যুক্তরাজ্যের লিডস সিভিক হলের আর্ক রয়েল কক্ষে ব্রিটিশ বাংলাদেশী সংস্কৃতিকর্মী, কবি টি এম আহমেদ কায়সারকে শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতে সিভিক অ্যাওয়ার্ড দেয় লিডস সিটি কাউন্সিল।
লিডস ও যুক্তরাজ্যব্যাপী শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্যে সৌধ পরিচালক ও রাধারমন লোক উৎসবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কবি টি এম আহমেদ কায়সারকে সিভিক অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রশাসন লিডস সিটি কাউন্সিল।
শনিবার (৭ মে ২০২২) লিডস সিভিক হলের আর্ক রয়েল কক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনা সভা পরিচালনা করেন লর্ড মেয়র কাউন্সিলার আসগার খান।
এতে কায়সারের সামগ্রিক কর্ম ও শিল্পোদ্যোগ নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বৃটেনে লেবার দলীয় সাংসদ, শান্তি এবং নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী ফ্যাবিয়ান হামিলটন।
ফ্যাবিয়ান হামিলটন বলেন, আমি কায়সারকে আবিস্কার করি প্রায় দশ বছর আগে লিডসের এক থিয়েটার হলে, সৌধ আয়োজিত এক সর্বভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে। আমার সঙ্গে ছিলেন আরেক প্রাক্তন সাংসদ জন বাটল ও আমার স্ত্রী রোজি।
অনুষ্ঠানে আসার আগেও এই অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের আগে থেকে কোনো ধারণা ছিল না, তবে ফেরার পথে, এটা বলতে গিয়ে খুব গৌরব বোধ করছি, আমরা তিনজনই এক অধিবাস্তব ভুবন থেকে ধীরে যেন প্রাত্যহিক জীবনে পদার্পণ করছিলাম। তারপর আমি নিজেও আমাদের সংসদের আটলী কক্ষে কায়সারের অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি।
আমি বিস্মিত হয়েছে লন্ডনে এবং দেশের বিভিন্ন শহরে শুধু দক্ষিণ এশিয় দর্শকই নয়, ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি বর্ণের মানুষ এই অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত হয়ে পিনপতন নিরবতা নিয়ে উপভোগ করেছেন।
সাংসদ হামিলটন বলেন, কায়সারের প্রধান অবদান বোধ করি তার উদার ও আন্তর্জাতিক-মনস্কতা এবং এজন্যে বিভিন্ন সংস্কৃতি, পৃথিবীর বিভিন্ন সাহিত্য ও সঙ্গীতের মিলন ঘটিয়েছেন এসবের অন্তর্নিহিত শিল্পমানের সঙ্গে কোনোরূপ আপোস না করে এবং ঠিক একই জিনিস আমি সম্মোহিতের মতো উপভোগ করেছি টি এস এলিয়ট ও বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে তার পরিচালিত থিয়েটার পরিবেশনায়।
লর্ড মেয়র আসগার খান বলেন, কায়সার লিডস শহরের সাংস্কৃতিক দূত হয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যে ক্লান্তিহীন শিল্পোদ্যোগ ও শিল্প-প্রচারণা করে যাচ্ছেন, তাতে আমি এই শহরের মেয়র হিসাবে গর্বিত বোধ করি। তিনি নিজে একজন কবি, লেখক এবং থিয়েটার পরিচালক, এর পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সৌধ ও রাধারমন সোসাইটির মত সাহিত্য, সঙ্গীতের দুটো শীর্ষ শিল্প-সম্রাজ্য। লিডস শহর তাকে বাসিন্দা হিসাবে পেয়ে এবং তার কাজের অন্যতম চারণভূমি হতে পেরে গৌরব বোধ করছে। আজ তাকে এই সিভিক সম্মাননা দিতে পারায় আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব আনন্দবোধ করছি।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত-নন্দনতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক ড. মাট পিটচার্ড বলেন, আমি সৌধ ও রাধারমন সোসাইটির বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগদান করেছি। অনুষ্ঠানের মান ও বিচিত্র সব শিল্প-ধারণার সমাহার আমাকে বিমোহিত করেছে। আমরা, লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের পক্ষ থেকে, সৌধের সঙ্গে কিছু সঙ্গীত প্রকল্প মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছি অচিরেই।
শুবার্ট শিল্পী এরিক শিলিন্ডার বলেন, কায়সারের লড়াইটা আমি বুঝতে পারি এবং সেজন্যে অনেক সময় কোনো সম্মানী ছাড়াই তার সঙ্গে কাজ করে গৌরব বোধ করি। মূলধারার কোনো আর্ট-গ্রান্ট ছাড়াই একের পর এক এইসব উদ্যোগ অব্যাহতভাবে করে যাওয়া রীতিমতো বিস্ময়ের।
ডা. অমল পাল বলেন, করোনাকালে সৌধ ও রাধারমন সোসাইটির অক্লান্ত উদ্যোগ এবং বিশ্বের বিচিত্র সব শিল্প সঙ্গীত দিয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী যে শিল্প-সম্রাজ্য রচনা করেছেন কায়সার, তা অভূতপূর্ব। আমি এইসব উদ্যোগে মাঝে মাঝে সহায়তা করতে পেরেছি – এটা আমার জন্যে অনেক আনন্দের।
এতে এছাড়াও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ড. কানিজ ফাতেমা চৌধুরী, মোহাম্মদ আফজাল হোসেন, খালেদ আব্দুল্লাহ, সৈকত আচার্য, জামশেদ ফুলাদ, অমর বৈদ্য ও আশোক ঘোষ। লর্ড মেয়র আসগার খান এবং সাংসদ ফ্যাবিয়ান হ্যামিলটন বক্তব্যপর্ব শেষে, আহমেদ কায়সারের হাতে তুলে দেন লিডস কাউন্সিলের লগো সম্বলিত সম্মাননা-স্মারক ও স্বীকৃতিপত্র।
সম্মাননার প্রতিক্রিয়ায় কবি টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, নিজের আনন্দের জন্যেই যা করে বেড়াই, এর ভেতরের দর্শন এবং ভিশন এতসব তৃতীয় চক্ষু এত গভীরভাবে অবলোকন করেছে জেনে অভিভূত বোধ করছি। লিডস সিটি কাউন্সিল ও লর্ড মেয়র আসগার খানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যারা আমাদের কাজ নিয়ে এতক্ষণ এত সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন- সবই চিরস্মরণীয় স্মৃতির অংশ হয়ে থাকল।