শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «   হ্যাকনি সাউথ ও শর্ডিচ আসনে এমপি প্রার্থী শাহেদ হোসাইন  » «   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র সাথে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের মতবিনিময়  » «   মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

গোলাম কিবরিয়া  : সংগ্রামেই যিনি সাফল্যের উচ্চশিখরে



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সিলেট শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া তাপাদার মারা গেছেন । শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে সিলেটের আল-হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন । ১৭ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজারের ছোটদেশ গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় ।তিনি দীর্ঘদিন থেকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগছিলেন ।

শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়াম্যান ছাড়াও একজন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টানলেন গোলাম কিবরিয়া গত শুক্রবার ।

 

কবে কখন সাল-ক্ষনটা মনেই নেই। মনে আছে শুধু স্কুল ছাত্রদের লম্বা মিছিলের কথা এবং মিছিল শেষে একটা বক্তৃতার কথা।বক্তৃতার ভাষা কি ছিল, তাও স্মরণ করতে পারবো না, শুধু মনে আছে শ্লোগান’। আমার মত মিছিলের কোন ছাত্রই হয়ত জানত না সেদিন। কি-ই মিছিলের শব্দগুলো— ‘সরকারের পতন চাই কিংব ‘ফাঁসি চাই’ জাতিয় কিছু। গগণ বিদারী আওয়াজে আমিও সম্ভবত শ্লোগান দিয়েছি সেদিন। সেই মিছিল সেই বক্তৃতা  সে এক ভিন্ন উপাখ্যান।ক্রমে বয়স বেড়েছে, সমাজ-রাজনীতিতে আমিও কিছুটা পরিপক্ষ হয়েছি, তখন জেনেছি প্রতিবাদের উচ্চারণ ছিল সেখানে: বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে হয়ত সেই শ্লোগান, কিন্তু মিছিল শেষের একজন স্কুল ছাত্রের বক্তৃতা এবং বাচনভঙ্গিটা এখনও চোখে ভাসে। এরপর কখন তাঁর (ঐ স্কুল ছাত্র) সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল তা মনে থাকার কথা নয়। কারন এরপর কোন দিনক্ষণ নেই, তাঁর সাথে আমি হেঁটেছি দীর্ঘ পথ বহু বহু দিন, বছরের পর বছর।রাজনীতির মাঠেই তিনি ছিলেন আমার আমাদের অনেক অনেক সহযোদ্ধার পাইওনিয়ার । স্রোতের বিপরীতে চলা একটা সংগঠনের প্রদীপ জ্বালানো মানুষ।

মধ্যবিত্ত পরিবারের শত সমস্যার জটের মাঝে বেড়ে উঠা এই মানুষটার সেই শৈশবেই রাজপথ তাঁকে টেনেছিলো। উনসত্তুরের টলটলায়মান পূর্বপাকিস্থান তাঁকে টেনে নিয়ে এনেছিলো রাজপথে । সেই উত্তাল সময়ে ছোটদেশ প্রাইমারী স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র থাকাকালীন মিছিলে যোগ দিতেন তিনি, আমাদের প্রীয় অগ্রজ এবং তাঁরও অগ্রজ আব্দুল হাছিব (প্রয়াত ন্যাপ নেতা) আব্দুল হান্নান (প্রয়াত), তবারক হোসেন (আইনজীবী), আব্দুল মালিক ফারুক (মুক্তিযোদ্ধা) আব্দুল আজীজ (অকাল প্রয়াত), আজিজুর রহমান সাবু (নিউইয়র্ক প্রবাসী), ছালেহ আহমদ, একলাছ উদ্দিনের নেতৃত্বের ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলে, সংযুক্ত হতেন বিয়ানীবাজারে গিয়ে। রাজপথের এই মিছিলেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বীজ বুপিত হয় । তারপর তির তির করে শৈশব থেকে কৈশোর —– স্বাধীনতার সংগ্রামের উচ্চকিত শ্লোগানে ক্রমেই তাঁর মননে-চেতনায় জায়গা করে নেয় শ্রেনী বৈষম্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাম্য আর মুক্তির এক ভিন্নতর আকাংখা।

স্বাধীন বাংলাদেশের কিশোর গোলাম কিবরিয়া সংগ্রামকেই সাথে নিয়ে বেড়ে উঠা শুরু করেছিলেন।পঞ্চম শ্রেনীতে রাজনীতির পাঠ নেয়া কিবরিয়া ক্রমেই তার অগ্রজদের পথ অনুসরণ করেন।  অষ্টম শ্রেনীতে পড়া কালিন সময় রাজনীতির জন্য কোন বয়সই না হয়ত । কিন্তু মিছিলের মানুষগুলো তাঁকে টানত। খেটে-খাওয়া মানুষের পক্ষে শ্লোগান তোলা মিছিলের মানুষগুলো তাকে হয়ত জাগিয়ে তোলত, তাইতো তিনি মিছিলের সাথী হয়েছিলেন সেই থেকেই।যে সংগঠনটি নিয়ে আমার মত অনেকেই গর্ব করি, সেই গর্বের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের পিএইচ জি হাইস্কুল শাখার সাধারন সম্পাদক হয়ে উঠেন তিনি ১৯৭১ সালেই, অর্থাৎ অষ্টম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে।সেই থেকে ছাত্র ইউনিয়নই তাঁকে পথ দেখিয়েছে। সংগ্রামেই যেন সাফল্য— আর সেজন্যই তার ব্যক্তিগত জীবনও হয়ে উঠে সংগ্রামেরই একটা অংশ। আর্থিক টানাপোড়নের মাঝে ছেদ ধরে শিক্ষায়, কিন্তু বিপ্লবি চেতনায় তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী।কৈশোর যেখানে তাঁকে সংগ্রামী হতে দীক্ষা দিয়েছে, সেখানে তিনি দমে যেতে পারেন না। তাইতো দুবছরের শিক্ষা জীবনে ছেদ পড়লেও কোনভাবেই নিজেকে সাময়িক দুর্যোগ সময়ের কাছে পরাজিত হতে দেন নি, এমনকি রাজনীতির গড্ডালিকায়ও মিশে যাননি তিনি সেসময় । এমনকি পোষ্ট অফিসের পিয়নের চাকুরী থেকে শুরু করে ব্যাংকের চাকুরী, কোনখানেই শোষন মুক্তির দীক্ষা থেকে তিনি সরে দাঁড়ান নি।

আশির দশকের শুরুতে আমি যখন বিয়ানীবাজারের কলেজের ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী, স্নাতক প্রথম বর্ষে আমিই একমাত্র ছাত্র ইউনিয়ন করি। তখন একঝাঁক তরুন ছাত্র ইউনিয়ন নামক সংগঠনটিতে যেন প্রানের ছোয়া দিল । মরা গাঙ্গে বান ঢাকল। অসংখ্য নাম– বর্তমানে আমেরীকা প্রবাসী সালেহ আহমদ মনিয়া, গোলাম মর্তুজা, মাহবুব আলম, মোছাব্বির আলী, মিজানুর রহমান, কামাল উদ্দিন সালেহ বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ, শিক্ষক নুরুল আলম সেলিম, যুক্তরাজ্যে অভিবাসী মুজিবুর রহমান কুনু, মুহিবুর রহমান এনু  আরও অসংখ্য নাম।কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিলে বিয়ানীবাজারে আবারও উনসত্তুর-একাত্তুরের মত ছাত্র ইউনিয়ন জেগে উঠল। বিয়ানীবাজারে  বৃহত্তর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পাশাপাশি জায়গা করে নিলো।

