পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম ঘড়ি এখন পুণ্যভূমি সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত ‘মক্কা ক্লক’ । গ্রিনিচ মান সময় বা গ্রিনিচ মান টাইম (GMT)-এর বিকল্প হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ‘মক্কা মান সময়’ বা Mecca Mean Time (MMT)।
বিশ্বের সময় নির্ধারিত হয়ে থাকে গ্রিনিচ মান সময় অনুসরণে। তবে গ্রিনিচ মানের দিন এখন শেষ হয়ে আসছে বলা যায়। এখন দিন এসেছে মক্কা মান সময়ের। পৃথিবীর সময় নির্ধারক ঘড়িকে অতিক্রম করে মক্কায় অবস্থিত মক্কা ক্লক এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি।
পৃথিবীর বৃহত্তম এই ঘড়িটি আরব-সময়সূচি অনুযায়ী চলে। যা গ্রিনিচ সময় থেকে তিন ঘণ্টা এগিয়ে।পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি ৭টি বিশাল টাওয়ারের আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্সের মাঝে তৈরি করা হয়েছে রয়েল মক্কা ক্লক টাওয়ার। এ টাওয়ারের ওপর বসানো হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি ‘মক্কা ঘড়ি’।
১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটির এক মুখে লাগানো হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস গ্লাস মোজাইক। শিলালিপির ওপর শৈল্পিক কারুকার্যে অলঙ্করণ করে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দগুচ্ছ। যা ২১০০০ রঙিন বিজলি বাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
আল্লাহর নামের উপরের দিকে ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ। এই স্থাপত্যটির মূল স্থাপত্যের দায়িত্বে ছিল সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ এবং এর স্থপতি দার আল হানদাশাহ। ডিজাইন করেছে সুইস ও জার্মানির প্রকৌশলীরা। ঘড়িটির প্রস্তুতকারক বিশ্বখ্যাত জার্মানির এসএল রাশ কোম্পানি ।
তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে সেবাহির মলে যে ঘড়িটি আছে আয়তনের দিক দিয়ে এটিই ছিল এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি, যার ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার চওড়া। কিন্তু মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৪৩ মিটার। লন্ডনের বিগবেনের চেয়ে মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৬ গুণ বড়।
বিশেষ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এ চাঁদ থেকে আকাশে বিচ্ছুরিত হয় প্রায় ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি। যা আকাশের ১০ কিলোমিটার উঁচুতে ছড়িয়ে যায়। মুসলমানদের বাধ্যতামূলক ইবাদত নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ফ্লাশলাইটের মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে নামাজের ইঙ্গিত দেয়া হয়।
মক্কা শহরের চারপাশ থেকে রাতে ১৭ কিলোমিটার এবং দিনে ১২ কিলোমিটার দূর থেকে স্পষ্টভাবে ঘড়িতে সময় দেখা যায়। প্রায় ২০ লাখ LED বাতি আল্লাহর নামকে প্রজ্জ্বল করে রাখে রাতভর।
প্রতি বছর মক্কা শরিফে লাখ লাখ মুসলমানের যাতায়াত হয়। অনেকেই জানে না যে, সেই সুবিশাল ঘড়িটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি। ওটা শুধু বড়ই নয়, নতুনত্বের দিক দিয়েও শ্রেষ্ঠ। এর নির্মাণকাজ ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০১০ সালে সম্পন্ন হয়েছে। তার পর দুই বছর লাগিয়ে ঘড়ির বিভিন্ন ফাংশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১২ সালে ফাইনালি উদ্বোধন করা হয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুউচ্চ দালান হলো দুবাইয়ের বুর্জ্য-খালিফা। আবরাজ আল-বাইত পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সুউচ্চ দালান হিসেবে ধরা হয়, যার ওপর ঘড়িটি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও মক্কা ক্লক টাওয়ারে রয়েছে ৭ তারকা মানের হোটেল, জাদুঘর এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেলিস্কোপ সেন্টার । সৌদি আরবে স্থাপিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সর্বাধুনিক টেলিস্কোপ গবেষণাগারটি ইসলামের ইবাদতগুলো পালনে জটিলতাকে নিরসনে সহায়ক হবে।
কণ্ঠ: সুমু মির্জা