”সরকার কেন আমাকে এই জমি দিয়ে যন্ত্রনা দিয়েছে ? আমি কি তাই চেয়েছিলাম ? এই জমির দন্ধের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি, সরকারের জমি সরকার ফিরিয়ে নিয়ে যাক, আমাকে মুক্তি দিক, আমি আমার তিন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব, তবুও আর সহ্য করতে পারছিনা। ওরা আমাকে বার বার মারে, রক্তাক্ত করে, আমি কোন বিচার পাইনা ?” এভাবে কথা গুলো বলেছিলেন কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাতিমুঞ্জি গ্রামে অসহায় শ্রীদাম পাল সাধু।
জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে নেত্রকোণা পুলিশ সুপার মহোদয়ের শরণাপন্ন হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের পাতিমুঞ্জি গ্রামে শ্রীদাম পাল সাধু’র (৭৫) ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ও তার ডান পা ভেঙে দিয়েছেন একই গ্রামের ইসমাঈল নামে এক ব্যক্তি।
এ ঘটনাটি গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কলমাকান্দা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাতিমুঞ্জি গ্রামে বাকলা নদীর পাড়ে ঘটে। ওই দিন রাতে কলমাকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর ধরে অসহায় এক সংখ্যালঘু শ্রীদাম পাল সাধু (৭৫) প্রতিবেশি মো. ইসমাইল মিয়া , মো. আ: রশিদ ,ইন্নুছ আলী গংদের কাছে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে।
কলমাকান্দা উপজেলার পাতিমুঞ্জি মৌজাস্থ ০১ নং খতিয়ানের সাবেক ৬৩/৬৪ হাল ৫৭/৭৬৪ দাগে. ৬০ শতাংশ জমি ২০০০ সালে সরকার দলিলমূলে শ্রীদাম পাল সাধুকে চিরস্থায়ী বন্ধোবস্ত দেন । ওই ভূমির নকশা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ পূর্বক দখল বুঝিয়ে দেন। এর পর থেকে তিনি ভোগ দখল করে আসছেন।
কিন্তু ওই গ্রামের প্রভাবশালী প্রতিবেশি ইসমাঈল গংরা উক্ত জমি থেকে সাধুকে উচ্ছেদ করে বেদখল করার লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে অহিংস্র মনোবৃত্তি নিয়া সাধু ও তার পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মারপিট করে আসছে এই দুষ্কৃতিকারীরা। যতবার এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়, ততবার সাধু তার স্বজাতির কাছে আশ্রয় চায়। কিন্তু তার স্বজাতিরা নীরব নিশ্চুপ থাকে, ওদের ভয়ে মুখ খুলেন না।
এমন অবস্থায় অসহায় সাধু আইনের আশ্রয় নেয় । বিজ্ঞ আদালতে একটি মোকদ্দমা দায়ের করে। আদালত ২০১৫ সালে শ্রীদাম পাল সাধুর নামে রায় প্রদান করে। আদালতের সেই রায় প্রদান করায় অত্যাচারীরা আরও অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় অসহায় সাধুর প্রতি।
শ্রীদাম পাল সাধু তার তিন প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান পরিবার নিয়ে নীরবে জীবন যাপন করে আসছেন। কিন্তু এই নীরবতা থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়, মারতে আসে, জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভয় দেখায়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেয়, এলাকা তথা দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে এমন পরিস্থিতির শিকার এখন সাধু ।