৮৩ সালে স্নাকোত্তর শেষে গোলাম কিবরিয়া আবার বিয়ানীবজারে হাল ধরেন ছাত্র ইউনিয়নের । কলেজের বাইরে শিক্ষকতার পাশাপাশি গোলাম কিবরিয়াই ছিলেন আমাদের নেতা।বর্তমান কমিউনিস্ট নেতা ফরিদ আহমদ নানু’র পর গোলাম কিবরিয়া আবারও ছাত্র ইউনিয়নের দায়ীত্ব নেন। এবং বলতে গেলে  একধরনের জোর করেই ১৯৮৬ সালে তাঁর পরবর্তীতে ছাত্র ইউনিয়নের উপজেলায় শাখার সভাপতির দায়ীত্ব দেয়া হয় আমাকে । এবং তা মূলত: তাঁরই কারণে। তাঁর কাছ থেকে নেতৃত্ব আসে আমার কাছে, আমাদের কাছে । বলতে হবে ছাত্র ইউনিয়নের বিয়ানীবাজারে তখন এক স্বর্ণালী সময়।অন্তত আমরা তা-ই মনে করি । এসময়ে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিতাম আমরা আর গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এই নেতাদের নেতা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি’র (সিপিবি) তাঁর নেতৃত্বে বিকশিত হতে থাকে বিয়ানীবাজারে।সেই যে  ‘সরকারের পতন চাই” কিংবা ফাঁসী চাই’র মিছিল পরবর্তী বক্তৃতা শোনেছিলাম, তাঁর সেই বক্তৃতার প্রতিধ্বনিই শোনেছি বছরের পর পর বছর । সেই বক্তৃতার আগামাথা কিছুই বুঝি নি সেদিন, কিন্তু পরবর্তীতে আামি নই, বিয়ানীজারের জনগণ দেখেছে কি এক সম্মোহনী আহবান থাকতো গোলাম কিবরিয়ার বক্তৃতায়। রাজনীতির মাঠে একটা ছোট্ট সংগঠনের প্রতিনিধি হয়েও কিভাবে গোলাম কিবরিয়া হয়ে উঠতেন সিদ্ধান্ত বিনির্মানের প্রধান মানুষ । এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমরা ছাত্র রাজনীতির মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছি, তখন গনসংগঠনগুলোতে গোলাম কিবরিয়া হয়ে উঠেছিলেন এক অনস্বিকার্য নাম। রাজনীতির মাঠে তিনি বাগ্নি এক বক্তা; যুক্তি আর প্রজ্ঞায় যে কোন আলোচনাকে তার মাঝেই কেন্দ্রীভূত করার এক অভিনব ক্ষমতা রাখতেন তিনি।আর তাইতো বিয়ানীবাজারের যে কোন রাজনৈতিক এমনকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গোলাম কিবরিয়ার নাম হয়ে উঠেছিল অপরিহার্য ।

তাঁরই উদ্যোগে সতীর্থ আব্দুস সালাম (শিক্ষক), তবারক হোসেন (প্রয়াত), ফজলুল হক (কবি), আব্দুল আজিজ( প্রয়াত), আব্দুল মালিক ফারুক( মুক্তিযোদ্ধা), তমাল সেন (শিক্ষক)সহ অনেক অগ্রজদের সাথে নিয়ে যুব ইউনিয়ন, উদীচী, খেলাঘর প্রভৃতি সংগঠনগুলো মিলে একটা বাম বলয় সৃস্ঠি হয় তখন।এবং সত্যি কথা বলতে কি, একাত্তুর পরবর্তী দীর্ঘ এক দশক পর বিয়ানীবাজারে বামদের উত্তান হয় এসময়েই।

সেসময়ই প্রথম কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে ঐতিহাসিক নানকার স্মৃতি রক্ষার জন্য স্মৃতি সৌধ নির্মানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আজকের সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদও সেসময় এতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। নানকার আন্দোলনের ঐতিহাসিক শানেশ্বর গ্রামের মানুষ আর প্রবীনদের নিয়ে আমরা জায়গা নির্ধারন করতে সক্ষম হই সেসময় । স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয ১৯৮৮ সালের ২৪ আগষ্ট।এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমরেড বারীন দত্ত, কমরেড অজয় ভট্টাচার্য । রাজনীতির দুঃখজনক  পটপরিবর্তনে স্মৃতিসৌধ নির্মান প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতা পেলেও অবশেষে তরুনদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের হাত ধরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

রক্তক্ষয়ী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সফল সমাপ্তির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আর গণতান্ত্রিক ঐক্যের শ্লোগান নিয়ে ১৯৯১ সালে নির্বাচনমুখী সারা দেশ।আওয়ামীলীগসহ বামদলগুলো যখন নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোটের বিপরীতে লড়তে বিভিন্ন জায়গায় আসন  ভাগাভাগি করছে, তখন অনেক টানাপোড়ন শেষে নুরুল ইসলাম নাহিদ সিপিবি’র হয়ে ঐক্যের নির্বাচনে প্রার্থী হন। এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সংখ্যাগরিষ্ট নেতা-কর্মী-সমর্থক নাহিদের হয়ে কাজ করেছেন, শ্রম দিয়েছেন।আওয়ামীলীগের আমার এক শ্রদ্ধেয় ভাই প্রায়ই কমিউনিস্টকে বলতেন তোমাদের ”মাত্র পাঁচ কমিউনিস্টে”র পার্টি;  অথচ বিয়ানীবাজারে তখন গোলাম কিবরিয়াই ছিলেন এ নির্বাচন ম্যাকানিজমের অন্যতম প্রধান মানুষ । দুঃখজনকভাবে এ নির্বাচনের ফলাফল ঐক্যের পক্ষে আসে নি। আমার স্পষ্ট মনে আছে পরাজিত হয়ে সাংস্কৃতিক ক্লাবের সম্মুখে নুরুল ইসলাম নাহিদ বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার বেড়ে ধান খাইছে’।শুধু তাই না, সেসময় বাংলাদেশের একটা জনপ্রিয় পত্রিকা আওয়ামী ঘরানার দৈনিক খবরে খায়রুল আমীন মন্জুর রিপোর্টেও নির্বাচনে নাহিদ কেন হেরেছিলেন, তা উঠে এসেছিলো। সে এক ভিন্ন ইতিহাস। যদিও নাহিদ এ ‘বেড়া’ ভেদ করতে পেরেছেন শেষ-মেষ।এবং এখনও দাপটের সাথেই আছেন আওয়ামী লীগে । সহজ কথা বলতে কি, গোলাম কিবরিয়া ছায়ার মতই ছিলেন নাহিদের পাশাপশি।

শিক্ষকতা পেশায় থেকেও সমাজ আর রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ছিল প্রবল, একথাটি বিয়ানীবাজারের কেউ কেউ ভিন্ন অর্থে দেখতে পারেন যদিও, তবুও বাস্তবতা হল তা-ই। গোলাম কিবরিয়ার রাজনীতির মানুষ।নতুন কিছুর  জন্য তাঁকে সংগ্রামে থাকতেই দেখেছি আমরা।বিষয়টা  শুধুই অধ্যাবসায়ের নয়, সমাজ থেকে শিক্ষা নেয়ার, শিখে তারপর এসমাজকে শিক্ষা দেয়া তিনি শিখেছেন রাজনীতি থেকেই। শোষন মুক্তির সেই শ্লোগান থেকেই । অতএব তিনি রাজনীতিরই মানুষ। কেউ স্বীকার করুক কিংবা না করুক, এমনকি গোলাম কিবরিয়াও যদি অস্বীকার করেন, তবুও আমি বলব, শৈশব- কৈশোর-যৌবনের গোলাম কিবরিয়া শ্রেণী বৈষম্যের বিপরীতে দাঁড়ানো মানুষ, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপরীতে সংগ্রাম করা মানুষ। শ্রেনী সংগ্রামের চেতনায় বেড়ে উঠা যে যৌবন, সে জীবন-যৌবনের সাথে তিনি সাময়িক আপোষ করতে পারেন, তিনি কোনভাবেই সরে আসতে পারেন না। যা কিছু তার হাতের মুঠোয় তিনি পেয়েছেন, সেই সংগ্রামের শিক্ষা, এমনকি জাতীয় রাজনীতির প্রভাবক শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও সেই সাহস, সেই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি এগিয়েছেন— সে প্রজ্ঞার কারনেই তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের নীতি নির্ধারনের জায়গায় । তাঁর সংগ্রামই তাঁকে বসিয়েছে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।

সময়ে সময়ে জল গড়িয়েছে অনেক। রাজনীতিতে পরিবর্তনও এসেছে অনেক। গোলাম কিবরিয়াও আগের সেই রাজনৈতিক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে নেই।কিন্তু তিনি কি বিশ্বাস হারিয়েছেন সেই সমাজ বিপ্লবে, এ প্রশ্নটি আমাকেও বিদ্ধ করে।আমদের প্রত্যেকের জীবনেই গোঁধূলী আসে। কিবরিয়াও এখন সেই বিকেলে বসে অতীত নিয়ে হাঁটছেন। সত্তর-আশি-নব্বই দশকের টগবগে যে মানুষ গণমূখী শিক্ষার অধিকার নিয়ে রাজপথ কাঁপাতেন, সেই গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশের শিক্ষার নীতি নির্ধারনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন হয়ে অবসর নিয়েছেন। আজ তাঁকে আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় গণমূখী শিক্ষার সেই শ্লোগানতো এখন্ও উচ্চারিত হচ্ছে তাঁর একসময়ের উত্তরসূরীদের কাছ থেকে । যৌবনের উত্তাল তাপে সংগ্রামে-আন্দোলনে যে শিক্ষার দাবী উচ্চারণ তিনি করেছিলেন, শিক্ষাকে কি সেই পণ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছেন তিনি ? না পারেন নি ।আমি এ লেখাটি যখন লিখছি, তখনও মনে হয়েছে গোলাম কিবরিয়া জীবনের গোঁধূলী বেলায় দাঁড়িয়ে সেই উচ্চারনের সাথেই থাকবেন তিনি, সংগ্রামে-আন্দোলনে শরীক তারুণ্যের অনুরণন হয়েই তিনি ধ্বণিত হবেন আগামীর বিয়ানীবাজার তথা এ অঞ্চলে, যেমন এখনও আমাদের কানে প্রতিধ্বণিত হন বিপ্লবীরা; তারাপদ ভট্টাচার্য, কমরেড অজয় ভট্টাচার্য, হাজী ছইদ আলী, অধ্যক্ষ ইমদাদুর রহমান ।

সমাজতন্ত্রের অভিপ্সায় লড়েছিলেন কিবরিয়া সেই অতীতে । সমাজ বিপ্লবের অগ্রসৈনিক হয়েই তিনি এ সমাজটাকে পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন এক সময়, পরবর্তীতে রাজপথ তিনি ছেড়েছিলেন, রাষ্ট্রের মুল কাঠামোর আষ্টেপৃষ্টে ছিলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে  প্রভাবক শক্তি হিসেবে তিনি কাজ করেছেন, দীর্ঘ দিন। ছিলেন তিনি সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান,  সিলেট মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছেন ঐ শিক্ষাবিদ । কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন কোনদিকে মোড় নিয়েছে ?  বাংলাদেশ কি একটি গণমূখী শিক্ষা প্রনয়ণ করতে পেরেছে ? উত্তর যদি না হয়, তাহলে বলতেই হবে প্রচলিত সমাজ আর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ প্রত্যাশাটুকু যে আমরা করতেই পারি না, তা একজন গোলাম কিবরিয়াও হয়ত অস্বীকার করতে পারবেন না। তাই গোলাম কিবরিয়া তাঁর জীবনের শেষ বেলায় পেছনের দিকে চেয়ে কি ভাবেন জানি না, তবে তাঁর একসময়ের সতীর্থ হিসেবে আমরা এখনও বিশ্বাস রাখি, শেষ বেলায় এসে সেই বিশ্বাস আর সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষটি আবারও জেগে উঠবেন——আবারও যেন দেখি সেই বাগ্নিতায় তাঁর শাণিত কথাগুলো উদ্বুদ্ধ করছে তরুণদের, সাধারণ মানুষদের , যেখান থেকে উঠে আসবে সেই চেতনার কিছু প্রাণ, বৈরী সমাজের বিপরীতে দাঁড়াবে তাঁরা, ছিনিয়ে আনতে নতুন সূর্য ।

এ কে এম গোলাম কিবরিয়ায় জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে একটা বই প্রকাশিত হয় বছর খানেক আগে । এ লেখাটা সেই বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে ।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক