­
­
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
মার্চ ফর গাজা: ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে সোহরাওয়ার্দীতে জনসমুদ্র  » «   চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেছে আলোচিত ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফ, রহস্যজনক বলছে পুলিশ  » «   ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে ভারতের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যা  » «   ‘বাংলাদেশিসহ’ ৪০ অভিবাসীকে আলবেনিয়ায় পাঠাল ইতালি  » «   বিনিয়োগ সম্মেলনে কেমন সাড়া পেলো বাংলাদেশ?  » «   আরবদের হটিয়ে যেভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল  » «   ২০২৪ সালে লন্ডন ছেড়েছেন ১১ হাজার ধনী, কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা  » «   জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে: গভর্নর  » «   মডেল মেঘনা বিশেষ ক্ষমতা আইনে জেলে, অভিযোগ ছাড়াই আটকের যৌক্তিকতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন  » «   ‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট  » «   মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে গেল  » «   যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ: বিপজ্জনক খেলা, পথ নেই পিছু হটার  » «   বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ  » «   প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি  » «   নাসার সাথে চুক্তি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ  » «  

বিতৰ্কিত ‘এ লেভেল’ পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বৃটেনজুড়ে চলছে তোলপাড়!  



 

করোনা মহামারীর কারণে সামাজিক দূরত্ব এড়াতে চলতি বছরের মার্চে সরকার সমগ্র বৃটেনে গ্রীস্মকালীন  জিসিএসই, এ লেভেল ও বিটেক পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করে।  সরকারের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। কারন মক  পরীক্ষার (mock exam) পর থেকে গ্রীস্মকালীন ফাইনাল পরীক্ষাকে সামনে রেখে যে প্রস্তূতি শিক্ষার্থীরা শুরু করেছিল তা দুর্ভাগ্যক্রমে থমকে যায়।  উদ্বেক, উৎকণ্ঠা আর মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন মা, বাবা এবং অভিভাবকরা।  সরকারি এহেন ঘোষণার ফলে চুড়ান্ত ফলাফল(Final Results) অর্জনের উপর থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের  ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলাফলের বিষয়ে  তাদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব বর্তায় নিজ নিজ  স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের ওপর।

গত পাঁচ মাস ধরে শিক্ষার্থী, মা, বাবা আর অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ১৩ই অগাস্ট, বৃহস্পতিবার  একযোগে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও  উত্তর আয়ারল্যান্ডে –  এ লেভেল ও বিটেক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।  হাজার হাজার শিক্ষার্থি এবং তাদের মা, বাবা অভিভাবক এ ফলাফলে মোটেই সন্তুস্ট নন। তাদের মতে, এ ধরণের ফলাফল হাস্যকর ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক গ্রেড, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক কাজের মান, আগের  বছরগুলোতে স্কুল ও কলেজ গুলোর সার্বিক ফলাফল কেমন ছিলো, স্কুল- কলেজগুলো কোন এলাকায় অবস্থিত এবং  শিক্ষার্থীদের ব্যাকগ্রাউন্ড এসব বিষয় বিবেচনায় এনে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে যা  কিনা চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা “অফকল” ও এক্সাম বোর্ডগুলো এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মক ফলাফলকে (Mock Results) আমলে না নেয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ অগ্নিশর্ম হয়ে পড়েছেন।

ইংল্যান্ডে – এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক গ্রেড শতকরা ৫৯ ভাগ  অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে আর প্রায় ৪০ ভাগ গ্রেডকে  কমপক্ষে একধাপ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার বেশি অবনমিত বা ডাউনগ্রেডেড করা হয়েছে। ওয়েলস এ  শতকরা ৪২ ভাগ  গ্রেড কে এক ধাপ বা তার বেশি  অবনমিত বা ডাউনগ্রেডেড করা হয়েছে।  এর কারন হিসেবে অফকল বলছে,  শিক্ষকরা আবেগের বশবর্তী হয়ে গ্রেডের  ব্যাপারে অতিমাত্রায় উদারতা দেখিয়েছেন। অন্যদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক গ্রেডের  শতকরা ৩৭ ভাগকে এক ধাপ বা তার বেশি  অবনমিত বা ডাউনগ্রেডেড করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চরম অসন্তোষ আর প্রতিবাদের মুখে সরকার বলছে যে, শিক্ষার্থীরা চাইলে তাদের ফলাফলের ব্যাপারে আপীল করতে পারবে।  তবে আপীল করতে হবে স্কুল কিংবা কলেজের মাধ্যমে অর্থাৎ শিক্ষার্থিরা নিজে সরাসরি আপীল করতে পারবে না। ইংল্যান্ডে  এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে আপীলের সময় মক রেজাল্ট এক্সাম বোর্ডের  কাছে পাঠাতে হবে আর ওয়েলস এ  গত বছর শিক্ষার্থীদের  অর্জিত এ এস লেভেল পরীক্ষার (AS Level Exam) প্রাপ্ত গ্রেড এক্সাম বোর্ডের কাছে পাঠাতে হবে।  এছাড়া শিক্ষার্থীরা চাইলে চলতি বছরের অটাম সীজনের (Autumn Season) অক্টোবর মাসে আবারো পরীক্ষা দিতে পারবে (Resit)।

এদিকে তড়িঘড়ি করে সরকার এখন “ট্রিপল লকের” ব্যবস্থা করেছে।  এর অধীনে শিক্ষার্থীদের মক রেজাল্টের গ্রেড, গত সপ্তাহে প্রাপ্ত গ্রেড ও আগামী অটাম গ্রেড  – এ তিনটির মধ্যে সর্বোচ্চ (Highest) গ্রেডটিকে চূড়ান্ত বা ফাইনাল গ্রেড হিসেবে গণ্য করা হবে।

অনেক হেড টিচার ও প্রিন্সিপাল সরকারের এ জাতীয় তরিঘরি করে সিদ্ধান্ত নেয়াকে আতঙ্কিত হবার মতো ঘটনা ও চরম বিশৃঙ্খলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এদের কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করেনি। তাদের মতে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সাথে ছিনিমিনি খেলেছে সরকার।  অফকল ও এক্সাম বোর্ডগুলোর উচিত ছিল শুধুমাত্র এবছরের  পরীক্ষার্থীদের সামর্থ্যকে(Ability) বিবেচনায় আনা।  বিগত বছরের পরীক্ষার্থীদের সামর্থ্যের সাথে  তুলনা করা ঠিক হয়নি।  কারন প্রত্যেকের সামর্থ্য ভিন্ন।  হেড টিচার ও প্রিন্সিপালরা ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেনো  করোনা ব্যাচের এ লেভেল শিক্ষার্থীদের দুরাবস্থার কথা মাথায় রেখে ভর্তি বিষয়ক তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।  যাতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি মূল্যবান বছর হারিয়ে না যায়।

সরকারের  এধরণের  সিদ্ধান্তকে এ  লেভেল শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না। তারা বলছে এ সিদ্ধান্ত ন্যায় সঙ্গত নয়। কারো কারো মতে, এটা এক ধরনের  “ফলাফল ডাকাতি”। কেউ কেউ বলছে, গত বছর ইউকাস (UCAS) ও ইউনিভার্সিটি আবেদন পত্র (Application Forms) নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মক পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হয়নি। কেউই মক পরীক্ষাকে গুরুত্বের সাথে নেয় না যেমনটি নেয় চূড়ান্ত বা ফাইনাল পরীক্ষাকে।  অনেকে বলছে, শিক্ষকদের অনুমানভিত্তিক গ্রেডের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। কারো কারোর ধারনা শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে অনুমানভিত্তিক গ্রেড কয়েক ধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।  আবার কেউ কেউ অটাম পরীক্ষাকে (Resit) স্বাগত জানালেও, তারা মনে করে যে, দুমাসেরও কম সময় ফাইনাল পরীক্ষার  প্রস্তুতির  জন্য পর্যাপ্ত না।  কারন স্কুল, কলেজ বন্ধের আগে বিভিন্ন বিষয়ে তারা  সিলেবাস শেষ (Complete)করতে পারেনি।  কোভিড ১৯ এর কারনে তারা শিক্ষকদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পায়নি বা স্কুল , কলেজ তাদের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ রাখেনি। শিক্ষার্থীদের মতে, অটাম পরীক্ষার (Resit) কথা আগাম মাথায় রেখে স্কুল  ও কলেজ গুলোর উচিত ছিলো তাদের সাথে  অন লাইনে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা।

এসব আটকপালিয়া শিক্ষার্থীরা তাদের আশা ভঙ্গের প্রতিবাদ  জানাতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পরদিন শুক্রবার হাউস অব কমন্সের সামনে বিক্ষোভ করেছে।  এদের সাথে মা, বাবা ও অভিভাবকরাও যোগ দেন।  তারা এ নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার যথাযথ   ব্যাখ্যা দাবী করে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বরখাস্ত দাবি করেন । কারন এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফলের উপরই  নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উচ্চ শিক্ষা ও চাকরির ভবিষৎ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস  জনসন ও এডুকেশন সেক্রেটারি গ্যাভিন উইলিয়ামসন – এ  লেভেল পরীক্ষার ফলাফলকে “সুস্পষ্ট” ও “নির্ভরযোগ্য” বলে দাবী করেছেন।  তবে বিরোধী লেবার দলের নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার – এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফলকে সরকারের চরম ব্যর্থতা এবং এ পরিস্থিতিকে দারুন কলঙ্কজনক উল্লেখ  করে বলেছেন যে, সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের –  স্কুল, কলেজের উপর নির্ভর না করে সরাসরি আপীল করার সুযোগ দেয়া এবং তাদের কাছ থেকে আপীল ফিস  না নেয়া। লেবার দলের পক্ষ থেকে ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার দ্রুত সমাধান দাবী করা হয়েছে।  লেবার দলের মতে প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছে। যা অনভিপ্রেত।

শিক্ষার্থী, মা, বাবা অভিভাবক ও বিরোধী দলের প্রতিবাদের মুখে সরকার “ট্রিপল লক” ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, রেজাল্ট বা ফলাফল নিয়ে আপীল করার সময় শিক্ষার্থীদের কোনোরকম ফিস দিতে হবে না।  পুরো আপীল প্রক্রিয়াকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একজন মিনিস্টারকে দায়িত্ব দেয়া হবে।  অক্টোবরে রিসীট পরীক্ষা হবার পর ডিসেম্বর মাসে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।  ইউনিভার্সিটিগুলোকে অনুরোধ করবে যাতে তারা রিসীট পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আগামী বছরের জানুয়ারী মাসে ভর্তির সুযোগ করে দেয়।  তবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ইউনিভার্সিটিগুলোর ওপর।  যদি তারা সরকারের অনুরোধ না রাখে, সেক্ষেত্রে রিসীট পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের আগামী বছরের  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির জন্য  অপেক্ষা করতে হবে।  অর্থাৎ এসব অভাগা শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি অতি মূল্যবান বছর খোয়া যাবে।  স্বভাবতই সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।  হয়তো অনেক শিক্ষার্থী কাজে ঢুকে পড়বে। এক বছর গ্যাপের পর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিষয়ে মনোবল হারিয়ে ফেলতে পারে।  ফলে মা, বাবা ও অভিভাবকদের  স্বপ্ন ভঙ্গ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তবে কোনো কোনো ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে “ক্লিয়ারিং প্রসেস”(Clearing Process) এর সুযোগ নিতে। এর মানে হলো যদি কোনো শিক্ষার্থী এক্সাম বোর্ড  ঘোষিত তার বর্তমান প্রাপ্ত ফলাফল বা আপিলের পরে প্রাপ্ত ফলাফল দিয়ে তার প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ না পায়, তাহলে সময় ক্ষেপন না করে সে বা তারা যেনো অন্য কোনো ইউনিভার্সিটিতে তার পছন্দের বিষয় বা অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে  চেষ্টা করা।  তাহলে অন্তত একটি বছর নষ্ট হবে না। এদিকে  অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি মনে করে যে, এবারের এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল নির্ভরযোগ্য হয়নি।  স্টেট স্কুলের(State School) অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ সান্ডারল্যান্ডের একটি স্টেট স্কুলের মোট ৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২ জনের অনুমানভিত্তিক গ্রেডকে  একধাপ বা তার বেশি অবনমিত বা  ডাউনগ্রেডেড করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় শতভাগ লাভবান হয়েছে প্রাইভেট (Private) ও গ্রামার (Grammar) স্কুলের শিক্ষার্থীরা।  তিন হাজার অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট স্বাক্ষরিত এক যৌথ চিঠিতে ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে  যে, ফলাফল যাই হোক না কেনো ভর্তির ব্যাপারে  শিক্ষার্থীদের দেয়া তাদের অফারের(Offer) পূর্ব প্রতিশ্রূতির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে তাদের যাতে গ্রহণ করে নেয়া হয়। আশ্চর্যজনক  হলেও সত্য তিন হাজার স্বাক্ষরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্বাক্ষর নেই।

ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে – এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ না হলেও “বিটেক” পরীক্ষার ফলাফল বেশ সন্তোষজনক হয়েছে। এর অন্যতম কারন হলো  বিভিন্ন বিষয়ে বেশির ভাগ লিখিত পরীক্ষা কোভিড -১৯ এর কারণে স্কুল ও কলেজ সমূহ বন্ধের আগেই সম্পন্ন হয়েছিল।  তাই বিটেক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে তেমন কোনো হা হুতাশ শোনা যাচ্ছে না।

এদিকে গত ১১ই অগাস্ট, মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডে – এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।  প্রায় পঁচাত্তর হাজার শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।  স্কটিশ এক্সাম বোর্ড –  স্কুল ও কলেজসমূহের বিগত বছরগুলোর প্রাপ্ত গ্রেডকে বিবেচনায় এনে চলতি  বছরের গ্রীষকালীন পরীক্ষার  চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে।  এর ফলশ্রতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গ্রেড  মডারেটিং  পদ্ধতির (Moderating  System) কারণে এক ধাপ বা তারও  বেশি অবনমিত বা ডাউনগ্রেডেড করা হয়। পরিসংখ্যান থেকে  আরো দেখা যায় যে, গরীব এলাকায় হাইয়ার পাশ রেট (Higher Pass Rate) কমেছে শতকরা ১৫ দশমিক ২ ভাগ আর ধনী এলাকায় বেড়েছে শতকরা প্রায় ৭ ভাগ।  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিবাদের মুখে স্কটিশ সরকার পুরো এ লেভেল রেজাল্টকে বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। মডারেটিং পদ্ধতির ভুলের কারণে  ফলাফল অরাজকতার কথা স্বীকার করে স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন সব  শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের কাছে নিঃস্বার্থ ক্ষমা চেয়েছেন।  স্কটিশ সরকারের  পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এখন শিক্ষকদের পাঠানো অনুমানভিত্তিক গ্রেডের উপর ভিত্তি করেই নতুন করে এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল আবার প্রকাশ করা হবে।

ধারণা করা হচ্ছে  করোনা মহামারীর কারণে বৃটেনের ইউনিভার্সিটিগুলোতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিদেশী শিক্ষার্থীদের  আগমন খুব একটা ঘটবে না।  বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে এরই মধ্যে জানা গেছে যে, বিদেশী  শিক্ষার্থীদের ভর্তি(Admission) চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে ইউনিভার্সিটিগুলো। শত শত ইউনি  শিক্ষক ও কর্মচারী  এরইমধ্যে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। তাই আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্বদেশী শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে  ইউনিভার্সিটিগুলো তাদের দরজা হয়তো  উম্মুক্ত  রাখবে । হয়তো তারা ভর্তির  ব্যাপারে আরো নমনীয় মনোভাব দেখাবে। হাজার হাজার মা, বাবা ও অভিভাবকের প্রত্যাশা তাই যেনো হয়।  কারন কোনো অভিভাবকই চান  না যে, তার সন্তানের জীবন থেকে  ফলাফল ভরাডুবির অযুহাতে  একটি বছর হারিয়ে যাক।  চলতি সপ্তাহে সমগ্র বৃটেনে জিসিএসই  করোনা ব্যাচের ফলাফল প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।  কয়েকজন জিসিএসই  শিক্ষার্থী ও তাদের মা, বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে, এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফলের বিশৃঙ্খল চিত্র দেখে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দুঃশ্চিন্তার মাঝে দিনাতিপাত করছেন।  ফলাফলের কথা চিন্তা করে এখনই বুকে এক ধরণের কম্পন অনুভব করছেন।  তাদের ধারণা এখন নিশ্চয়ই সরকারের  টনক নড়বে।  গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিতর্কিত ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হয়তো  জিসিএসই এর  ক্ষেত্রে  ঘটবে না।

লেখকশিক্ষকপরীক্ষকসাংবাদিক  কমিউনিটি কর্মী, লন্ডন   

(লেখাটি সম্প্রতি  সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল)

আরও পড়ুন:

টিভি সাংবাদিকতা : আমার স্বপ্ন ও ভাবনা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন