বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ইউরোপ যাত্রা ।বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে
ব্রিটেনের শত বছরের বাংলা পত্রিকার ইতিহাসে নতুন নাম সংযোজন হলো ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকা। ৫ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ শুরু করল তাদের ইউরোপ যাত্রা। এখন থেকে নিয়মিত পত্রিকাটি সাপ্তাহিকভাবে ইউরোপের বাজারে প্রকাশিত হবে।
লন্ডনে পত্রিকাটির ইউরোপ সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, টাওয়ার হ্যামলেটস এর মেয়র জন বিগ, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী।
বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করায় লন্ডনের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন যদি বসুন্ধরা গ্রুপের পণ্য সামগ্রীর বিজ্ঞাপন পায়, তাহলে ব্রিটেনের অন্যান্য বাংলা মিডিয়াও তা পাবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রচার সংখ্যার শীর্ষে থাকার কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকে বলেই পত্রিকাটি আজ দেশের সর্বাধিক প্রচারিত জাতীয় দৈনিক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রকৃত চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করে বলেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের ওপর পাঠকের এই ভরসা।
তিনি বলেন, শুধু নেতিবাচক নয়, দেশের প্রতিটি সেক্টরের ইতিবাচক খবরও যাতে দেশবাসী জানতে পারে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিই আমাদের ছিল এমন পরামর্শ। বাংলাদেশে ২৩০টি প্রকাশিত পত্রিকার মধ্যে অল্প সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন আজ বাংলাদেশের শীর্ষ পত্রিকা। আমাদের অন্য পত্রিকা ‘কালের কণ্ঠ’ আছে তৃতীয় স্থানে। সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে পারার সাহস থাকার জন্যই আমাদের এই মিডিয়া গ্রুপটি মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো বিনিয়োগ বান্ধব দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একমাত্র সামরিক সরকার ছাড়া প্রতিটি সরকারই ছিল ব্যবসা বান্ধব।
১/১১ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশকে অন্তত ২০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে এই সরকার। ব্যবসায়ীদের ১২শ কোটি টাকা ঐ সময় ১/১১ সরকার নিয়ে নেয়, যার মধ্যে তার নিজের রয়েছে ২৫৬ কোটি টাকা। এমন তথ্যও দেন আহমেদ আকবর সোবহান।
তিনি বলেন, ব্রিটেনের প্রতি তার আলাদা একটা টান আছে। এক এগারোর সেনা শাসনের সময় ২৮ মাস তিনি লন্ডনে ছিলেন। লন্ডনে থেকে এক এগারোর সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে লড়েছেন তিনি।
দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে উল্লেখ করে, এই দেশের নতুন প্রজন্ম যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন তাদের জন্য বাংলাদেশে অপার সুযোগ অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ৬৫ লক্ষ টাকা মাসিক বেতন দেওয়ার ও রেকর্ড আছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রবাসীদের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে একটি সম্মানজনক আসনে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, এই সম্মান ধরে রাখতে মিডিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখি। কিন্তু অবাধ মিডিয়া স্বাধীনতার সুযোগে কেউ কেউ মিথ্যে অপপ্রচারের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মাকাণ্ড বাধাগ্রস্থ করার অপচেষ্টা করেন, এটি মোটেই কাম্য নয়।
প্রবাসীদের বাংলাদেশিদের রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, জেল-জুলুম সহ্য করার ক্ষমতা নিয়েই রাজনীতিতে নামতে হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউরোপ সংস্করণের শুভ যাত্রায় অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে প্রচার শীর্ষে অবস্থানকারী এই পত্রিকাটি লন্ডনসহ ইউরোপেও একই অবস্থানে উঠে আসবে এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, উত্তর আমেরিকা সংস্করণ প্রকাশের পর বাংলাদেশ প্রতিদিন আজ যাত্রা শুরু করল ইউরোপে, এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
লন্ডনকে ভিত্তি করে পত্রিকাটির ইউরোপ সংস্করণ প্রকাশের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, লন্ডনকে কেন্দ্র ধরেই ইউরোপে বিস্তৃত হয়েছে বাঙালি নামক বটবৃক্ষটির ডালপালা। এই বটবৃক্ষটি এখন মাল্টিকালচারাল ব্রিটিশ সোসাইটির অন্যতম সমৃদ্ধ অংশ। এই অংশকে কেন্দ্র করে গোটা ইউরোপব্যাপী অনাবাসী বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে সেই বলয়ের সাথে বাংলাদেশের জনগণের একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ প্রতিদিন। বাংলাদেশের একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক হিসেবে অনাবাসী এই জনগোষ্ঠির প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেই দায় থেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই ইউরোপ সংস্করণ।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সদস্য করায় ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ব্রিটেনসহ ইউরোপে বসবাসরত অনাবাসী বাঙালিদের সুখ-দুঃখের সংগ্রামে এখন থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন সহযোদ্ধা হিসেবে থাকবে। অনাবাসীদের অর্জনের কথা পত্রিকাটি যেমন পৌঁছে দেবে শিকড় ভূমিতে, ঠিক তেমনি দেশেও তাদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
জনপ্রিয় উপস্থাপক উর্মি মাযহারের প্রানবন্ত উপস্থাপনায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন প্রবীন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার মোহাম্মদ জুলকারনাইন ও টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, চ্যানেল এস চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, সুরমা সম্পাদক ফরিদ আহমদ রেজা, জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন,চ্যানেল আই’র রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী শুয়েব, আইওন টিভি র কর্ণধার এনাম আলী এমবিই, সত্যবাণীর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, বাংলা পোষ্টের তাজ চৌধুরী, টিভি ওয়ানের গোলাম রসুল, ইকরা বাংলা টিভির হাসান হাফিজুর রহমান পলক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ।
এ ছাড়া ও লন্ডন বাংলা মিডিয়ার সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাদার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন ইউরোপ ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আ স ম মাসুম ও যুগ্ম ব্যুরো চিফ হিসাবে আছেন আফজল হোসেন।
কণ্ঠ: সুমু মির্জা