মুসলমানদের জন্য দুটি দিন উৎসব এবং ইবাদত হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।যার মধ্যে একটি ঈদুল ফিতর আর অন্যটি ঈদুল আযহা।ফলে বিশ্বের সকল দেশে ঈদ উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সম্মিলন ঘটে।এ সম্মিলনে থাকেনা কোন ভেদাভেদ।রাজা-প্রজা,ধনী ও গরীব সকলকে সমবেত হতে হন এক কাতারে।ঐক্য,সৌহাদ্য ও ভ্রাতৃত্ব সু-সংহত হয় পবিত্র এই এ দুটি দিনে।এই দিন থাকে না কোন হিংসা এবং বিদ্বেষ।স্বর্গীয় সুখ ও আনন্দ বিরাজ করে মানুষের মাঝে।ঈদ আমাদের জন্য জাতীয় উৎসব হলেও স্থানীয় কিছু রীতিনীতি চলমান রয়েছে।ঈদের আনন্দ ভাগাভগি করতে কিছু মানুষের চেষ্টা ও ত্যাগ লক্ষনীয়।তবে কিছু মানুষের সদিচ্ছার কারণে হাজার হাজার পরিবারের ঈদ উৎসব ম্লান হয়ে যায়।যা খুবই কষ্ট দায়ক তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য।ইসলামের বিধান আনন্দের দিনে অমাবিক কাজটি ইসলামের সাথে সাংর্ঘষিকও বটে বলে আমি মনে করি।যারা এমন কাজে বাধাঁ হয়ে দাড়াচ্ছেন তারা গুনাহগার হচ্ছেন।তবে যাদের সুযোগ আছে বিকল্প কাজ করার,তারা ঈদের ছুটি না ফেলে কাজ ছেড়ে চলে যাওয়া জরুরী বলে ইসলামী স্কলাররা মতামত দিয়েছেন।তবে আর্চজনক হলেও সত্য বৃটেনে বাংলাদেশী মালিকানা ছাড়া ইংলিশ কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তারা বেশীর ভাগ ঈদের ছুটি পান,কিন্ত মুসলিমমালিকানাধীন ব্যবসা থেকে ঈদছুটি না পাওয়া আমাদের জন্য লজ্জাকর।
বেশ কিছু দিন ধরে প্রবাসের মাটিতে সকলের জন্য ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করতে কাজ করছে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।এ নিয়ে সভা-সমাবেশ,লেখালেখি ছাড়াও বিভিন্নভাবে দাবী আদায়ে চেষ্টা চলমান রয়েছে।যা প্রসংসার দাবী রাখে।
গত ২২শে জুন ঈদের ছুটি চাই- স্লোগাণে ব্রিটেনের সাপ্তাহিক পত্রিকা ও ৫২বাংলা টিভি যৌথভাবে কমিউনিটিতে সামাজিক প্রচারণা চালাতে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে সমাবেশের আয়োজন করে।বিষয়টি কমিউনিটিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।কারণ এদেশে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে রয়েছে।যা বেশীরভাগ বাংলাদেশী মালিকানাধীন,সাথে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মুসলমানদের মালিকানায়।এখানে হাজার হাজার বাংলাদেশী কাজ করেন।কিন্তু হাতে গুনা কয়েকটি রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে ঈদের ছুটি দিলেও বেশীরভাগ মালিক ঈদের ছুটি দিতে চান না।এদের মধ্যে যারা ঈদের ছুটি দেন তারাও শুক্র-শনিবারে হলে ছুটি দিতে চান না।কিন্ত ক্রিসমাসের সময় ঠিকই রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে বন্ধ করেন!যা কোনভাবে কাম্য নয়।ক্রিসমাসের দিনে ব্যবসা বন্ধ আর ঈদে খোলা রাখা ধর্মের উল্টো নয় কি?
বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রায় ২ শতাংশের কম হবে।কিন্তু তাদের ক্রিসমাসের ছুটি আছে।কিন্ত মুসলিমরা ঈদের দিনে ছুটি দিতে চান না।আপনি আপনার ছেলে মেয়ে নিয়ে ঈদ করবেন,আর আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ব্যক্তির পরিবার ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবে তা কি করে হয়!
আমি মনে করি, সকলে মিলে ঈদের দিন ব্যবসা বন্ধ রেখে বিকল্প ব্যবস্থা করলে এক দিকে সওয়াবের মালিক হওয়া যাবে আর অন্য দিকে ব্যবসাও হয়ে যাবে। কারণ এদেশের মানুষ বুঝে এবং জানে আমাদের ঈদ উৎসবের বিষয়টি।তবে মালিকদের পাশাপাশি স্টাফদেরও উদারমনোভাব দেখানো উচিত।কারণ আমি একটি টেকওয়েতে কাজ করতাম।সেখানে মালিক পক্ষের সাথে ঈদের ছুটি নিয়ে কথা বলি,উনারা রাজি হয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি জানার পর সকল স্টাফ বেশ খুশি হন,মালিক পক্ষ সকলকে ঈদের বোনাস ৩০ পাউন্ড করে দেন।কিন্ত ঈদের দিনের বেতন না দেওয়ায় একজন স্টাফ আমাকে ফোন দিয়ে ঈদের দিনের টাকা দেওয়া হয়নি কেন জানতে চান,আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাই।পরে আমি বলি, ভাই ঈদের ছুটি দিয়েছে সবাই খুশি,সকলে পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারবো।এটাইতো বেশী,আবার বোনাসও দিয়েছে,এখন বেতন চাচ্ছেন!যারা ঈদের ছুটি দিয়ে উদারতার পরিচয় দেন বিষয়টি স্টাফদেরও মাথায় রাখা উচিত।
আমার ভাবতে ভালো লাগে ঈদের দিন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়।ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো উৎসবের দিনে সকলের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি নিশ্চিত করতে ব্রিটেনের সকল রেষ্টুরেন্ট-টেকওয়ে, ব্রিটিশ -বাংলাদেশী চেম্বার অব কর্মাস ও ক্যাটারার্স সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগই হতে পারে আল্লাহতালার নিয়ামত- ঈদ পালনে বড় সহায়ক।আশা করি তারা ধর্মীয় এ উৎসব পালনে আগামীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং হাঁসি ফুটাবে কর্মী ও তাদের পরিবার-পরিজনের মুখে।
আমি আশাবাদি ঈদের ছুটি চাই আন্দোলন একদিন আলোর মুখ দেখবে।
খালেদ মাসুদ রনি: লেখক ও সম্পাদক বাংলাপেইজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।