করোনাভাইরাসের আক্রমণে অবশেষে বাংলাদেশের মানুষ ঘরবন্দী হলো। যদিও সরকার লকডাউন ঘোষণা করে নি, তবে নাগরিকদের নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ পাওয়ামাত্র মানুষ ঘরে ঢুকে গেছে এমনটিও নয়। কোথাও পুলিশ পিটিয়ে ঘরে ঢোকাচ্ছে, কোথাও সেনাবাহিনী।
মানুষকে ঘরে আটকে রাখা মুখের কথা নয়। সরকার থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে মানুষ যেন নিজ ঘরে নামাজ পড়ে। তাতে কাজ হচ্ছে না। মানুষ বরং আরো বেশি মসজিদে জড় হয়ে নামাজ তো পড়ছেই, নামাজ পরে মিলাদ-জিকির ইত্যাদি করছেই এবং সম্ভাব্য বিপদের মাত্রা বাড়াচ্ছে। ব্যাপক হারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেলে গোটা বাংলাদেশ গোরস্থানে পরিণত হতে সময় লাগবে না।
দেশের বড় বড় অগ্রগণ্য ইসলামি স্কলারগণ মসজিদে জামাত বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন কোরান-সুন্নার আলোকে। তাঁদের সামনে এনে, তাঁদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে সরকারকে এখনো অনুরোধ করে যাচ্ছে মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। বিষয়টি সরকারের আমলে নেয়া দরকার। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই বিজ্ঞ আলামদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের অনুরোধ আসছে। মন খারাপ নিয়ে ঘরে বসে দেখছি আমার এলাকায় হুজুরদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কারবার আর আতঙ্কে দিন পার করছি। দেশের বহু এলাকার বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি— প্রায় সবখানেই একই অবস্থা!
এদিকে গণপরিবহণ চালু রেখে সরাকারি ছুটিতে দলে দলে মানুষ বাসে-ট্রেনে-লঞ্চে গ্রামে এসে পৌঁছেছে। কে যে সাথে করে করোনাভাইরাস নিয়ে এসেছে এবং সংগোপনে ছড়িয়ে দিচ্ছে তা কেউ জানে না। জানার ব্যবস্থাও নেই। সহজে তা অর্জনের আশাও নেই। চীনে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল তখন যদি সরকার দ্রুত সবগুলো বিভাগীয় শহরে অন্তত করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে রাখতো তাহলে বাঙলাদেশ এতোটা ঝুঁকির মুখে পড়তো না। কিন্তু বাঙলাদেশের স্বাস্থমন্ত্রণালয় কোনো প্রস্তুতি নিয়েছে বলে প্রমাণ নেই! শুধু বিবৃতি দিয়ে গেছে!
দুই.
এর মধ্যে এসে গেছে স্বাধিনতা দিবস। জাতি এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে কোনো উৎসব করতে পারে নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর— কম কথা নয়! একটা জাতির জন্য বিপুল সময়। আমরা এই পঞ্চাশটি বছর কী করেছি? কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে পেরেছি? গোটা দেশের সবগুলো খাতে কেবল বিশৃঙ্খলা আর লুটতরাজ!
আমাদের যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো অত্যন্ত ভঙ্গুর। একটাও ভালো প্রতিষ্ঠান আমরা খাড়া করতে পারি নি! আইনের শাসন বলতে কিছু নেই, তবে শোষণের আইন আছে। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন— স্বাধীনতা অর্জিত হলে তাঁর জাতি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জাতিকে মানবজাতির উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বয়ং তাঁকেই ঘাতকের হাতে জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হলো— বাঙালজাতি স্বাধীনতার মর্ম জানে না!
৫০ বছরে একটা জাতির অর্জন— শুধু আফসোস আর আফসোস!
বিশ্বপরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। সবচেয়ে খারাপ সম্ভবত ইরানের পরিস্থিতি, সেখানে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছে না। কারণ, আমেরিকার নেতৃত্বে ইরানের উপর—এই বৈশ্বিক মহামারীর কালেও—অবরোধ চলছে যা মানবজাতির ইতিহাসে কলঙ্কের অধ্যায় হয়ে থাকবে। এদিকে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডানের কোনো খবরই তো বাঙলাদেশের মিডিয়ায় আসে না। সে-দেশগুলোর সত্যিকার পরিস্থিতি আমরা জানি না। বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেও তুরস্ক সিরিয়ায় বোমা হামলা করছে। অর্থাৎ, ‘মানবসভ্যতা; এক হাস্যকর আভিধানিক বুলি মাত্র।
গত ২৪ মার্চ, খ্যাতিমান অধ্যাপক এবং কলামিস্ট জনাব হেলাল মহীউদ্দিন তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন:
‘সলিডারিটি’ (সংহতি) এবং ‘লিডারশিপ’ (নেতৃত্ব)— এই দুইটি ওষুধ দিয়েই করোনা প্রতিরোধ সম্ভব। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্রিফিং-এর এই পরামর্শটি সঠিক ও প্রশংসনীয়। আমরা শতভাগ সহমত।
‘সলিডারিটি’ (সংহতি) ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’—এই বোধ। দুনিয়ার মানুষ আমরা একজন আরেকজনের কষ্টের কারণ হব না—এই দায়িত্ববোধ। আমি ভাল সেবা পেলাম, আরেকজনও একই সেবা পাবার অধিকারী— এই সত্যটি মনেপ্রাণে মানা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষ, আপনাদের ‘সংহতি’ প্রেসক্রিপশন মোতাবেক আপনাদেরই সর্বপ্রথম দায়িত্ব আমেরিকাকে ইরানের উপর হতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলতে বাধ্য করা, ইজ্রাইলকে ফিলিস্তিনে এবং সৌদি আরবকে ইয়েমেন ওষূধ সরবরাহের পথে বাধা সৃষ্টি না করতে বাধ্য করা।
ATTN:
WHO & UN authorities
We, the world citizens, whole-heartedly support the WHO prescription (presented in the latest briefing) that the two main resistant to Covid-19 at present are ‘Solidarity’ and ‘Leadership’. ‘Solidarity’ refers to global citizens as a single entity—all human beings are for each other.
‘Solidarity’ can never be attained without withdrawing US sanctions against Iran, and Israel and Saudi Arabia’s blockade against Palestine and Yemen respectively.
Should you act honest, sincere and non-hypocritical about ‘solidarity’ medicine—please make the countries comply with the ‘‘solidarity’ principle to ensure the essential medical supplies reach Iran, Palestine and Yemen right away.
করোনাভাইরাস ঠিকই একদিন নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে তার জন্য কতোটা মূল্য দিতে হবে তা আমরা কেউ জানি না। কতো প্রাণ ঝরবে, আমরা কে থাকবো আর কে হারিয়ে যাবো কেউ জানি না। তবে সম্ভাবনা আছে— করোনার ধাক্কায় পৃথিবীর মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে এবং তা হবে মানবিক। মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে বিশ্বের নেতারা যদি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার পেছনে ব্যয়ের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন তাহলে আমরা গৌরব করে তখন বলতে পারবো— এটাই মানবসভ্যতা।
খালেদ রাজ্জাক: কবি, শিক্ষক।
আরও পড়ুন-