যুক্তরাজ্যের সুপ্রীম কোর্টের প্রতিথযশা আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিনবারের সাবেক ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ তাঁর আইন পেশায় ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন” নামে নতুন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ২৫ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত এক ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন চৌধুরীর উপস্থাপনায় মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ, মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের (এমসিবি) সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী এমবিই ডিএল, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শাহগীর বখত ফারুক, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান এবং লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ। এতে বৃটেনে প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, চলতি বছর আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন বছর। পঁচিশ বছর আগে ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে বার-এট-ল পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলের শীর্ষে অবস্থান করে বিশ্বখ্যাত অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন্ থেকে ব্যারিস্টার হই। ব্যারিস্টার হবার পর বিগত পঁচিশ বছর ধরে এই সমাজে আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় শত শত মানুষের জীবনের মোড় ঘোরাতে এবং হাজার হাজার মানুষের অধিকার পেতে ও রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে করছি। সিকি শতাব্দির আইনী ক্যারিয়ারে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার চেষ্টা করেছি। কোনও মামলার মেরিট যা তাই বলেছি – বাড়িয়ে বলিনি, কমিয়েও বলিনি। এর বিনিময়ে পেয়েছি অসংখ্য মানুষের অভাবিত সম্মান, স্নেহ ও ভালবাসা। আইন পেশায় সব সময় নিজের বিবেক, সততা, অধ্যাবসায়, কমিটমেন্ট ও ডিটারমিনেশন ছিল আমার চলার পথের পাথেয় । আমার দীর্ঘ আইনি পেশায় আমার সততা ও যোগ্যতার ব্যাপারে একটি অভিযোগ তথা কমপ্লেইন কখনও আসেনি বা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমার জন্ম আফ্রিকায় হতে পারতো, হতে পারতো কেনারি আইল্যান্ড অব ডমিনিকাতে! কিন্তু মহান প্রভূ আমার জন্মস্থান বাছাই করেছেন বাংলাদেশে। সুতরাং বাংলাদেশের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে, আছে দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই অনুভূতি থেকে আমার আইনি ক্যারিয়ারের ২৫ বছর পূর্তির প্রাক্বালে সিদ্ধান্ত নিয়েছি “Inspire a Million” নামে একটি প্রজেক্ট ও চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করবো । আমার ব্যক্তিগত আয়ের একটি অংশের অর্থায়নে চালু হওয়া এই চ্যারিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত এক মিলিয়ন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবো। এটির কাজ হবে বহুমূখী: অসহায় ব্যক্তি বা পরিবারকে স্বাবলম্বী করা; সুনির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ দেয়া; টেলেন্ট হান্ট করে মেন্টরিং করা; এতিমদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখানো; গরীব ও মেধাবীদের বৃত্তি দেয়া; স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ইন্সপায়ার ও মোটিভেট করার ইনিশিয়েটিভ নেয়া ইত্যাদি।
সুদীর্ঘ আইন পেশায় বহুমুখী কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, দীর্ঘ পঁচিশ বছরের প্রচন্ড ব্যস্ত আইনি ক্যারিয়ারে বহুমুখী কমিউনিটি ও সমাজ সেবায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম । হাজার হাজার ঘন্টা খরচ করে বৃটেন থেকে সম্প্রচারিত একাধিক টিভি চ্যানেলে ফ্রি লিগ্যাল এডভাইস দিয়েছি। কোন চ্যানেলে নিজে এজন্য একটি টাকাও দেইনি অথবা কোন চ্যানেল থেকে একটি টাকাও নেইনি। এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে “ফ্রি লিগ্যাল সার্ভিস টু দ্য কমিউনিটি এন্ড সোসাইটি”। বৃটেন থেকে প্রকাশিত একমাত্র ব্রডশীট পেপার “সাপ্তাহিক পত্রিকা”তে দু’দশক আগে টানা তিন বছর প্রশ্নোত্তরের আদলে “লিগ্যাল এডভাইস” কলামে আইনি পরামর্শ দিয়েছি । তখন বাংলা ইলেকট্রনিক কোনও মিডিয়া বিলেতে ছিল না। আইনি বিষয় ছাড়াও গণমাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছি – কথা বলি, বিশ্লেষণ করি নিরপেক্ষভাবে ও বিবেক থেকে। কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যুতে যথাসাধ্য সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। এ পর্যন্ত কমিউনিটি ও সমাজের ৬০টির উপরে সংগঠন ও চ্যারিটির নির্বাচন পরিচালনা করেছি নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে । এগুলো করেছি কমিউনিটি ও সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে যে কমিউনিটি ও সমাজ থেকে আমি উঠে এসেছি।
লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লিগ্যাল প্র্যাকটিস ছিল আমার পেশা। কিন্তু লেখালেখি বলা যায় আমার নেশা বা পেশন। প্রচন্ড প্রফেশনাল ব্যস্ততার মধ্যেও বৃটেনের একাধিক পত্রিকায় বহু বছর নিয়মিতভাবে বাংলায় ও ইংরেজীতে লিখেছি। গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে অনেকটা নিয়মিতভাবে লিখে যাচ্ছি। আমার লেখালেখির বিষয় হচ্ছে সমসাময়িক বিষয়, আইন ও সংবিধান। এ পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজীতে আমার সাতটি বই বের হয়েছে। আরো কয়েকটির পান্ডুলিপি প্রস্তুত হচ্ছে।
ভারসাম্যপূর্ন জীবন পরিচালনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, আজ জীবনের একটি বাঁকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। গত ফেব্রুয়ারীতে আমি ৫৩ বছরে পা রেখেছি। জীবনের ২৮টি বসন্ত গেছে আমার পড়াশুনায়। এরপর ২৫টি বসন্ত গেছে আইন পেশায়। পেশাতে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকার পরও কমিউনিটি ওয়ার্ক, লেখালেখি, পরিবারে সময় দেয়া, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। এগুলো সম্ভব হয়েছে ছোটবেলা থেকে রুটিনমাফিক ও ভারসাম্যপূর্ন জীবন পরিচালনায় অভ্যস্ত থাকায়।
বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ পূনর্গঠনে কাজ করার প্রত্যয় ঘোষনা করে ব্যরিস্টার নাজির আহমদ বলেন, আজীবন কেউ বেঁচে থাকবে না। বরং মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মের মধ্যে। জীবনের এই বাঁকে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনা করছি বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু কাজ করার। গত তিন বছর প্রতি বছর টানা এক মাস করে দেশে অবস্থান করে এবং বিভিন্ন শ্রেণি/পেশার মানুষের সাথে মিশে উপলব্ধি করেছি যে সেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ আছে । ব্রিটেনে আইন বিষয়ে একাধিক সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে আইনজীবী হিসেবে কোয়ালিফাইড হয়ে প্র্যাকটিস শুরু করার পর অসংখ্য মানুষকে আইনী সহায়তা প্রদান করে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা অর্জন করার পরেও আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে আমার ব্রিটেনে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দেশ মাতৃকার সেবার মানসে আমি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেও এডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছি এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য হয়েছি দেড় যুগ আগে। এ উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট পর্যন্ত হওয়া জন্য আমাকে সাত বার দেশে যেতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে আমি বিশ্বের ৬০টি দেশ ইতিমধ্যে সফর করেছি। আমার অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জন্মভূমি বাংলাদেশের সামান্য উপকারও যদি হয় এ উদ্দেশ্যে আমি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও গত মে ও সেপ্টেম্বর মাসে মাসব্যাপী বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ প্রায় এক ডজন মাননীয় বিচারপতি এবং জাতীয় দৈনিকের স্বনামধন্য সম্পাদক, ভিসি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ সমাজ ও রাষ্ট্রে অবদান রাখতে পারেন এমন অসংখ্য মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেছি ও মতবিনিময় করেছি । বাংলাদেশের আর্ত-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ আছে।