তৃতীয়বাংলা খ্যাত যুক্তরাজ্যে তৃণমূল থেকে মূলধারায় বাংলাদেশী প্রবাসীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাখছে যুগান্তকারী ভূমিকা। বহুভাষা ও সংস্কৃতির ব্রিটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের অংশগ্রহন বাড়ছে দিন দিন। ৫মে লন্ডনে অনুষ্ঠিত লোকাল কাউন্সিল নির্বাচনে বাংলাদেশীদের জয় মূলত মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে আরও বেশী ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের অংশগ্রহনের দুয়ার খুলছে বলেও মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
৫মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে অনুষ্ঠিত লোকাল কাউন্সিল নির্বাচনে সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রবাসীদের মধ্যে ৯জন কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন। বিভিন্ন দল থেকে প্রতিযোগিতা করেছেন এমন সংখ্যা হবে প্রায় ২০জনের অধিক। তবে নির্বাচিত ও যারা প্রতিদ্বন্ধিতা করেও হেরেছেন সকলের নানা প্রতিনিধিত্ব ও সেবামূলক কাজের কারণে – কমিউনিটিতে তাদের রয়েছে গ্রহনযোগ্য পরিচিতি।
লন্ডনের রেডব্রিজ কাউন্সিলের ক্লেহল ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন কবির মাহমুদ।কাউন্সিলার কবির মাহমুদ এর বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌর সভার শ্রীধরা গ্রামে। তার মায়ের নাম আজিজুন নেছা খাতুন এবং বাবা মরহুম আকমল আ লী মাষ্টার।
ছাত্রজীবন থেকে কবির মাহমুদ কমিউনিটি ওয়ারকার হিসাবে কাজ করে আসছেন। এছাড়াও মেইনস্ট্রিমে ভলান্টরি নানা কাজে সম্পৃক্ত থেকে এখনও ডাইভার্স কমিউনিটির সেবায় কাজ করছেন।
২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি পপলার এন্ড লাইম হাউস আসন থেকে এমপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে তার সক্রিয় অংশগ্রহন রয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটস বারার উইভার্স ওয়ার্ডে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আসমা ইসলাম। আসমা ইসলামের বাড়ি বিয়ানীবাজারের আলী নগরের রামধা বাজার। এর আগে আসমা ইসলাম ২০১৮-২০ কেবিনেটের মাইল এন্ড ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছিলেন ।
তিনি সাবেক মেয়র জন বিগস এর ক্যাবিনেটে- এনভায়রনমেন্ট এন্ড প্লানিং বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার স্বামী সাবেক কাউন্সিলার ওয়াই ইসলামের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাতন এর শেখানি গ্রামে।কাউন্সিলার আসমা ইসলামের মায়ের নাম –রাশনা বেগম। বাবার নাম- আব্দুল মতিন।
তিনি দীর্ঘ থেকে কমিউনিটি ও ইউমেন্স অর্গানাইজেশন এর হয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও আসমা ইসলাম লেবার পার্টির ক্যাম্পেইন অফিসার হিসাবে সাবেক এমপি জিম ফিজপ্রেকটিক,রোশনারা আলী এমপি ও সাবেক মেয়র জন বিগস এর নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও বিএনপি’র সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত কমর উদ্দিনের মেয়ে সাবিনা খান টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে মাইল এন্ড ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন।
সাবিন খান বাবার পদাংক অনুসরণ করে এর আগে লন্ডনের ব্রেন্ট বাবার কাউন্সিলার নির্বাচিত হোন ২০১৪ সালে। ডাইভার্স কমিউনিটিতে ড্রাগ ইস্যু ও ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন। তার মায়ের নাম পারুল আক্তার।এছাড়াও তিনি কমিউনিটিতে একজন সফল ক্যাম্পেইনার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক হিসাবে পরিচিত।
টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে মর্যাদাকর আসন হোয়াইচ্যাপেল ওয়ার্ড। এই আসনের হোয়াইটচ্যাপেলে আগামী বছর স্থানান্তরিত হচ্ছে কাউন্সিলের টাউন হল।এই মর্যাদাকর হোয়াইটচ্যাপেল ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন বিয়ানীবাজারের দুই কৃতি সন্তান।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সাবেক কাউন্সিলার শাফি আহমেদ এই ওয়ার্ডের প্রতিযোগিদের মধ্যে সর্বাধিক ভোট পেয়ে এস্পায়ার পাটি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছে। কাউন্সিলার শাফি আহমেদ এর গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের দেউলগ্রামে।
শাফি আহমেদ এর বাবা মরহুম হাজি সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশী ড্রাইভিং ইন্সট্রাকটার হিসাবে ১৯৬৭ সাল থেকে বাঙালিদের ড্রাইভিং শিখাতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখেছেন।শাফি আহমেদ এর মায়ের নাম রেজিয়া আহমেদ। কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য চ্যারিটির সাথে তার সক্রিয় অংশ গ্রহন রয়েছে।
বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের ১৯৯৫ সালের ছাত্র সংসদের শ্রেণী প্রতিনিধি, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুল হোসেন মুন্নাও একই ওয়ার্ড থেকে এস্পায়ার পাটির মনোনয়ন নিয়ে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন।
কমিউনিটি সংগঠক হিসাবে নানা আলোকিত কাজের সাথে যুক্ত থেকে ইতিমধ্যে কমিউনিটিতে পরিচিতি লাভ করেছেন। এই আসনে হেভিয়েট তিনজন সাবেক কাউন্সিলারকে পেছনে ফেলে জয় দিয়ে চমক দিয়েছেন তিনি। কাউন্সিলার কামরুল হোসেন মুন্নার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌরসভার খাসাড়িপাড়া গ্রামে। তার মায়ের নাম রীনা বেগম – বাবা আব্দুল নূর। লন্ডনের বিয়ানীবাজার অঞ্চলের সামাজিক সংগঠনগুলোতে তার সক্রিয় কর্ম পদচারণা রয়েছে।
কভেন্ট্রী সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ওয়েস্টউড ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল জব্বার কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন।
আব্দুল জব্বার বিয়ানীবাজার উপজেলার আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর গ্রামের কৃতি সন্তান।কাউন্সিলার আব্দুল জব্বার দীর্ঘদিন থেকে লোকাল কমিউনিটির সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে কাজ করছেন।তিনি ফিনহাম প্রাইমারী স্কুলের সাবেক গভর্ণর এবং কভেন্ট্রি বাংলাদেশ সেন্টারের অন্যতম ডাইরেক্টর।
ওয়েস্টউড ওয়ার্ড এর মোট তের হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র তিনটি বাঙালি পরিবার বসবাস করেন।স্থানীয় লোকাল কাউন্সিলের দুই নির্বাচনী টার্মের মধ্যে এইবার তার বিজয়ের মাধ্যমে লেবার পার্টি একমাত্র নির্বাচিত কাউন্সিলার পেয়েছে।কাউন্সিলার আব্দুল জব্বারের মায়ের নাম হাফছা বেগম। বাবা হাজী আব্দুল করিম ।
এস্পায়ার পার্টি থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস বারার স্পিটাফিল্ড এন্ড বাংলা টাউন ওয়ার্ড নির্বাচন করে কবির হোসাইন উক্ত ওয়ার্ডে সর্বাধিক ভোটে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন। লন্ডনের কমিউনিটি সংগঠক ও নব নির্বাচিত কাউন্সিলার কবির হোসেনের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দাসউরা গ্রামে। তার মায়ের নাম রোশনা বেগম- বাবা আব্দুর রব সদাই।
টাওয়ার হেমলেস বারার বেথনাল গ্রীণ ইস্ট ওয়ার্ড থেকে এস্পায়ার দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন আহমদুল কবির। বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার ডিগ্রী কলেজে ছাত্রাবস্থায় নানা সৃজনশীল কাজের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল। লন্ডনে লোকাল কমিউনিটির সাথে ঘনিষ্টভাবে জড়িত থেকে নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি।
কাউন্সিলার আহমদুল কবিরের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের মিনারাই গ্রামে। তার মায়ের নাম হাবিবা খানম । বাবার নাম- ওলিউর রহমান মানিক।
টাওয়ার হেমলেটস বারায় লেবার পার্টির হয়ে বেথনাল গ্রীণ ইস্ট ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবুর সহধর্মিনী রেবেকা সুলতানা। আহাদ চৌধুরী বাবুর গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগে। সিলেটের চৌকিদেখির বাসিন্দা কাউন্সিলার রেবেকা সুলতানার মায়ের নাম আনহার বেগম। বাবা হাজি মোবারক মিয়া।
রেবেকা সুলতানা পেশায় একজন শিক্ষক । পূর্ব লন্ডনের সোয়ানলি সেকেন্ডারি সহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডিতে কাজ সহ নানা ভলান্টরী কাজের মাধ্যমে নিজের একটি পজিটিভ জায়গা করে নিয়েছেন কাউন্সিলার রেবেকা সুলতানা ।
লন্ডনে স্থানীয় নির্বাচনে ‘বিয়ানীবাজার’-এর ৯জন কাউন্সিলার নির্বাচিত