বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাবি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের ষষ্ঠ বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত  » «   প্রাথমিকে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধিত করেছে সমছুল- করিমা ফাউন্ডেশন  » «   গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের বিক্ষোভ  » «   বাংলাদেশ সেন্টার লণ্ডন নির্বাচন ২০২৩: গ্রিন এলায়েন্স এর প্রার্থী পরিচিতি অনুষ্ঠান  » «   নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের বাংলাদেশের ৭২-এর সংবিধান-এর ওপর গবেষণা করার আহ্বান  » «   কাউন্সিল অফ মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটেস এর কো অর্ডিনেটার আসলাম উদ্দিনের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল  » «   লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য সাদিক রহমানের পিতা হাফিজ আব্দুন নূর এর মৃত্যুতে ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ফান্ড পেলো ইষ্টহ্যান্ডস  » «   ক্রয়ডনে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল ফাউন্ডেশনের ফান্ড রাইজিং ডিনার ইভেন্ট অনুষ্ঠিত  » «   হবিগঞ্জ জেলার ১৮ জন অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষক পেলেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২৩  » «   বিসিএর এজিএম ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃক বিশ্ব স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা সভা  » «   হবিগঞ্জ জেলার ১৮ গুণী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পাচ্ছেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা  » «   বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতি ইউকে ২০২৩-২৫ কার্যকরী কমিটির বর্ণাঢ্য অভিষেক  » «    পরিণত জীবন শিক্ষকদেরই দান  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

 পরিণত জীবন শিক্ষকদেরই দান



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

‘শিক্ষক’ শব্দটি মনে এলেই চারজন বিশেষ মানুষের মুখ ভেসে ওঠে মনে। চারজনই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমার শিক্ষক ছিলেন।

জনাব হাফেজ আব্দুল কুদ্দুস আমাকে ইসলামি শিক্ষা দিয়েছিলেন, কোরানশরিফ পর্যন্ত। শিক্ষক হিসেবে অতুলনীয়। কিন্তু রাগ ছিল প্রচণ্ড। মারতেন খুব। আমাকে বেতানোর দরকার হয় নি বটে, কিন্তু প্রচুর মার খেয়েছে আমার ছোট ভাই। পড়াশোনায় ছিল ভীষণ অমনোযোগী। জনাব হাফেজ আব্দুল কুদ্দুস ইসলামি জীবনযাপনের খুঁটিনাটি বিষয় অত্যন্ত চমৎকারভাবে পড়াতেন, পড়িয়েছেন আমাদের। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও  কৃতজ্ঞতা জানাই।

কিন্তু, তিনি এখন কী করছেন? পোড় খেতে খেতে বর্তমানে ছোট্ট একটা সার-বীজ-কীটনাশকের দোকান দিয়ে কোনোমতে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন। বয়স্ক নরম শরীর নিয়ে একটা বহু পুরনো বাইসাইকেলে যাতায়াতের কাজ সারেন, তাতে রিকশা/গাড়িভাড়াটা বাঁচে।

দ্বিতীয়জনকে নিয়ে কিছুদিন পূর্বে একটি লেখা পোস্ট করেছিলাম। তিনি আমার হাইস্কুলের বিএসসি স্যার জনাব অদ্বৈত কান্ত দাস। গণিত এবং বিজ্ঞান পড়াতেন। যখন পড়াতেন তখন মনে হতো স্বয়ং আইনস্টাইন বা নিউটন বা পিথাগোরাস ক্লাস নিচ্ছেন! এমন অস্বাভাবিক মেধাবী আর মনোমুগ্ধকর অগ্নিশিখা বিরল আমাদের সমাজবাস্তবতায়, যাঁকে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম— কিছু হতে হলে শিক্ষকই হতে হবে, আর কিছু নয়। অদ্বৈত স্যার দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছেন! এছাড়া সম্ভ্রম নিয়ে এদেশে জীবনযাপনের উপায়টা কী আছে একজন স্কুলশিক্ষকের?

শিক্ষক হবার বাসনা পোক্ত হয়ে মনে বসে যায় এমসি কলেজে অধ্যাপক মেঘনাদ সাহার সান্নিধ্যে এসে। অদ্বৈত স্যার অগ্নিশিখা হলে মেঘনাদ স্যারকে কী বলা যায়? এটোমিক রেডিয়েশন? এছাড়া আর কী বলবো! অসামান্য পাণ্ডিত্য আর চরম সততা— এই ছিল স্যারের মূলধন। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী স্যারের অতি কোমল, অতি স্নেহপ্রবণ মনটা চিনতে পারে নি। স্যারের থেকে সহস্র যোজন দূরে থাকলেই স্বস্তি পেতো। সাহস করে তাঁর কাছাকাছি গিয়েছি আমি এবং দেখেছি দয়ামায়ার এক শান্ত সমুদ্রকে, যা তাঁর কাছাকাছি না গেলে এ জীবনে জানা হতো না, দেখা হতো না। অনুধাবন করা যেতো না— কেন কঠিন খোলসের ভেতরেই থাকে মূল্যবান মুক্তো! স্যার একদিন অশ্রু ঝরিয়েছিলেন আমার সম্মুখেই— জীবনের যাবতীয় যন্ত্রণা, বঞ্চনার দহন তাঁর কঠিন খোলস থেকে বের করে দিয়েছিল কয়েক পলকের জন্যে। একজন পরম সৎ, অবিশ্বাস্য মেধাবী আর দায়িত্বপালনে অটল একজন শিক্ষককে কী দিয়েছে এই সমাজ-রাষ্ট্র? জীবনের নিরাপত্তা না, সম্মানটুকুও না!

চতুর্থজন অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুছ। তাঁকে নিয়েও কয়েক বছর পূর্বে (সম্ভবত ৮ বছর পূর্বে) লিখেছিলাম ছোট্ট একটি লেখা। অত্যন্ত কোমল আর মৃদু কন্ঠস্বর কিন্তু সুদৃঢ় চরিত্রের মানুষ তিনি। কর্মজীবনের প্রায় পুরোটা সময় অধ্যাপনা করেছেন। ছিলেন অর্থনীতির অবিকল্প শিক্ষক। স্যারের সাথে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়। যেহেতু সৎ জীবনযাপনই ছিল তাঁর আরাধ্য এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলেছেন, জীবনের সঞ্চয়ে কী কী আছে তা জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না।

নিজের শিক্ষকদের ব্যক্তিত্বে অনুপ্রাণিত আমিও এখন ক্ষুদ্র একজন শিক্ষক। আমার শিক্ষকদের জিজ্ঞেস না করেও নিজের ১৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে জানি— এদেশে ‘শিক্ষক’ প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন আছে লাখে লাখে ভাঁড় কিংবা দুলাভাইয়ের, যাদের সাথে তথাকথিত শিক্ষার্থী এবং সমাজপতিরা ইচ্ছামতো মস্করা করতে পারে।

শেষ করি রবীন্দ্রনাথের বাণী দিয়ে। তিনি পথের সঞ্চয়ে লিখেছেন, ‘ঘুরিয়া ফিরিয়া যেমন করিয়াই চলি না কেন শেষকালে এই অলঙ্ঘ্য সত্যে আসিয়া ঠেকিতেই হয় যে, শিক্ষকের দ্বারাই শিক্ষাবিধান হয়, প্রণালীর দ্বারা হয় না।’

এ সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থা এসব নিয়ে ভাববে না বলে পণ করেছে!

খালেদ রাজ্জাক : কবি, শিক্ষক।
০৫.১০.২০২৩

 

আরও পড়ুন-

ফুল নয়, হুল ফোটানোর কারখানা


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক