পূর্ব লন্ডনের সুপরিচিত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক , সমাজকর্মী, রাজনৈতিক,লেখক, গীতিকার আইনজীবী আব্দুল আজিজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি বার্ধক্য কারণে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন, গত ২১ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের একটি কেয়ারহোমে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহির রাজিউন।
মরহুম আজিজ ছিলেন আদর্শবান, ন্যায়পরায়ণ একজন আইনজীবী এবং সমাজসেবক।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনকালীন সময়ে প্রবাসে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ সংগঠক। লাখো বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে তাঁর লেখা জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে ২টি রেকর্ড বের করে এইচ এমভি ও ভারতের সুরেলা প্রোডাকশন্স। বিশেষ করে তাঁর লেখা গান – বাঙালি যত জাগোরে আবার, নেই কোন ভয় বাংলার হবে জয়….।এবং আয়রে সবাই আজাদির নায়ে মুজিব কাণ্ডারি।…
উস্তাদ হরিদাস গাঙ্গুলীর সুর ও কণ্ঠে গান ২টি সে সময় ছিলো বাঙালির ঘরে ঘরে এক শক্তিশালী মন্ত্রের মতো। হাজার হাজার রেকর্ড বিক্রি করে মুক্তিযুদ্ধ তহবিল সংগ্রহ করা হয়।
ষাট, সত্তর ও আশির দশকে দেশ থেকে আগত তরুণ ও যুবকদের শিক্ষার ক্ষেত্রে, সামাজিক আন্দোলনে সংগঠিত করা, ইংরেজি শিক্ষা ও দোভাষী হিসাবে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসসহ একজন আইনজীবী হিসাবে কমিউনিটির জন্য অসাধারণ ভূমিকা রাখেন।
বাংলা ভাষায় লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ইংরেজি মূলধারার দৈনিকগুলোতে নিয়মিত ফিচার, প্রবন্ধ, কবিতা লিখতেন।
আব্দুল আজিজ কনজারভেটিভ পার্টির লিডার মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী থাকা কালীন সময় পর্যন্ত তিনি লেডি থ্যাচারের অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসাবে পার্টির হয়ে কাজ করেছেন।
তিনি ১৩৪৩ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার দেবারাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেটের ঢাকাদদক্ষিণ হাইস্কুল থেকে এসএস সি, মদনমোহন কলেজ থেকে ডিগ্রি ও চিটাগাং ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ সমাপ্তি করে উচ্চ শিক্ষার জন্য আইন বিষয়ে পড়াশুনার জন্য ১৯৬২ সালে লন্ডন আসেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকে এলাকায় একজন দানশীল ও সমাজ কর্মী হিসাবে স্কুল, কলেজ, রাস্তা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে এলাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মদনমোহন কলেজে পড়াকালীন সময়ে তিনি সেই কলেজের একজন দাতা সহ দেবারাই প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা ও নানা প্রতিষ্ঠানের আজীবন একজন সম্মানীয় ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত। তাঁর সারা জীবনের আয়ের বেশির ভাগ অর্থ মানব কল্যাণে বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থা, দেশের গরীবলোক ও বিভিন্ন গরিব দেশ্যগুলোতে দান করে গেছেন ।
আগামী ২৪ অক্টোবর সোমবার ইস্ট লন্ডন মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং গার্ডেন অব পিসে তাঁকে সমাহিত করা হবে।