শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «   হ্যাকনি সাউথ ও শর্ডিচ আসনে এমপি প্রার্থী শাহেদ হোসাইন  » «   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র সাথে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের মতবিনিময়  » «   মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

পাল রাজার প্রাসাদে



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল রাতে। সকালেও একটু মেঘলা ভাব ছিল বটে। তবে দুপুর গড়াতে না আকাশ একদম পরিষ্কার। বৃষ্টির কল্যাণে রাস্তাঘাট বেশ তকতকে আর ধূলোবালিহীন। বিয়ানীবাজারে পৌছে আমরা একটা রিক্সা নিলাম। ফেনী থেকে বেড়াতে আসা বন্ধু সোহাগ সহ যাচ্ছি পাল রাজার প্রাসাদ আর দীঘি দেখতে। যেতে যেতে পথের ধারে দোকান-পাট, ঘরবাড়ি, খেলার মাঠ উল্টোদিকে ছুটে। এক সময় সামনে পড়ে শহীদ টিলা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে এখানে টিলার চূড়ায় দাড়িয়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভ। রিক্সা আবার পথের বাঁক পেরোয়, তারপর মেইনরোড থেকে বামদিকে গ্রামের চিকন রাস্তায় প্রবেশ করে।  একসময় বনানী আচ্ছাদিত টিলাময় পথ মাড়িয়ে আমরা পৌছে যাই পাল রাজার প্রাসাদ সীমার সামনে। ভাড়া মিটিয়ে রাস্তার বামপাশের পথ ধরে হাটা শুরু করি। সেটা সোজা প্রাসাদে গিয়ে থেমেছে।

 

স্থানীয় ভাবে ‘পালবাড়ী’ নামে পরিচিত হওয়া ইতিহাসের স্বাক্ষী এই স্থাপত্যকৃতি দেখতে ঢুকে প্রথমেই পড়ে পাথরের ঘাট বাধানো পুরনো এক পুকুর। স্বচ্ছ ও টলটলে পরিষ্কার সেটির জল। পুকুরের পাশে শতবর্ষী বিরাট এক বটবৃক্ষ দাড়িয়ে আছে পুরনো দিনের স্মৃতি হয়ে। তার গা থেকে বেরিয়ে বেনী করা চুলের মত দলা পাকিয়েছে অনেকগুলো শিকড়। আরেকটু সামনে গিয়ে বামে মোড় নিয়েই আমরা পাল রাজার প্রাসাদে পৌছে যাই। প্রাসাদের উঠোনে অযত্নে বেড়ে ওঠা ঘাসের বন। উঠোন পেরিয়ে ক্রমে ধাপে ধাপে সিঁড়ি ওঠে গেছে প্রাসাদের মূল দালান পর্যন্ত। প্রাসাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আনমনা হয়ে যাই। শতবর্ষ কাল পূর্বে এক সময় এখানে ছিল মানুষের মুখরিত বিচরণ। দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিল এই প্রাসাদ, এই প্রাসাদ প্রাঙ্গন। কাল পরিক্রমায় সেই মানুষেরা হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। তবে আজো তাদের আর তাদের সময়কার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দাড়িয়ে আছে এই প্রাসাদ।

 

 

প্রাসাদ ভবনের ইট-সুড়কি আর কাঠের ফালিগুলো চেনা দায়! শতবর্ষ ধরে কাল পরিক্রমায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া ইট-পাথর-কাঠ হারিয়েছে তার জৌলুস। বট-পাকুড়-অর্কিড পরগাছারা দালানের ক্ষয়ে যাওয়া ফোঁকরে শিকড় গেড়েছে। উঠোনের ঘাসের মধ্যের হাঁটা পথ দিয়ে গিয়ে দাড়ালাম প্রাসাদের বারান্দায়। শ্যাওলা ঢাকা ছাদের ওপরের দিকে এপাশে ওপাশে সাবধানে ইতিউতি তাকালাম, তবে কোন বাদুর-চামচিকা উড়ে গেল না! আলো-আঁধার ঢাকা বারান্দায় কিছুক্ষণ কাটিযে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম। তারপর উঠোনের ডানপাশের গেট দিয়ে আমরা প্রাসাদের পেছনের অংশ দেখতে যাই। প্রাসাদের পেছনের অংশ সামনের দিকটার মত অতটা খোলামেলা নয়। গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে সেখানে কয়েকটি ত্রিভূজাকৃতির মন্দির দেখতে পেলাম। প্রাসাদের ডান এবং বামপাশের অংশে আবার ঘন ঝোপঝাড়, গাছপালার বুনোট। তাই প্রাসাদটিকে কেবল সামনের দিক থেকেই ভাল করে দেখা যায়। জানা যায়, সিলেটের শেষ হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের রাজ্যবসানের পূর্ব পর্যন্ত সিলেটের পঞ্চখন্ড যা বর্তমান বিয়ানীবাজার, পাল রাজা ধর্মপালের অধীনে পাল সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। তৎকালীন পঞ্চখন্ডের শাসক বানারসী পাল খাসা নামক স্থানে এই প্রাসাদ এবং এর কিছুটা দূরে একটি বিরাট দীঘি খনন করেন। যা শত শত বর্ষ পরেও দাড়িয়ে আছে আপন মহিমায়।

প্রাসাদের উঠোনের পাশেই দেখলাম টিন-কাঠ-মাটির তৈরী সুন্দর এক ঘর। তার বারান্দায় খেলছিল ছ্রোট একটি শিশু। কাছে গিয়ে মুচকি হাসি দিতেই উল্টো শ্রাবণের ঢল নামিয়ে জুড়ে দিল কান্না ভেতর থেকে ছুটে এলেন একজন মহিলা। মায়ের কোল পেয়ে শিশুটিও শান্ত হল। তার কাছে প্রাসাদ যিনি দেখাশোনা করছেন তার নাম জানেন কিনা জানতে চাইলাম। তিনি লাজুক হাসি দিয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে বললেন, এ সম্পর্কে তার ভাসুর ভাল বলতে পারবেন। তার সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে ভেতর থেকে একজন বয়স্ক মহিলা আসার পর উনি বললেন- গৃহকর্তা বলরাম আচায্যের কাছ থেকে জেনে নিতে। খোঁজ করতেই বাড়ির পাশে পুরনো পুকুরটির ধারেই পেয়ে গেলাম তাকে। তিনি জানালেন, বর্তমানে পালবাড়ি দেখাশোনা করছেন ভাস্কর পাল চৌধুরী ও সুস্মিতা পাল চৌধুরী। সম্পর্কে তারা ভাই-বোন। তার কাছ আরো জানলাম, ছুটির দিনে এখানে বেড়াতে অনেকেই আসেন। তাদের মাঝে স্থানীয় যেমন আছেন, আছেন দূর-দুরান্ত থেকে বেড়াতে আসা অনেকেই। ফেরার পথে পুরনো পুকুরটিতে দেখলাম কয়েকজন বরশি দিয়ে মাছ ধরতে বসে গেছেন। আমরা দাড়িয়ে দেখছিলাম, এর মধ্যে একজনের বরশির সুতোয় টান পড়লো। হ্যাচকা টান দিতেই উঠে এলো বড়সড় কালো কুচকুচে একটি শিং মাছ। সেটা নিয়ে ব্যস্ত পড়তেই আমরা বিদায় নেই। কয়েক মিনিট হাটার পর সিলেটগামী প্রধান সড়ক পেরিয়ে দেখা মিললো ঐতিহাসিক বারো পালের দীঘি। আমরা দীঘির পাড় ধরে কিছুক্ষণ হাটলাম তারপর দীঘির শানবাধানো ঘাটের বিশ্রাম বেঞ্চে বসলাম। দীঘির স্বচ্ছ টলটলে নীল জলের সাথে আকাশের অবারিত নীল মিশে যেন একাকার! দীঘির অন্য দিকের পাড়ে শেষ বিকেলের প্রতিফলিত রোদে ঝিকমিক করা গাছপালার সারি যেন এক একফালি সবুজ আল্পনা! জলের আয়নায় অপূর্ব সে নীল-সবুজের প্রতিবিম্ব। দীঘির পাড়ের অন্যপাশে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান, বসার জন্য পাকা করা বেঞ্চ, চেয়ার। বিকেলের মুগ্ধকর ফুরফুরে হাওয়া পাড়ে বসে উপভোগ করছিলাম, এর মধ্যেই হঠাৎ ক’জন কিশোর হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পড়ল দীঘিতে।  মৌনতা ভেঙ্গে চমকে ওঠে দীঘির জল। ঘোর কাটিয়ে আমরাও ফিরতি পথ ধরি।

যেভাবে যাবেনঃ পাল আমলের স্মৃতিচিহ্ন এই দীঘি ও প্রাসাদ দেখতে চাইলে ধরতে হবে ঢাকা-বিয়ানীবাজার রুটের বাস। শ্যামলী, রুপসী বাংলা, এনা ইত্যাদি বাস চলে এই রুটে। ভাড়া পাচশ’র মধ্যেই। এছাড়া সিলেট থেকেও লোকাল পরিবহনে যাওয়া যাবে। পৌর শহর থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা নিতে পারেন, দূরত্ব দুই কিলোমিটারের মত। সিলেট হয়ে যারা মাধবকুন্ড ভ্রমণে যান তাদের ভ্রমণ পথেই পড়বে এই প্রাসাদ ও দীঘি। রাত্রি যাপনের জন্য বিয়ানীবাজারে পাবেন হোটেল সুবিধা।

ছবিঃ লেখক

 

শিমুল খালেদ:ভ্রমণ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখক ও প্রাবন্ধিক।পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন