বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল একটি জনকল্যাণমূলক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।হাসপাতালের সার্বিক সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রাথমক ধারনা দিতে চাই। প্রবাসী এবং দেশী সম্মানীত দাতা ও ট্রাস্টিগণের আর্থিক অনুদান ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এই হাসপাতালে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে যেমন- সম্মানীত প্রবাসীসহ দেশী-বিদেশী অনুদানে গঠিত দরিদ্র তহবিলের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়।
যা হাসপাতালের রিসিপশন ডেস্কের সামনে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে, হাসপাতালের দরিদ্র তহবিলের উপযুক্ত যে কেউ চাইলে দরিদ্র তহবিলের সহযোগিতায় হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করতে পারেন। অপরদিকে যারা দরিদ্র তহবিলের সেবা গ্রহণে অনাগ্রহি তারা স্বল্পমূল্যে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন। তাদের প্রদানকৃত অর্থ কিছুটা হলেও হাসপাতালকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বশীলরা মনে করেন , সাধারণ মানুষের অনুদানের পাশাপাশি হাসপাতালের নিজস্ব আয় থেকে পর্যায়ক্রমে আরো উন্নত সেবা প্রদান সহজতর হবে।
উপজেলা পর্যায়ে হলেও বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন অত্যাধুনিক ভবন, উন্নরত অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজি ল্যাব, এক্স-রে আল্ট্রাসনো সহ অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সাম্প্রতিক করোনা মহামারী (কোভিড ১৯) এর সঙ্কটকালে প্রতিষ্ঠানটি তার সীমিত সামর্থকে উজাড় করে হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছেন। করোনার শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার রোগীকে বিভিন্নভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনার মরন থাবার মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ এর প্রোকোপ ছিল। এথেকে সিলেটের বিয়ানীবাজার সহ গোলাপগঞ্জ, বড়লেখা, কানাইঘাট ইত্যাদি পাশ্ববর্তি উপজেলাতেও করোনা মারাত্নক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে সর্বত্র কোভিড রোগীদের জন্য চিকিৎসার অপ্রতুলতা, হাসপাতালের অভাবসহ অক্সিজেন সঙ্কট প্রকট হয়।মানুষ চিকিৎসার অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছিল।তখন হাসপাতালটি তার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বিনামুল্যে চিকিৎসাসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের পাশাপাশি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু করে।
করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছেন এবং বিশেষ করে যাদের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ প্রকাশ করছে।
হাসপাতালটি এই সঙ্কট মুহুর্তেও তার সীমাবদ্ধ সামর্থ অনুযায়ী ক্যান্সার রোগীগণের চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। হাসপাতালে ক্যান্সারের বিশেষজ্ঞ সেবার পাশাপাশি আরো উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালে চালু রয়েছে ক্যান্সার হেল্প ডেস্ক।যার মাধ্যমে রোগীর প্রয়োজন অনুসারে দেশের উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও সার্বিক সহযোগিতায় চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের বিশ্বাস ব্যয়বহুল এবং তৃণমুলে অপ্রতুল এই চিকিৎসার জন্য ক্যান্সার হেল্প ডেস্ক রোগীর সু চিকিৎসারি জন্য দ্রুত সময়ে একটি সঠিক চিকিৎসাসেবা শুরু করতে রোগী ও পরিবরারকে অনেক সাহায্য ও অর্থ স্বাশ্রয় করবে।
প্রাসঙ্গিকভাবে একটি কথা এখানে বলা জরুরী যে, মূলত প্রবাসীদের বিরাট একটি অংশের অর্থ সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এর অবস্থান সিলেটের বিয়ানীবাজারে পৌর শহরে। কিন্তু এর সেবার পরিধি সিলেটসহ দেশব্যাপী। প্রতিষ্ঠানটি কোন আঞ্চলিকতা বা সিলেট অঞ্চল কেন্দ্রীক দুর্বলতা ইত্যাদিতে জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল তৃণমূল মানুষের দোড়গড়ায় কাজ করছে। আমাদের সেবার পরিধি এখনও ব্যাপক বিস্তৃত নয়। তবে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে ধারাবাহিকভাবে হাটছে। সকল কাজে আলাদা আলাদা বিভাগ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সরাসরি তত্বাবধানে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য থেকে এইসব কাজের তথ্য ও আর্থিক হিসাব মনিটরিং এবং করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
সকলের ঐকান্তিক মেধা, শ্রম ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় গরীব ও সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল বাংলাদেশের মধ্যে একটি সেরা ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল হিসাবে সেবা দিবে যাবে- এই বিশ্বাস নিয়ে সকল ট্রাস্টি ও কর্মকর্তাবৃন্দ নিরলস কাজ করছেন।
লেখক : ফরহাদ হোসেন টিপু, ট্রাস্টি ও কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল। লন্ডন।