মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «   ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে  » «   ৭৫ শেফ এর অংশগ্রহণে বিসিএর শেফ অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন  » «   ইস্টহ্যান্ডসের ফ্রি স্মার্ট ফোন পেলেন ৪০ জন  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস-এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «   বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২নং বাসভবন ভস্মীভূত এবং ভাস্কর্য ভাংচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ  » «    অদ্ভুত দেশপ্রেম ও খাঁটি ব্যক্তিগত স্বার্থ  » «   বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবারে বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ইদ, বিশ্বায়ন ও নারী



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রমজান মাসান্তে শাওয়ালের এক ফালি চাঁদ মুসলিম বিশ্বের কাছে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দের সওগাত! অভাবনীয় নির্মল আনন্দ নিয়ে উপস্থিত হয় ইদ-উল-ফিতর। একদিকে, উৎসবের আনন্দ। অন্যদিকে, এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনের শেষে পাপ মুক্তির আনন্দ! একটি জাগতিক। অন্যটি আধ্যাত্মিক। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে, ইদের আধ্যাত্মিক আনন্দ গৌণ হয়ে অনেকের নিকট জাগতিক আনন্দ-ই সমধিক গুরুত্ব লাভ করেছে!

আজ থেকে কুড়ি/পঁচিশ বছর আগেও এতদ্দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষের প্রান্তিক এই জনপদ করিমগঞ্জে ইদ এমন আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না! তখন যেমন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সে-রকম ছিল না, তেমন-ই ছিল না বাহারি পণ্যের বিরাট বাজার! মানুষের আয় ছিল সীমিত। সরকারি চাকরিজীবী ও সীমিতসংখ্যক ব্যবসায়ীর পদচারণায় ইদের বাজার মুখরিত হলেও এত লাগামহীন ছিল না! সম্পন্ন কৃষক ধান বা অন্যান্য শস্য বিক্রি করে যে অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করতেন, তার মধ্য থেকে নগণ্য একটি বাজেট বরাদ্দ থাকত ইদের বাজার করার জন্য! সে বাজার বলতে শুধু নতুন পোশাক নয়; তেল, চিনি, আটা, ময়দা, সেমাই ইত্যাদি ছিল প্রধান উপকরণ! বাজার থেকে মরিচ ইত্যাদি ক্রয় করে নিজ হাতে গুঁড়ো করা, ইদের আগে মাটি দিয়ে কাঁচা ঘর লেপা, এসবই ছিল ইদ-কেন্দ্রিক।

কিন্তু গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে বিশ্বায়নের ফলে ভারতবর্ষের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো মুসলিমদের গায়েও হাওয়া লাগতে শুরু করে! সীমিত পরিসরে হলেও কিছুসংখ্যক মুসলিমও বিশ্বায়নের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেন। একদিকে, হাতে কাঁচা পয়সা! অন্যদিকে, অকল্পনীয়, অভূতপূর্ব বিদেশি পণ্যে দেশের বাজার ছয়লাব হয়ে যাওয়া! যুগ যুগ ধরে যাঁদের বাড়ির স্যাঁতসেঁতে মেঝে মাটির কলসি বা ঘড়া-ই ছিল একমাত্র অবলম্বন, বিশ্বায়নের ফলে সেই সকল বাড়িতে কলসি কিংবা ঘড়ার ঘটল নির্মম পরিণতি! বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির দামি ফ্রিজ এসে সম্পন্ন পরিবারের পাকা মেঝের হেঁশেলে শোভাবর্ধন শুরু করল! মাটির চুলার স্থান দখল করে নিল এলপিজি চালিত স্টোভ! বা বৈদ্যুতিক চুলা! খাদ্যাভ্যাসেও হল কিছুটা পরিবর্তন! নতুন নতুন দামি পণ্যসামগ্রী সম্পন্ন মুসলিমদের হেঁশেলকে সমৃদ্ধ করে তুলল! শুরু হল অদৃশ্য প্রতিযোগিতা! কার হেঁশেলের চেয়ে কার হেঁশেল বেশি সুন্দর! বেশি সমৃদ্ধ! এতে একেক জন নারীর সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হল বটে! অনেক কষ্টও লাঘব হল বলা যায়!

ইদ পুরুষদের ততটুকু প্রভাবিত করে না, যতটুকু করে নারী ও শিশুদের! নতুন জামা-জুতার প্রতি শিশুদের আকর্ষণ সব দিনই। কিন্তু বিজ্ঞাপনশাসিত সমাজে পুরুষের চেয়ে নারী ও শিশুদের চিত্ত হরণ করা তুলনামূলক সহজ! কবিগুরু বলেছিলেন, “নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার…”। কিন্তু আজকাল, নারীর নিজের ‘পছন্দ’কে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি অনেকটাই অপেন সিক্রেট বা অর্ধ-নগ্ন বিষয়!

এখন করোনাকাল! দীর্ঘ দিন ধরে সমগ্র ভারতবর্ষে (২৪ মার্চ থেকে) লকডাউনের ফলে সিংহভাগ মানুষের রোজগার বন্ধ! বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হয়তো লোপ পেয়েছে, নয় তো চূড়ান্তভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছর কয়েক থেকে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোটবন্দির পর থেকে সরকারি চাকরিজীবী ও সম্পন্ন ব্যবসায়ী ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষ দারুণ অর্থ-সংকটে আছেন! এবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে দেশব্যাপী লকডাউন! নিম্ন মধ্যবিত্তের এখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা! এমন ক্রান্তিলগ্নে এসেছে ইদ-উল-ফিতর! স্বাভাবিক নিয়মেই। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী যেমন পরিস্থিতির না-জায়েজ ফায়দা তুলতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনই, কতিপয় অপরিণামদর্শী মানুষ ইদ উপলক্ষ্যে পোশাকসহ অপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যস্ত! এজন্য, একদিকে, যেমন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, অন্য দিকে, যে শিশুটির বাবা অভাবের দরুন তাঁর শিশুদের পোশাক কিনে দিতে পারছেন না, তাঁদেরও মানসিকভাবে আঘাত দেয়া হচ্ছে! ফলে, ইদ-এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এ- ক্ষেত্রে যে বিঘ্নিত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক