শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই  » «   লন্ডন মুসলিম সেন্টারে দুই শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফেইথ ইন এনভারনমেন্ট’ সামিট  » «   রোবটিক্স বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদের নেতৃত্বে কুইন মেরি ইউনভার্সিটি অব লন্ডনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাল্টিরোটর সোলার ড্রোন উদ্ভাবন  » «   লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির অফস্টেড রিপোর্টে ‘গুড’ গ্রেড অর্জন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস : ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা  » «   ব্যারিস্টার নাজির আহমদের “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন”নামে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও  সাংস্কৃতিক পরিষদের ২০২৫-২৬ পরিচালনা পর্ষদ গঠন  » «   গ্রেটার ফতেহপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সভা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত  » «   আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মিল আর গুজব রাজনীতি  » «   পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ডা. শফিকুর রহমান  » «   প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন  » «   শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

ভিপি ছরওয়ার : আমাদের তারুণ্যে  আলোর পাখি



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এক.

নতুন বছরের শুরুতে সপ্তাহ দিনের জন্য পারিবারিক কাজে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলাম। বহুজাতি ও ভাষার সম্মিলনের ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের আলোকিত অর্জনগুলো একজন প্রবাসী হিসাবে আমাকেও  গর্বিত করে। অল্প সময়ে এর অতি সামান্যও  দেখার সুযোগ হয়নি। তবে শুরু থেকে একটি উদ্দেশ্যে খুব স্থির ছিলাম- যেভাবেই হোক একজন ব্যক্তির সাথে দেখা করে আসতে হবে। খোদা আমার মনের কথা শুনেছেন এবং আশাও পূর্ণ করেছেন ।

আমাদের ছাত্র জীবনের অত্যন্ত আদর্শবান এবং দল- মত এর ঊর্ধ্বে  যিনি  তার মেধা, প্রজ্ঞা ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে সকলের জন্য আদর্শ  ছাত্রনেতা ছিলেন। যাকে আমরা শিক্ষাঙ্গণ সহ সামাজিক কাজেও অভিবাবক হিসাবে মনে করে তার পদ অনুসরণ ও সহযোগিতা নিয়ে চলতাম- তাকে অনেক দিন স্বচক্ষে দেখিনি। আমার মতো অনেকের স্বপ্ন নির্মাণের  মূখ্য  এই নায়ক  বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদ ১৯৯৫’র  স নির্বাচিত ভিপি ছরওয়ার আহমদ (ভিপি ছরওয়ার)। যিনি  স্বপরিবারে যুক্তরাজ্যে  লন্ডনে বাস করেন।

ছরওয়ার  আহমদের জন্ম  বিয়ানীবাজারের মোল্লাপুর গ্রামের একটি প্রগতিশীল পরিবারে। পরিবারটি কেবল শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত ও  সমাজসেবী  নয়,  ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে  এই পরিবার  ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধকালে এদেশীয় দালালদের সহযোগিতায় পাক বাহিনীর চরম নির্যাতনের শিকার হয় পুরো পরিবার।

৯০’র দশকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন অসাধারণ  সংগঠক হিসেবে তিনি সুখ্যাতি লাভ  করেন। এসময় কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন ছাত্রনেতা ছরওয়ার আহমদ। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে তিনি সুস্থতা লাভ করেন।

উল্লেখ্য যে, এ ঘটনায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন। এবং এঅবস্থায়  তিনি বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ১৯৯৫’র নির্বাচনে ভিপি পদে শিক্ষার্থীদের বিপুল ভোটে  জয়লাভ করেন। তিনি বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের ইতিহাসে সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত হওয়ায়  ছাত্রসমাজ সহ সকল শাখার মানুষ যেমন খুশী হয় তেমনি এবং ছাত্রসমাজের মধ্যে তিনি তুমুল জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত হন

২০০১সালে  তিনি যুক্তরাজ্য গমন করেন এবং সেখানকার বাঙালি কমিউনিটির নানান কর্মকান্ডে  অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে যান। কালের ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত সফলতার সাথে যুক্তরাজ্যস্থ খ্যাতিমান কমিউনিটি সংগঠন  বিয়ানীবাজার  জনকল্যাণ  সমিতির নির্বাচিত  সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

জীবনে তিনি কর্ম ও চিন্তায় আলোকিত একজন সফল ব্যক্তিত্ব। একজন সফল রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। যে কজন মানুষ তাদের কর্ম ও চিন্তায় আমার কাছে বিশেষ শ্রদ্ধাশীল তিনি তাদের অন্যতম ।

আলোচ্য নিবন্ধ বিশেষত: তাদের জন্য নিবেদিত যারা,  বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির জগতে তুখোড়নেতা বা আদর্শিক কর্মী। যাদের শ্লোগাণে  রাজপথ প্রকম্পিত হয় কিংবা বক্তৃতায় আন্দোলিত  জনহৃদয়ে গণঅধিকারের তূর্য নিনাদ প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এ নিবন্ধে মূলত  ছরওয়ার আহমদের ছাত্ররাজনীতিকালীন সময়ে  সমাজ চেতনার আলোকে একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগের কথাই বলবো, যা হতে পারে- বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি চর্চার পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণার উৎস।

যুক্তরাজ্যের চারদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে  ভিপি ছরওয়ার আহমদের  বাসায় ডিনার ছিল সফরকালের শেষ রাত্রে। আমার হাতে সময় একেবারেই ছিলনা, কিন্তু তাঁর সাথে সাক্ষাৎ এর লোভ কোনভাবেই সংবরণ  পারিনি; এদিকে যেকোনভাবে তাঁর বাসায় দুমুঠো ভাত খাওয়াতে  তাঁর প্রানান্ত আন্তরিকতা ছিল যেন আকাশচুম্বী। তাই মেজো মামার বাসায় একদফা ডিনার শেষ করে রাত বারোটায় তার বাসায় যাই। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ-এ  আপ্লুত হই। ক্ষণটি ছিল অসাধারণ।

দুই

রাজনৈতিকভাবে তাঁর সাথে খুব বেশী অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ না হলেও একসাথে কিছু কাজ করতে গিয়ে  তাঁর প্রতি অনেক অনুরাগী হয়ে যাই। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের ইতিহাস ভিত্তিক গ্রন্থ ‘প্রত্যাশা’ তিনি যৌথভাবে সম্পাদনা করেন। তিনি ‘প্রত্যাশা’ গ্রন্থের প্রকাশকও ।

বস্তুত  তিনি ঐ মহাবিদ্যালয়ের কেবল অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন, অন্যতম  উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী। প্রবাসে বসবাস করা সত্বেও উপরোক্ত  গ্রন্থ অনেকাংশে তাঁর অসামান্য আগ্রহ, শ্রম ও সত্যনিষ্ঠ পরিকল্পনায় এক অনন্য সৃষ্টি। যদিও আরো ব্যক্তি বিশেষের অবদান অনস্বীকার্য।

আমার সম্পাদিত  ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থ সম্পাদনায় তাঁর অনন্য উৎসাহ ও অবদান রয়েছে।

একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তাঁর বলিষ্ট সমাজচিন্তার ব্যাপকতা আমাকে মোহিত করে ২০০৯সালে। ‘প্রত্যাশা’ সম্পাদনার  কাজে একদিন সিলেট যাত্রাপথে তিনি ব্যক্ত করেন বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ইতিহাস। ভিপি ছরওয়ার আহমদ  বলেন, “বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রীদের বাড়িতে ভোটের ক্যাম্পেইনের সময় আমরা জানতে পারি, কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের উপস্থিতি কম হওয়ার নানা সমস্যার কথা। আমি ছাত্রীদের সমস্যাগুলো মনে ধারণ করি। মোটাদাগে তাদের কাছ থেকে যেগুলো জেনেছি তাহলো-    রাস্তাঘাটের করুণ দশা, যানবাহনের অপ্রতুলতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে ছাত্রীদের কলেজ থেকে বাড়ী না ফেরা পর্যন্ত অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা  ইত্যাদি । তখনই  মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, এ বিষয়ের একটি সুরাহা করতে হবে। বিয়ানীবাজারের তৎকালীন সামাজিক বাস্তবতায় একটি মহিলা কলেজ স্থাপনই ছিলো এর সঠিক সমাধান। তাই  এ বিষয়ে প্রথমে একান্ত চিন্তাশীল সহকর্মীদের অনুপ্রাণিত করি এবং ক্রমে বিষয়টি বিশিষ্ট দানশীল সমাজসেবীগণসহ অন্যদের মাঝে বিস্তারের উদ্যোগ নেই। আমাদের উদ্যোগে ক্রমে অনেকেই সম্পৃক্ত হোন এবং একটি সময় আমাদের উদ্যোগ সুপরিকল্পিতভাবে আজকের বাস্তবতায় উপনীত হয়।”

এসময় তিনি  বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় জমি ও অর্থদানে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ও  সুপরামর্শদানকারীগণসহ অনেকের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বয়সে অনেক ছোট এই আমি,  অগ্রজ  একজন  তরুণ  ছাত্রনেতার আদর্শিক কর্মোদ্যোগের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠি এবং একই সাথে নিজেও অনুপ্রাণিত হই। আজও বিশ্বাস করি, ছাত্ররাজনীতি হচ্ছে কর্মদ্যোগী ও উদ্যোক্তা তরুণসমাজ সৃষ্টির আতুড়ঘর। অথচ  আমরা ঠিক এর উল্টো পথে হাটছি। আমরা মনে করি কেবলমাত্র থানা সদরে বা শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাসে জোর গলায় মিছিল দেওয়া, বক্তৃতায় দাড়িয়ে আলোচ্য বিষয়ের উপরে  আলোকপাত ব্যতীত একে একে  নেতাদের সম্বোধনে কোনক্রমে নির্ধারিত সময় নির্বাহ করে ‘নেতাদের কাছের লোক’ হিসেবে নিজেকে  বিশ্বস্ত করে তোলা কিংবা বক্তৃতায় উদ্দ্যেশ্যবিহীন ইতিহাস ও কবিতার ফুলঝুরি ছড়িয়ে নিজের স্পেশালিটি অর্জন করা। আমি উদ্যোগবিহীন  অনেক নামি ছাত্রনেতা দেখেছি, যারা নিজের গ্রামেও কোনরুপ উন্নয়নমূলক সমাজচিন্তার ধার ধারেনা কিংবা কোন ক্ষেত্রে নূন্যতম অবদান নেই। যাদের নিজস্ব কোন উদ্যোগ নেই, বাস্তবিক কোন চিন্তা নেই, তাদের সমূহ কর্মকান্ডে তাঁর অনুসারীদের অনুপ্রাণিত হওয়ার নামমাত্র সুযোগই নেই তারাও ‘বিশিষ্ট নেতা’। কেবল উপরওয়ালা নেতার ‘কাছের লোক’ বলে। তাই যখন এরকম জ্ঞানহীন অপদার্থ নেতাদের উপর থেকে বড়ভাইয়ের কোন স্নেহসুলভ হাত বিলীন হয়, তখন তাদের অস্তিত্ব অনুধাবনে অনুবিক্ষণ যন্ত্র লাগে। বাস্তবতা হলো – তারা সহজেই হারিয়ে যায়। মানুষের ঘৃণায় আস্তাকুড়ে তারা আপনা আপনি চলে যায়।

এদের অনেকে আবার সুযোগে সংগঠনের নানা পর্যায়ে সভাপতি বা সেক্রেটারীও হন বা কখনও কখনও ভিপি, জিএসও হয়ে যায়। সুতরাং, সমাজ বদলে সুচিন্তিত আদর্শিক চিন্তাধারার অভিপ্রায়ই যখন রাজনীতির মূখ্য দিক, তখন ছাত্ররাজনীতি হোক একজন তরুণকে নতুন ক্রিয়েটিভ ও পজিটিভ  উদ্যোমে উদ্যোক্তা  হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ্য ক্ষেত্র।

এক্ষেত্রে ভিপি ছরওয়ার আহমদ একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্ররাজনীতির সাংগঠনিক পরিমণ্ডলের বাইরেও   ছিলেন একজন সফল সংগঠক।  অসংখ্য তরুণদের মাঝে তার আদর্শিক কাজের মাধ্যমে ছরওয়ার আহমদ একজন সফল স্বপ্নচারীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সমাজঘনিষ্ট সফল উদ্যমী উদ্যোক্তা ।

