কানাডা বা ইউরোপের প্রলোভনে নেপালে নিয়ে জিম্মি — সতর্ক থাকার আহ্বান
- আপডেট সময় : ০৪:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / 114
কানাডা, ইউরোপ বা অন্যান্য বিদেশে পাঠানোর প্রলোভনে নেপাল যাওয়ার সুবাদে এক মানবপাচার চক্র বাংলাদেশি তরুণদের ফাঁদে ফেলছে। প্রবাসে পাঠানোর নামে নেপালে নিয়ে গিয়ে তরুণদের জিম্মি করে পরিবার থেকে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করছে এই চক্র — সম্প্রতি এ ধরনের তিন প্রতারিত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম, জানিয়েছে সংস্থার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, সিলেট থেকে তাদের কাছে খবর আসে যে এক ব্যক্তির ভাইসহ তিনজনকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কথিত প্রলোভন ছিল—কানাডায় পৌঁছানোর পর সব খরচ পরিশোধ করা হবে। এ অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর ওই তিনজনকে নেপালে নেওয়া হয়। সেখানে একটি হোটেলে রেখে পাচারকর্তারা তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে।
শরিফুল আরও জানান, চক্রটি জিম্মিদের পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে সেই ছবি পরিবারের কাছে পাঠায় এবং পরে কানাডায় পৌঁছেছে দাবি করে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে স্থানীয় দালালকে ৫ লাখ টাকা দিতে বলে। এরপর প্রত্যেকের কাছে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলাতে জিম্মিদের অস্ত্রের মুখে বলানো হত—‘আমরা কানাডায় পৌঁছে গিয়েছি, কোম্পানি ১৫ দিনের ট্রেনিং দিচ্ছে’। তবে এক পরিবারের সন্দেহ হলে স্থানীয় দালালের কাছে অনুসন্ধান করলে ধাঁধাঁ ছিন্ন হয়। পরে পাচারকারীরা টালবাহানা শুরু করে এবং নির্যাতন বাড়িয়ে দ্রুত টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দেয়।
ব্র্যাক জানায়, পরিবারগুলো ২৬ অক্টোবর ব্র্যাককে সম্পূর্ণ ঘটনা জানিয়ে উদ্ধার চেয়ে আবেদন করলে সংস্থার সঙ্গে সিআইডি ও নেপালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কওতাব্রি (কোতোয়ালি) থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রুজু হয়। ওই রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় এক দালালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের খবর নেপালের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছালে রাত ৩টা-র দিকে কাঠমান্ডুর বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় থাকা তিনজনকে ছেড়ে দেয় তারা। ৩০ অক্টোবর ঢাকায় ফেরার পর ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাদের সহায়তা করে; পরে গোয়েন্দারা তাদের জবানবন্দি নেন।
ব্র্যাক সতর্ক করেছে, শুধু কানাডাই নয়—ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ নানা দেশে নেয়া হবে বলে প্রলোভন দেখিয়ে নেপালে নিয়ে গিয়ে একইভাবে জিম্মি করে, অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। নেপালে যেতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা লাগে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসাও পাওয়া যায়—এ কারণেই পাচারকারীরা প্রথমে নেপালকেই বেছে নেয়। যদিও নেপালের পুলিশ বিভিন্ন সময়ে একাধিক পাচারকারীকে আটক করেছে, এই প্রতারণা থামেনি।
ব্র্যাকের অনুশীলনী পরামর্শ—সাধারণ বিদেশগামীদের সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে; এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো বাংলাদেশি বিদেশে বিপদে পড়লে তারা ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবেন; ব্র্যাক আন্তর্জাতিক ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম করবে।
















