টাওয়ার হ্যামলেটস বারার তরুণদের পরিশ্রম ও সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা জানানো হয়।
টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস ছিল বারার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য উদযাপন এবং এই সাফল্য অর্জনে তাদের সহযোগিতা করায় শিক্ষকদের ও অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানানোর এক অনন্য সুযোগ।
অনুষ্ঠানটি বারার ঐতিহ্যবাহী ভেন্যু ট্রক্সি হলে অনুষ্ঠিত হয়। এটা সঞ্চালনা করেন বিবিসি নিউজ এর উপস্থাপক সামান্থা সিমন্ডস এবং আইটিভি নিউজ এর সাংবাদিক মাহাথির পাশা।
জিসিএসই — তে সেরা অর্জনকারী, এ—লেভেল এ সেরা অর্জনকারী, অসাধারণ সাফল্য এবং ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা — এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রীদের মনোনয়ন আহ্বান করা হয়, এবং বিজয়ীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয় সার্টিফিকেট ও ভাউচার।
বারার শিক্ষা ও তরুণদের জন্য নিবেদিত সার্ভিসসমূহের উন্নয়নে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বিপুল বিনিয়োগের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের শিক্ষা খাতে চলমান কাজ ও বিনিয়োগের প্রতিফলন দেখা যায়। কাউন্সিল বারার কিশোর তরুণ জনগোষ্টিকে তাদের সম্ভাবনায় পৌঁছাতে উদ্দীপনা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে এডুকেশন মেইনটেন্যান্স অ্যালাওয়েন্স (ইএমএ) এবং ইউনিভার্সিটি বার্সারি প্রকল্প, যা বর্তমানে তৃতীয় বছরে রয়েছে। এই প্রকল্প দু’টির মাধ্যমে যোগ্য ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
২০২২ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, এই প্রকল্পের আওতায় ২,৩৫০টি বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ১.৮২ মিলিয়ন পাউন্ড। এ বছরের আবেদনের শেষ তারিখ ছিলো গত ২১ নভেম্বর, যার আওতায় এবার অতিরিক্ত ২,০৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ইংল্যান্ডের প্রথম কাউন্সিল হিসেবে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে স্কুল মিল অর্থাৎ স্কুলে খাবার প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও, কাউন্সিলের ইয়ুথ সার্ভিস উন্নয়ন প্রকল্পে ১৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে পুরস্কার বিজয়ীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বারার নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেছেন, “আপনারা সবাই অসাধারণ কাজ করেছেন এবং আপনার পরিবার ও আমাদের বরোকে গর্বিত করেছেন। শিক্ষা অর্জনের পথে আপনাদের সমর্থন দিতে আমাদের কাউন্সিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আমরা প্রতিটি যুবকের ভবিষ্যতে বিনিয়োগের গুরুত্ব বুঝি।”
মেয়র বলেন, “আমরা আমাদের তরুণ সমাজকে তাদের সাফল্যের পথে সহায়তা করতে এবং উদযাপন করতে সবসময় পাশে থাকব।”
ডেপুটি মেয়র এবং শিক্ষা বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর মাইয়ুম তালুকদার বলেন, “আমাদের তরুণ সমাজের অসাধারণ প্রতিভা, দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম নিজ চোখে দেখা সত্যিই গর্বের বিষয়। টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস আমাদের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানানোর একটি মাধ্যম। আমি আমাদের সকল ছাত্রছাত্রীদের তাদের সাফল্যে গর্বিত হওয়ার আহ্বান জানাই এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে বলি।”
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা নৈশভোজের পাশাপাশি ফটোবুথ, ববা পানীয় ও চায়ের স্বাদ, এবং টিএইচএএমইএস স্যাটারডে মিউজিক সেন্টার বিগ ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশনা উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে মেয়র লুৎফুর রহমান, ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইয়ুম তালুকদার, হেডটিচার ভেরোনিকা আর্মসন, কাউন্সিলের এডুকেশন ডিরেক্টর স্টিভ রেডি, অনুষ্ঠানের ‘গোল্ড’ স্পন্সর আইকন কলেজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, প্রিন্সিপাল ও ফাউন্ডার ড. প্রফেসর নুরুন নবী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস বারার একসময়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ওরিন বেগম, যিনি বছর দশেক আগে উচ্চশিক্ষার জন্য কাউন্সিল থেকে ইউনিভার্সিটি বার্সারি লাভ করেছিলেন এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ল‘ গ্রাজুয়েট হোন এবং বর্তমানে নর্ডিক এভিয়েশন ক্যাপিটাল এর লিগ্যাল বিভাগের ভাইস চেয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ওরিন বেগম এওয়ার্ড লাভকারী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে ধন্যবাদ, যারা এই ছাত্রছাত্রীদের সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে।”
আরেকজন অতিথি সেকেন্ডারি হেডটিচার্স গ্রুপের চেয়ার ড্যানি লি’র মন্তব্য ছিলো এমন — “এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডসে সম্মানিত ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। তাদের সাফল্য শুধু তাদের ব্যক্তিগত অগ্রগতিই নয়, বরং আমাদের বরোর সম্মিলিত সাফল্যের প্রতীক।”
টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডসে স্থানীয় বহু প্রতিষ্ঠানের স্পনসরশিপ ছিল, যার মধ্যে প্রধান ‘গোল্ড’ স্পন্সর ছিল আইকন কলেজ অফ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।
অরিন বেগম: সাফল্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত
অরিন বেগম। জন্ম বাংলাদেশে। চার বছর বয়সে মা—বাবার সাথে ব্রিটেনে আসেন। পাচঁ ভাইবোনের সবার বড় অরিন।বাবা মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, মা সামিনা বেগম । বাবা মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে কাজ করতেন, এখন অবসর জীবন যাপন করছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটসের জর্জ গ্রীন স্কুল থেকে জিসিএসই পাশ করেন ২০১০ সালে। ২০১২ সালে এ লেভেলে চমৎকার ফলাফল করে বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ডে আইন শাস্ত্রে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন। অরিন মেয়র লুৎফুর রহমানের বিশেষ শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প ‘ইউনিভার্সিটি বার্সারি’ লাভকারী প্রথম শিক্ষার্থীদের একজন।
অক্সফোর্ডে তিনি সেখানকার সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ থেকে স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ২০১৬ সালে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
এরপর নামকরা আইনী প্রতিষ্ঠান ক্লিফোর্ড চান্সে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
এরপর অরিন ২০২৩ সালে নরডিক এভিয়েশন ক্যাপিটালে লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে যোগদান করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে উড়োজাহাজ লীজ দিয়ে থাকে।
অরিন এখন স্বামী—সংসার নিয়ে নর্থ ইংল্যান্ডের ব্ল্যাকবার্নে বসবাস করেন। বাংলাদেশে অরিনের পৈতৃক নিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বাগিরঘাট ( জমিদার বাড়ী)।