ছাত্ররাজনীতির পরিমণ্ডলে  যে কোন নেতাকর্মীর  সমাজ উন্নয়নের  উদ্যোক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশের ক্ষেত্রে বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নি:সন্দেহে হতে পারে একটি অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত।তিন

বিয়ানীবাজার ক্যান্সার  ও জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধনলগ্নে যুক্তরাজ্য থেকে বিয়ানীবাজারে আগমন ঘটে এর প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তাগণের। এসময় এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম  প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাজ্যস্থ বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ সমিতির  সভাপতি  সাব উদ্দিন  ও সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার আহমদের সাথে হাসপাতাল নিয়ে তাদের  নানা  ধরণের  কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাই।  এসময় এ হাসপাতালের উদ্যোগ, এর ভবিষ্যত লক্ষ্য, উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতাগণের  আন্তরিক পরিকল্পনা  ও কাজ দেখে আমি অতিশয় আনন্দিত হই। উদ্যোক্তাদের সকলেই ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল। আমি নির্দ্বিধায় বলবো, অনন্য দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই দেশের মানুষের সেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার ক্যান্সার  ও জেনারেল হাসপাতাল অচিরেই দেশে-বিদেশে  সুনাম কুড়াতে সক্ষম হবে। হাসপাতালের সার্ভিস সংক্রান্ত বিষয়ে বিতর্কের অনেকাংশই যুক্তরাজ্যের কমিউনিটি রাজনীতির কুটচালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।  তাছাড়াও এটা বলতে পারি যে, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার  ও জেনারেল হাসপাতাল লক্ষ্যপাণে যাত্রাপথে ট্রানজিশন সময় অতিবাহিত করছে। সর্বদা আমি এ  অনন্য মহতী উদ্যোগের সফলতা কামনা করি।

এই হাসপাতালের  উদ্বোধনকালে যুক্তরাজ্য বিয়ানীবাজার জনকল্যাণ  সমিতির সাধারণ  সম্পাদক হিসেবে ছরওয়ার আহমদের প্রতি এ প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সম্মানবোধ ছিল বিনম্র ও উচুমানের । এখানেও আমি এমন একজন উদ্যোক্তার সন্ধান পাই, যিনি সংগঠনকে গতানুগতিক ধারার কার্যক্রমের বৃত্ত থেকে বের করে- প্রকৃতভাবে সমাজকল্যাণে দৃষ্টান্তমূলক  কাজের দিকে ধাবিত করতে পেরেছিলেন।

চার

ছরওয়ার ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়  ১৯৯৭ সালের এক বিশেষ দিনে। ছাত্র সংসদ’৯৭  কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক উৎসবে বিষয়ভিত্তিক উপস্থিত বক্তৃতায় ৫৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে সর্বশেষ বক্তা হিসেবে আমি অংশগ্রহণ করি। কলেজের অনেক নামি ছাত্রনেতা কিংবা মেধাবীদের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও আমি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করি। আমার বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বন্ঠন চুক্তি’। অসংখ্য ‍শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে  করতালিতে আমি শুভেচ্ছাসিক্ত হই। কিছুক্ষণ পর ছরওয়ার ভাই আমাকে একান্তে ডেকে কুশলাদি  জিজ্ঞেস করলেন । কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মীসভাগুলোতে তার বক্তৃতাগুলো ছিল অনন্য। সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের সর্বদা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মৌলিক চেতনায় আদর্শিক কর্মী হওয়ার তাগিদ দান করতেন। কর্মীদের তিনি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ, সৃজনশীলতা চর্চায় উদ্যমী ও উদ্যাক্তা হিসাবে সমাজের উন্নয়নের কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁর নিজের আলোকিত ধ্যান ধারণাগুলোকেও কর্মীসভার বক্তৃতায় উদ্ভাসিত করতেন। কর্মীসভার বক্তা হিসেবে তিনি অসাধারণ ছিলেন। ৯০’এর দশকে বাংলার ছাত্র রাজনীতিতে অনেকেই তার মতো আলোকিত ছিলো। সংগঠনের নেতাকর্মীদের তখনও স্থানীয় এমপি বা মন্ত্রী, কিংবা বৃহৎ নেতাদের বাধ্যগত  মোসাহেবি বা স্বার্থান্ধ পদলেহনকারী হওয়ার প্রবণতা ছিল অনুপস্থিত। তাই নেতাদের স্বতন্ত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই ছিলো তাদের জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের বীজমন্ত্র। যা বর্তমান সময়ে অনুপস্থিত।

বিয়ানীবাজারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭ গ্রুপে বিভক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্কের অবকাশে ক’দিন পূর্বে একজন আমাকে প্রশ্ন করেন- মেধাবী ছাত্রনেতার বৈশিষ্ট্য কি? আমি হয়তো ভুল বলেছি, বলেছিলাম- ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজনীতির চর্চায় তাকে হতে হবে বিশেষ গুণের অধিকারী- সততা, উদ্যম, উদ্যোগ, ন্যায়পরায়নতা, প্রতিবাদ ও স্পষ্টবাদিতা থাকতে হবে।’ বস্তুত আজকের ছাত্রসমাজের মধ্যে সার্বক্ষণিক মিছিলের সহযাত্রী কিংবা শ্লোগাণ মাষ্টার হিসেবে খ্যাত তুলা রাশির জাতকের অভাব নেই, তবে উল্লেখিত বিশেষ গুণধারীদের অভাব প্রচন্ড।

অন্যদিকে এটা নির্দ্বিধায় বলব যে, বর্তমানে উপরোক্ত গুনাবলীসমৃদ্ধ ছাত্রনেতারা রাজনীতি ক্ষেত্রে ততটুকু সফল হচ্ছে না, যতটুকু এর বিপরীত মেরুর বেলায় ঘটছে।  ৯০ এর দশকের সাথে ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ের মধ্যে এটাই ফারাক। এ পরিস্থিতির সমালোচনার ক্ষেত্র ব্যাপক। তা এখানে আলোচনা  করছি না, তবে এ পরিস্থিতির উত্তরণে মেধাবী ছাত্রনেতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হওয়ার তাগিদ অনুভব করছি।

পাঁচ.

ডিনারে তার বাসায় আমার প্রাণের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে।  সেখানে উপস্থিত হন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম শামিম, যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ, কবি সাংবাদিক ও বহুল জনপ্রিয় অনলাইন টিভি ও পোর্টাল ৫২ বাংলা টিভি’র  সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি, যুক্তরাষ্ট্রস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, সমাজসেবী বদরুল হোসেন খাঁন, যুক্তরাজ্যস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগনেতা সাহাব উদ্দিন ।

তাদের উপস্থিতি আমাকে বিমোহিত করে, না হলে এ যাত্রা তাদের সাথে সাক্ষাতের কোন সুযোগই ছিলনা।

আমার সাথে ছিলেন আমার অত্যন্ত স্নেহাশিষ যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক মেধাবীনেতা জেলায়েত হোসেন লিটন ও সমাজসেবী দেলোয়ার হোসেন। লিটনের প্রতি অনিশেষ কৃতজ্ঞতা এজন্য যে, সে অল্প সময়ের নোটিশে কাজ থেকে ঘরে ফিরে প্রায় দুইশ মাইল দূর থেকে আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছে। একটা সময় তার সাথে আমার খুবই আন্তরিকতা ছিলো, এ ঘটনায় তা আরো বাড়িয়ে দিল।

ডিনারের শেষে আড্ডায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শুভেচ্ছা গিফট পেলাম আমার প্রিয় ভাই কবি, সাংবাদিক আনোয়ারুল  ইসলাম  অভি ভাইয়ের কাছ থেকে। তিনি আমাকে অনেকগুলো বই দান করলেন। আরো আকর্ষনীয় বিষয় হলো- ছরওয়ার ভাইয়ের সাথে শেষ দৃশ্যের কুস্তি! অনেক কুস্তি শেষে নাছোড় বান্দার মতো তিনি পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন ব্রিটিশ পাউন্ড। শ্রদ্ধেয় ছরওয়ার ভাইয়ের এ দান আমার কাছে থাকবে অনন্তকাল।  কারণ, আমার আইডলের দেওয়া উপহার, এ  এক অনন্য  সম্মানের।

ছরওয়ার  হোসেন , লেখক ,  নিউ ইয়র্ক  প্রতিনিধি;৫২বাংলা ও স্যোশাল এক্টিভিস্ট। নিউ ইয়র্ক , যুক্তরাষ্ট্র ।

 

 

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন