেন, একজন চিকিৎসক তৈরির নেপথ্যে আমজনতারও নৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি আর্থিক বদান্যতাও সমানভাবে সক্রিয় থাকার ফলে একজন ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন! একজন ডাক্তার তৈরির নেপথ্যে একজন শ্রমিক বা কৃষকের অবদানও এক-ই! তাই, একজন শ্রমিক বা কৃষককে তাচ্ছিল্য করার অর্থ সমগ্র সমাজব্যবস্থাকে তাচ্ছিল্য করা! কিন্তু, এই ক্রান্তিকালে, এই করোনাকালে ‘ছোটো সমাজ’ ও ‘বৃহত্তর সমাজ’- এর মধ্যেকার জলবিভাজন রেখা প্রায় বিলীন হওয়ার পথে! ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চিকিৎসককুল বৃহত্তর সমাজের কল্যাণচিন্তায় আত্মনিয়োগই করেননি, আত্মবিসর্জন দিয়ে প্রমাণ করছেন, তাঁরা বৃহত্তর সমাজেরই এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ! পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক! অতএব, বৃহত্তর সমাজের পক্ষ থেকেও তাঁদের আত্মত্যাগকে মহিমান্বিত করা দরকার। কিন্তু, তাঁদের সঙ্গে সেতু-বন্ধনের আদৌ কোনও দরকার আছে কি? সেতু তো তখনই বাঁধতে হয়, যখন মাঝখানে কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকে! নাগালের বাইরের কোনও কিছুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেই সেতু-বন্ধনের দরকার পড়ে। কিন্তু, চিকিৎসকরা তো আমাদেরই ভাই, বোন! আমাদেরই সন্তান! আমাদের প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের জীবন বিপন্ন করছেন! উৎসর্গিত করছেন! প্রয়োজনে, আমাদের প্রাণ উৎসর্গ করেও তাঁদের প্রাণ বাঁচানো দরকার!

প্রিয়জনের হাতে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষ্যে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে থাকি। সেভাবে, চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের হাতে আমরা কি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ ফুল, কবিতা, বই, উপহার সামগ্রী তুলে দিতে পারি না! তখন ভালোবাসার সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হবে!

মনে পড়ে, কৈশোরে একবার তৎকালীন নামকরা এক ডাক্তারের নিকট গিয়েছিলাম। পারিবারিক সম্পর্কিত। কবিতা লেখালেখি করি। জানতেন। তাই, খাতির করে ফি নেননি। আমিও চেম্বারে বসে বসেই তাঁকে নিয়ে একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলাম! তিনি আপ্লুত হয়েছিলেন!


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক