পৃথিবীতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হলো ক্রীড়া জগতের সেরা আয়োজনদের একটি। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার কোটি কোটি মানুষের চোখ থাকে এ খেলায়। ইউরোপ আমেরিকায় এ খেলাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা না থাকলেও ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড তথা ব্রিটিশ শাষণাধীন দেশগুলোতে এ খেলায় বিনিয়োগ করা হয় প্রচুর। আর সেজন্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এই দেশগুলোর ক্রিকেটাররা এ খেলায় দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষমতা দেখাচ্ছে।
কিন্তু ব্যাপক বিনিয়োগ কিংবা আয়োজনে ইংল্যান্ডে ব্যাপক নাগরিকদের অংশগ্রহণ ইতোপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষত ইংল্যান্ডের দর্শকরা এ খেলায় ফুটবলের মতো আগ্রহী নয়। কিন্তু এরপরও এবারে বিশ্বকাপ আয়োজক ইংল্যান্ড। ক্রিকেটকে আরো ব্যাপক জনগণের পাশাপাশি নিয়ে যেতে এ আয়োজন কাজ দেবে বলে ব্রিটিশদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জয়ে আশাবাদী ব্রিটিশ ক্রিড়া পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করছেন, ক্রিকেটের বিশ্বকাপ আয়োজন এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডে ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ (দি অ্যাশেস) দেশটির ব্যাপক সংখ্যক ক্রিকেট দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারবে বলে ধারণা করছেন। এবারের গ্রীষ্মকালটা ইংল্যান্ডের ক্রিড়া ইতিহাসে এক মাইলস্টোন, বিশ্বকাপ তাদের দর্শকদের জন্য একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে বলেই তারা আশাবাদী। এ ছাড়াও আগামী গ্রীষ্মকালীন সময়ে তারা আরো দর্শক সংযুক্ত করতে ‘দি হানড্রেড’ নাম দিয়ে ১০০ বলের একটা খেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এসব আয়োজনে সংশ্লিষ্টরা ইংলিশ না ভারতীয়, বাংলাদেশি না পাকিস্তানি, যুবক না বৃদ্ধ তা বিবেচনায় নেয়া হবে না। ব্যাপক নাগরিকদের অংশগ্রহণ করানোই এর লক্ষ্য।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯, ইংল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভ এলওয়ার্থির ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের একটা দল বিশ্বকাপ শুরুর আগেই অস্টেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফর করেছিলেন। ২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরুর আগে তারা কিভাবে ব্যাপক নাগরিকদের সংযুক্ত করেছিলেন এ খেলায় তার একটা সমীক্ষা নিতে তাদের এ সফর ছিল এবং সে হিসাবে তারা এবারের বিশ্বকাপে দর্শক সংযুক্ত করতে আরো উন্নত ডেভলাপড পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। স্টিভ এলওয়ার্থির মতে, ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যময় একটা ক্রিকেট দর্শক শ্রেণি আছে। কিন্তু বিশ্বকাপ দেখার মতো তাদের স্টেডিয়ামগুলোতে তুলনামূলকভাবে আসন সংখ্যা কম। বিশ্বকাপ দেখার জন্য তাদের ৮ লাখ মানুষের আসন আছে ঠিকই, তার চেয়ে প্রয়োজন অনেক বেশি। এর ওপর এই আট লাখ থেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টিকেট সাধারণ মানুষের জন্য নয়। বিশ্বকাপ দেখতে আসা বিভিন্ন দেশের আইসিসির সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা, ক্রিকেট জগতের প্রভাবশালী দর্শক গণমাধ্যম এদের জন্য বরাদ্ধ রাখতে হয়। ৬ লাখ ৫০ হাজার টিকেট একটা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য অপ্রতুল।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তাদের বিশ্বকাপ আয়োজন খুবই উন্নত, বিশ্বমানের। কিন্তু দেশটার নিজস্ব দর্শক প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাছাড়া তারা প্রয়োজনীয় আসনও প্রদান করতে পারছেন না। বিদেশি দর্শকদের তারা প্রায়োরিটি দিয়েছে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট ব্যবস্থাপনা কমিটি চেষ্টা করেছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যাতে খেলা দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। এবার তাদের টার্গেট ছিল ষোল বছরের নিচে অন্তত ১ লাখ কিশোর-কিশোরীদের খেলা দেখতে আকৃষ্ট করা। তারা এবার প্রায় দেড় লাখ টিকেট বিক্রি করেছে শুধুমাত্র মহিলাদের মাঝে। ২০১৭ সালে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের সাফল্যই হিসেবেই ক্রিকেটে মহিলাদের এ সংযুক্তিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড জিতবে এ তাদের এক আশাবাদ। তারা মনে করছে বিশ্বকাপ জিতে এ গ্রীষ্মে তারা তাদের ক্রীড়া ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করবে। যদি তা না-ও হয়, তবুও তাদের বড় পাওয়া হলো এবারকার বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটে তারা ব্রিটেনের ব্যাপক নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারবে বলেই তাদের বিশ্বাস। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রায় ২৫ লাখ মানুষ এবারের বিশ্বকাপের টিকেট পেতে আগ্রহী ছিল, যারা টিকেটের জন্য আবেদন করেছিলেন।