খেলা শেষে আলোচনা, সমালোচনায় ব্রিটেনে অনেকে বলছেন, প্রথম ইনিংসের পরপরই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল শেষ হাসিটা ইংল্যান্ডই হাসছে!
ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে ৩৮৬ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে বলতে গেলে জয়ের আত্নবিশ্বাসের ঝিলিক খেলিয়েও গেছে গোটা ইংল্যান্ড শিবিরে। এর কিছুটা প্রভাবও পড়েছে ইংল্যান্ড সাপোর্টারদের মাঝে গ্যালারিতে।
ইংল্যান্ডের করা ৩৮৬ রানের জবাবে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আল হাসান সেঞ্চুরি করে ১২০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন। তবু মন খারাপ নিয়ে তাকে থাকতে হয়েছে। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৭ বল বাকি থাকতেই ২৮০ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে ইংল্যান্ড হেসেছে বিজয়ের হাসি।
ব্রিটেনে প্রায় ৬ লক্ষ বাংলাদেশি বাস করেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশী হিসাবে তিন প্রজন্মের আলোকিত পদচারণা চলছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক নানা কারণে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্কও খুব ভালো।
বলা হয়ে থাকে, বহি:বিশ্বে যুক্তরাজ্যই প্রধানতম দেশ, যেখানে বাংলাদেশের ভাষা, ঐতিহ্য,সাহিত্য সাংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে উজ্জ্বলতম ভাবে তুলে ধরছে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষ্যিত টাওয়ায় হ্যামলেটস বারায় চোখে পড়ে ‘একখন্ড বাংলাদেশ‘। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ট সিলেটিরা একটি পজিটিভ বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করেছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অবদান ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
এবারের বিশ্বকাপে কার্ডিফে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড এর খেলায় গ্যালারিতে ছিল না বাংলাদেশিদের একচ্ছত্র আধিপত্য। স্বাগতিকরা নিজ দেশের পক্ষে ছিলেন অনেক সরব।
ব্রিটেন প্রবাসী এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের মাঝে বিরাজ করেছে এক মিশ্র অনুভূতি। প্রতিযোগিতার খেলায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুদলের প্রতি, দুদলের সমর্থকরা ছিলেন সহানুভূতিশীল।
বাংলাদেশী অধ্যুষ্যিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা ইউকএন্ডগুলো অনেক ব্যস্ত থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে, বিশেষ করে সামার সময়টাকে উপভোগ করতে সবাই বাইরে প্রাণচাঞ্চল্য সময় ব্যয় করতে পছন্দ করেন।কিন্ত আজ ছিল ব্যতিক্রম। ব্রিকলেন, হোয়াটচ্যাপল, ক্যাননষ্ট্রিট, ওয়াটনী মার্কেট, ব্যাথনাল গ্রীন সব জায়গার খোলা স্টল বা রাস্তায় মানুষের চলাচল ছিল অন্যান্য দিনে চাইতে অনেক কম।
যারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে যান নি। তারা বাসায় টিভি সেটের সামনে বসে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড এর খেলা উপভোগ করেছেন।অনেকে বন্ধু,বান্ধবদের নিয়ে একসাথে দুপুরের খাবারসহ খেলা উপভোগ করেছেন।
সাকিবের চার, ছক্বায় যেমন নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের উল্লাস ছিল। তেমনি ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ১৪ বাউন্ডারি ও ৫টি ছক্কায় বাংলাদেশিদের মনে ম্যাচ হারার শংকা থাকলেও খেলা নিয়ে শত্রু-মিত্রের সম্পর্ক ছিল না।
মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যাচ হয়ে ইংলিশ ওপেনার ১২১ বলে ১৫৩ রান করে সাজ ঘরে ফিরার সময়ে ছিল ‘থ্যাংক য়্যু’ মিশেল করতালি। তেমনি সাকিব আল হাসান ১২১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বেন স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, পুরো গ্যালারি তখন কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে করতালিতে মুখরিত করে রেখেছিল স্টেডিয়াম। টিভি সেটের সামনে বসে দেখা দুই প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মধ্যেও ছিল উচ্ছাস প্রকাশে সমান সৌহার্দ।
ইস্ট লন্ডনের আত্নিয়ের বাসায় একসঙ্গে খেলা দেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমী রহমান জামাল। বাংলাদেশি ওরিজিন এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের একসাথে খেলা দেখার অনুভূতি জানার আগ্রহে খেলা শেষে তাকে ফোন করি।
‘এ এক অদ্ভুদ ভালোবাসা মিশেল অনুভূতি। মনে হয়েছে যেন গ্যালারীতে বসে খেলা দেখছি- দুই দলের হয়ে সকলের উচ্ছাস প্রকাশ ছিল প্রায় সমান। দুদলের যে কেউ হারলেও মন খারাপ করা যাবে না বলে আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি নিয়েই খেলা উপভোগ করেছি’- জানালেন রহমান জামান।
বাসার সামনের স্ট্রিটের বাংলাদেশি দোকানে খেলা দেখছিলেন কয়েকজন। স্মিত হেসে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড দুদলের প্রতি তাদের শুভ কামনা ছিল।‘ক্যামন ইংল্যান্ড’, ‘অথবা হোয়াট এ গ্রেট সট সাবিক’ ইত্যাদি প্রেরণাদায়ি উচ্চকন্ঠে উপভোগ করেছেন দোকানে জড়ো হয়ে খেলা দেখা ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাট করতে যাওয়াকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনিয়ে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন মোটাদাগে। তবে মন্তব্য বা প্রতিমন্তব্যে ব্রিটেনবাসী বাংলাদেশিদের তীর্যক বা বিদ্রুপাত্নক মনোভাব ফুটে ওঠেনি। সবার মধ্যেই ছিল দুই দেশের প্রতি শ্রদ্ধা, সৌহার্দ ও ভালোবাসা মিশেল অনুভূতির প্রকাশ।
সব মিলিয়ে কার্ডিফে বাংলাদেশ বনাব ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচটি ব্রিটেন প্রবাসীদের কাছে ছিল একটি অনন্য দিন।