মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১৮টি আদিবাসী খাসি পুঞ্জিপ্রধান ও যুব প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসময় তাদের বিভিন্ন দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন পুঞ্জি প্রধানরা।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
বক্তব্য রাখেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন, বেরেঙ্গাপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) অলমি পঃতাম, ৭ নম্বর পুঞ্জির সাবেক মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) এলিয়াস বারেঃ, মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক টারজেন পাপাং, খাসি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কো-অর্ডিনেটর জসিনতা সুমের, খাসি ইয়ুথ ক্লাবের উপদেষ্টা প্রবীণসন সুছিয়াং, নালিখাইপুঞ্জির প্রতিনিধি কারেক ধার প্রমুখ।
সভায় খাসি পুঞ্জিপ্রধান ও যুব প্রতিনিধিরা ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন, দুর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুঞ্জিতে সিঁড়ি নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর উন্নয়নসহ বেশ কিছু দাবি জানান।
বক্তব্যে খাসি ইয়ুথ ক্লাবের উপদেষ্টা প্রবীণসন সুছিয়াং বলেন, ‘সম্প্রতি কুলাউড়ায় দুস্কৃতিকারীরা আদিবাসীদের ওপর হামলা করেছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল, বনখেকো ও দুর্নীতিবাজ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধুলিসাৎ করতেই মূলত সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। এর তীব্র নিন্দা এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বনের সাথে আমাদের মনের সম্পর্ক, প্রকৃতির সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় খাসিদের অনেক অবদান রয়েছে। এটা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরাও স্বীকার করবেন। কিন্তু বনবিভাগের কিছু লোকজন বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক বনায়নের নামে বন ধ্বংস করছে। খাসিদের উচ্ছেদের পায়তারা করছে। আমরা এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, ‘আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে পুলিশ সবসময় পাশে আছে। কোনো সমস্যা হলে দ্রæত জানালে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের সুবিধা হয়। বনাখলাপুঞ্জির জুম দখল ও আগারপুঞ্জির পান গাছ কাটার ঘটনার মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই এই মামলার চার্জশীট আদালতে দেওয়া হবে। ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সকল ধরণের মানবাধিকার সংরক্ষণ করা। সেই অঙ্গীকারের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও সকল সরকারি দপ্তর আদিবাসীদের পাশে আছে। পানির সমস্যা নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে করা হবে। ধাপে ধাপে সকল সমস্যাগুলোর সমাধান করে দেওয়া হবে।
এসময় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লাথল পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) লুকাস বাহাদুর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের মাধবকুন্ড পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) ওয়ানবর এলগিরি, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগারপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) সুখমন আমসে, বনাখলাপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) নরা ধার, গান্ধাইপুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) রাজেশ পঃন্না, খাসি ইয়ুথ ক্লাবের সভাপতি সিতেশ খংলাঃ, খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বড়লেখা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাইকেল নংরুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।