নানকার আন্দোলনের পথ ধরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন,তারপর স্বাধীনতা আন্দোলন, সর্বশেষ গণমানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে যে কয়জন বীর সেনানী দেশপ্রেমিক বিয়ানীবাজারের সন্তান আত্মাহুতি দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন, এদের মধ্যে একজন হলেন হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির একদলীয় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হোন কালের শ্রেষ্ট সন্তান হুমায়ুন কবির চৌধুরী নাহিদ। সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নে আদিনাবাদ গ্রামের ফখর উদ্দিন চৌধুরী ও রওশন আরা চৌধুরীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে নাহিদ ছিলেন প্রথম সন্তান। জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯৭৬ সাল।
নাহিদের সাথে আমার পরিচয় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে লেখাপড়া করার সুবাদে।দুজনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। বিভিন্ন সময় হাজারও ছাত্রের ভিড়ে জয়বাংলার মিছিলে উভয় সামিল হলেও ব্যাক্তিগত ভাবে তার সাথে আমার পরিচয় ছিল না।
একদিন কলেজের অফিস রুমে কলেজের এক কর্মচারির সাথে অন্য এক ছাত্রের অসদাচরণে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে নাহিদ।সে কারণে তাকে অপদস্ত হতে হয়েছে। এই ঘটনায় সাধারণ ছাত্ররা নাহিদের পক্ষ অবলম্বন করলে,পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এবং এক পর্যায়ে কলেজ শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে তা সমাধান হয়।
সেদিন আমি কলেজে উপস্থিত ছিলাম না। সেদিন বিকেল বেলা নাহিদের কয়েকজন সহপাঠী নাহিদসংশ্লিষ্ট কলেজের এই ঘটনাটি আমাকে জানায়। তারা প্রত্যেকেই এই অনাকাঙ্খিত ঘটনারর জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং নাহিদ সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলেন।
তারা নাহিদের চরিত্র সম্পর্কেও আমাকে অবহিত করে। নাহিদ সম্পর্কে তাদের সকলের বক্তব্য শোনার পর নাহিদকে চেনার আগ্রহ আমার জাগে।আমি নাহিদের সহপাঠীদেরকে বললাম, নাহিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। দু-চার দিন পর নাহিদ কলেজে আসলে তাঁর এক সহপাঠী জানালো,নাহিদ কলেজে এসেছে,আজ তাঁর সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেবে।
নাহিদ কলেজের ক্লাশ শেষে যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল, তখনই, তাঁর এক সহপাঠী নাহিদকে কলেজ গেইটে যাবার প্রায় ৪০ হাত দূরে দাঁড় করিয়ে আমাকে ডাক দিল এবং এখানেই ‘নাহিদ‘ নামের সাথে মানুষেরও পরিচয় হল। তাকে আমি ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পূর্বেই জানতাম,কিন্তু নাম জানতাম না। বয়স এবং লেখাপড়ায় জুনিয়র হওয়ার কারণে হয়তো খুব কাছে আসতো না, তাই বলে হয়তো নামের সাথে মানুষের পরিচয় হয়নি।
এই সময়ই সরাসরি প্রথম কথাবার্তা এবং তাঁর আচরণ দেখে আমি তাঁর প্রতি মুগ্ধ হলাম। সে যেমন মেধাবী ছিল তেমন বিনয়ীও। এই দেখার পর থেকে তার সাথে আমার সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে।
প্রসঙ্গত, এই সময় ছিল দেশের ক্রান্তিকাল। তৎকালিন বিএনপি সরকার ও তাদের দলীয় কর্মীদের অত্যাচারে মানুষ ছিল অতিষ্ঠ। যা ছিলো নব্বইয়ের স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।
স্বৈরাচার এরশাদের ভোট ডাকাতি,জালিয়িাতি,নির্যাতন,নিপীড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে এদেশের হাজারও প্রতিবাদী মানুষের সংগ্রামে আমি নিজেও একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। মানুষের ছিল একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন।সে সময়,এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। অনেকের সম্পদ তৎকালিন সরকার কর্তৃক বিনষ্ট হয়েছে। মানুষের ত্যাগ ও সর্বদলীয় কঠোর আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে ১৯৯০ সালে। এই আন্দোলনে সকল বিরোধী দল দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করতে আগামী তিনটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্তে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল।
সেই অনুসারে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিছুদিন যেতে না যেতে, দেশ পরিচালনায় স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের দু:শাসনে বাংলাদেশের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে। রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় সকল ক্ষেত্রে তাদের দলীয়করণ,বিচারহীনতা,দুনীর্তির প্রতিবাদ করতে আবারো রাজপথে নামতে হয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে।তাঁর ডাকে সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজারের রাজপথেও প্রতিবাদী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সেই মিছিলে আমাদের সাথে নাহিদ অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলন দিনে দিনে তীব্র হতে তীব্রতর হয়ে ওঠে।
দুই.
জাতীয় আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অধিকার প্রতিষ্ঠায় তৎপর ছিলাম। আমাদের সময়ে বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে প্রায়ই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। ১৯৯৫ সালে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা যেমন কলেজ কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট করতে ব্যস্ত ছিলাম, তেমনি ছাত্রছাত্রীদেরকে নির্বাচনে উদ্বুদ্ধ করতে তৎপর ছিলাম। আমাদের কলেজে একটি নিয়ম ছিল- ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অথবা ভোট দিতে হলে অবশ্য সেই ছাত্র অথবা ছাত্রীকে তার বেতন পরিশোধ করতে হবে। অন্যতায় ভোটার লিষ্টে তাদের নাম অর্ন্তভুক্ত হতো না।
১৯৯৫ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমি ছিলাম সম্ভাব্য ভিপি পদপ্রার্থী। এভাবে সম্ভাব্য বিভিন্ন পদে আগ্রহী প্রার্থীদের নিয়ে আমি একটি টিম গঠন করি। এবং কলেজ কর্তপক্ষের কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা নিয়ে আমার গঠন করা টিম নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে দেখা করে তাদের বেতন পরিশোধ করতে ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে উদ্ভুদ্ধ করি।
ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকায় চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের একজন ছাত্রের সাথে আমাদের গ্রুপের কারো দেখা হয়নি। আমার ভাবনায় আসল তাকে ভোটে উদ্ভুদ্ধ করতে হলে আমাকে তার সাথে দেখা করতে হবে সেই অনুসারে একদিন সকালবেলা আমি, একা আমার মটর সাইকেল নিয়ে রওয়ানা হই চারখাই বাজারের দিকে। চারখাই বাজারের একটি দোকানে প্রায়ই বসত আমাদের সেখানকার স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আমি সেই দোকানে গিয়ে দোকানির কাছে জানতে চাইলাম বাজারে আমাদের ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী এসেছে কিনা ?
তিনি আমাকে বসতে বলে সন্ধানে বের হলেন এবং নাহিদকে পেয়ে সাথে করে নিয়ে এলেন। নাহিদের সাথে কুশল বিনিময়ের পর বললাম, আমি বারইগ্রামে যাব একজন ভোটারের সাথে দেখা করবো,আমি চিনি না তুমি আমার সাথে যেতে হবে। নাহিদের পরণে লুঙ্গি থাকায় সে ইতস্ততার মধ্যে ছিল,তার লজ্জা হচ্ছিল,কিভাবে লুঙ্গি পরে এতদূর অন্য গ্রামে যাবে। আমি তাকে বললাম, এখানে লজ্জা কি,চলো আমার সাথে,আমার কথামত সে মটর সাইকেলের পেছনে উঠলো।আর তাকে নিয়ে আমি বারইগ্রামে গেলাম এবং তাকে সাথে নিয়ে আবার ফিরে এলাম। যেতে আসতে তার সাথে যে কথা হয়েছে, এটাই তার আমার শেষ কথা। তাকে মটর সাইকেল থেকে নামিয়ে যে বিদায় নিয়েছিলাম এটাই তার আমার জীবিত থাকার সময়কার শেষ বিদায়।
নাহিদের মৃতদেহ দেখার পূর্বে আর তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কারণ এই সময় সে ছিল এইচএসসি পরীক্ষার্থী।পরীক্ষার অনেক পূর্বেই কলেজে তাদের পাঠদান শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সে আর কলেজে আসেনি। কিন্তু দেশব্যাপী বিএনপি সরকারের অত্যাচার,নির্যাতনের প্রতিবাদ ও মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের যে আন্দোলন চলছিল,সেই আন্দোলনকে গতিশীল করতে সে স্থানীয়ভাবে সব সময় সক্রিয় ছিল।
বলে রাখা ভালো যে, এই আন্দোলন বিয়ানীবাজার উপজেলা সদরের পরপরই সবচেয়ে বেশী সক্রিয় আন্দোলন করেছে চারখাই ছাত্রলীগ ইউনিট। কারণ চারখাই ছিল জকিগঞ্জ,কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে মিলনস্থল। সে কারণে সেখানে মানুষের সমাগম হতো বেশি। আর সেই মানুষের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিতে চারখাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কমিটি ছিল সক্রিয়। আমরা উপজেলা সদর থেকে তখন আন্দোলনের যে বার্তা পৌঁছাতাম, তা সেখানকার নেতাকর্মীরা যথাযথভাবে পালন করতো।
নাহিদ ছিল সে সময় চারখাই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দলের জন্য ছিল এক নিবেদিতপ্রাণ। স্থানীয় আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। রাজনীতিতে নাহিদের সময়কাল দুবছরের কম হলেও সেই অল্প সময়ের মধ্যে তার মেধা, আচার ব্যবহার ও সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে সে হয়ে ওঠে ছিল সকলের প্রিয় মুখ।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে হয়, ১৯৯৫ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন আবেদন না করা সত্ত্বেও মনোনয়ন বোর্ড তাকে একটি পদে মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু যথা সময়ে তার পূর্ণাঙ্গ নাম এবং তথ্যাদি না পাওয়ার কারণে সে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা থেকে বাদ পড়ে।
বিয়ানীবাজারে ১৯৯৬’র প্রহসনের নির্বাচন প্রতিরোধে ছাত্রলীগ ছিল অগ্রভাগে
স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের দাবীতে সরকার বিরোধী তিন জোটের দাবী ‘তত্তা¡বধায়ক সরকারের অধীনে আগামী তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ সম্পন্নের যে চুক্তিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট স্বাক্ষর করেছিল এবং পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু পরবর্তিতে ক্ষততাসীন এই বিএনপি-ই তিন জোটের চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাদের অধীনে করার সিদ্ধান্তে উপনীত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবীটি গণদাবীতে পরিণত হয়।
সেই সময় এই দাবীর পক্ষে দেশের সর্বস্তরের মানুষের একাত্বতা ঘোষণার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নেতৃত্ব জনতার মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেই মঞ্চ ঘিরে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটতে থাকে এবং প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরেও বিভিন্ন পেশার মানুষও এই দাবীতে একাত্বতা ঘোষণা করতে থাকে।
এমনকি সচিবালয় থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও মঞ্চে এসে একাত্বতা ঘোষণা করেন। এই জনতার মঞ্চের আন্দোলন স্বল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র দেশে ব্যাপ্তি লাভ করে। আমরাও তখন দক্ষিণ বিয়ানিবাজারে জনতার মঞ্চ তৈরি করি। সেখানে কলেজ স্কুলের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এসে একাত্বতা ঘোষণা করে। এই আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে সরকার বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের পরিকল্পিত মামলা দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়। আমি নিজেও কয়েকটি মিথ্যা মামলার আসামী ছিলাম। এই আন্দোলন করতে গিয়ে সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন সমূহের অসংখ্য কর্মী আহত ও নিহত হয়।
সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল বিএনপি সরকার তত ভীত হয়ে তাদের অধীনে পাতানো একটি নিার্বচনের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যা ছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন। এই প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগসহ সকল বিরোধী দল সাড়া দিল। এবং নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের স্ব স্ব দলের কর্মী এবং জনগণকে এই আন্দোলনে আরো সক্রিয় করার জন্য জেলায় জেলায় লাগাতার সভার আয়োজন করতে লাগলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ অনুসারে জেলায় নেতারাও উপজেলায় উপজেলায় তাদের কর্মীদের উদ্ভুদ্ধ করতে লাগলেন। আমরাও জেলার নেতাদের নির্দেশ অনুসারে বিভিন্ন ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে নিবার্চন প্রতিহতের জন্য তাদের প্রস্তুত করি। এই দীর্ঘ আন্দোলনে আমাদের এক-একটি কর্মী এক-একটি যোদ্ধায় পরিণত হয়।
আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে যতই জন সম্পৃক্ততা পেতে থাকল বিএনপির নেতাকর্মীরা তত নিষ্ক্রিয় হতে থাকল। বলতে গেলে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ভোট সেন্টারে না থাকলে না হয় বিএনপির এমন কিছু নেতা ছাড়া কোন কর্মী বা সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি ছিল না। শুধু পুলিশ, বিডিআর ও সেনাবাহিনী ছিল তাদের নির্বাচনের পক্ষে সক্রিয়। তাই অতি সহজেই সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্র প্রতিরোধকারীদের দখলে চলে আসে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার উপজেলায় ৫৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স দুপুরের পূর্বে নির্বাচন প্রতিরোধকারীরা ছিনিয়ে নিয়ে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়। আর যে কটি ভোট সেন্টারে জোরপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হয়,সেই কেন্দ্রগুলোতে প্রতিরোধকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়।
আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে প্রতিরোধের দায়িত্ব দেয়া হয় সেই এলাকার স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপর। এবং বলা হয় প্রতিরোধ করার পর যাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে না পারে,সে জন্য তাদেরকে লোকালয় এবং হাটবাজার থেকে দূরে সরে থাকতে। প্রতিরোধকর্মীরাও তাই করে।
বাবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে নাহিদ প্রতিরোধে গিয়েছিল
নির্বাচন প্রতিহত করতে যে কয়টি ভোটকেন্দ্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিরোধকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়,তার মধ্যে একটি হলো- চারখাই ইউনিয়নের পল্লীশাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রে বিএনপির গুটিকয়েক সমর্থকদের উপস্থিতিতে পুলিশের সহযোগিতায় ভোটার বিহীন অবস্থায় ভোট গ্রহনের মহড়া চলছিল। এই সংবাদ স্থানীয় প্রতিরোধকারীদের কাছে পৌছালে তারা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
নাহিদ সময়মত প্রতিরোধকারীদের সাথে যোগ দিতে ব্যর্থ হয় কারণ এই দিন নাহিদকে বাড়ীর বাহিরে যেতে বারণ করেন তার বাবা। বাবা জানতেন এই দিন আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে প্রতিরোধকারীদের সংঘর্ষ হবে, এতে যে কেউ আহত অথবা নিহত হতে পারে। এই অবস্থায় যে কোন মা -বাবা তার সন্তানকে আগলে রাখবে এটাই স্বাভাবিক।
নাহিদের বাবা সকাল থেকে নাহিদকে চোখে চোখে রাখলেও নাহিদ ভোট প্রতিরোকারীদের সাথে যোগ দিতে বার বার বাবার চোখ ফাঁকি দেয়ার চেষ্টায় ছিল। নাহিদ জানত- কোথায় প্রতিরোকারীরা তার জন্য অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিরোধকারীদের সাথে যোগ দেয়া তার জন্য হয়ে উঠে এক বড় সমস্যা।
এক পর্যায়ে নাহিদ বাড়ীর বাহিরে যাবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। নাহিদের বাড়িতে কাজের লোক অনুপস্থিত থাকায় তার বাবা তাদের দুধের গাভীটি বাড়ীর সামনের মাঠে বেঁধে রাখতে যান। নাহিদ বাড়ীতে বাবার অবর্তমানে ঘরের ভেতরে গিয়ে প্যান্ট পড়ে তার উপড়ে লুংগি পড়ে। নাহিদের প্যান্টের উপড়ে লুংগি পড়ার কৌশল ছিল -তার বাবা যাতে কোন অবস্থায় বুঝতে না পারেন সে প্রহসনের ভোট প্রতিরোধে অংশ গ্রহন করতে যাচ্ছে।
নাহিদ বাড়ি থেকে বের হয়ে একসুযোগে লুংগি খুলে ফেলে যোগ দেয় অপেক্ষারত তার প্রতিরোধকারী বন্ধুদের সাথে। নাহিদের নেতৃত্বে প্রতিরোধকারী দল ছুটে চলে যায় চারখাই পল্লিশাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট সেন্টারে। তখন বেলা প্রায় দুইটা। সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা ভোট প্রতিহতের চেষ্টা চালায়। এতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরোধাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গণমানুষের ভোটাধিকার আদায়ের অগ্রসেনানী হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদ।
সেই সময় গুলিবিদ্ধ নাহিদকে তার সহপাঠীরা ধরাধরি করে অন্যত্র নিয়ে যায় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন অবস্থাতে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারাতে তার অবস্থার অবনতি হতে দেখে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে নিয়ে সিলেট শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কিন্তু পূর্বে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সিলেট পৌঁছার পূর্বেই নাহিদ তার চাচাতো ভাই মাজেদ আহমদ চৌধুরীর কুলে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
নাহিদের মৃত্যু সিলেটবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে
নাহিদের এই করুণ মৃত্যুর সংবাদটি তখন অন্যান্য এলাকায় প্রতিরোধকারীদের কাছে দ্রুত পৌঁছেনি। আজকের দিনের মতো মোবাইফোনের সহজ যোগাযোগ সুবিধা ছিল না। সেই দিন, আমাদের কৌশল ছিল প্রতিরোধ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনির হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে আত্মগোপনে যাওয়া। সেই কারণে সবাই ছিল একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন। আমিও সেদিন নিজ কেন্দ্রে ভোট প্রতিরোধ করে আর নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাইনি।
গভীর রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে যাই। ভোরবেলা আমার বাড়িতে হাজির হন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক বার্ষিকী সম্পাদক, বর্তমান দৈনিক কালের কণ্ঠের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বন্ধু আজিজুল পারভেজ। সে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললো,তুই কি জেনেছিস নাহিদ গতকাল পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। আমি প্রথমে তার কথা বিশ্বাস করতে পারিনি। পরক্ষণে সে বললো, আমি কি এতো ভোরে তোর কাছে এসেছি তামাশা করতে। তুই তাড়াতাড়ি উঠ,নাহিদের বাড়িতে যেতে হবে।আমি তার এই কথার দৃঢ়তা দেখে বিশ্বাস করলাম নাহিদের মৃত্যু সংবাদটি। মৃত্যু সংবাদটি বিশ্বাস হলেও মেনে নেয়া আমার পক্ষে কষ্ট হল। আমি তখন নিজের মধ্যে অস্বাভাবিকতা বোধ করতে থাকলাম।
আমার চোখের সামনে তখন কলেজ জীবনের কলেজের গেইটের পাশে প্রথম পরিচয়ের সেই হাসিমাখা মুখটি বার বার ভাসতে থাকে। আমি নিজেকে অনেক কষ্ট করে সামাল দিয়ে নিজের মটর সাইকেল যোগে রওয়ানা দিলাম চারখাই নাহিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে পৌঁছে তার মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন ও আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ক্রন্দন দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না। নাহিদের মৃত মুখ দেখে নিজের চোখে অঝোরে জল আসে। নিজেকে বার বার চেষ্ঠা করেও যেন সামলাতে পারছিলাম না। এখানে যেন কেউ কাউকে শান্তনা দেয়ার নেই,সবাই শিশুর মত কাঁদছে।
এদিকে যত সময় যাচ্ছে,নাহিদের বাড়িতে তার আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটতে যাচ্ছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। সকলের উপস্থিতিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অনুমান ৫ঘটিকার সময় নাহিদের বাড়ির সামনের মাঠে নামাজে জানাজা সম্পাদনের মাধ্যমে নিজ পারিবারিক কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয় সময়ের সাহসী সন্তান প্রজন্মের এক উজ্জ্বল তারণ্যকে।
সেদিন নিজ হাতে প্রিয় সহযোদ্ধা নাহিদকে দাফন শেষে ফিরে যাই নাহিদের বাড়িতে। নাহিদের মা-বাবা ভাই বোনকে শান্তনা দিতে। নাহিদের বাড়িতে আমাদের সকলকে দেখে ক্রন্দনরত অবস্থায় তার মা বার বার তার নাড়ীছেড়া ধন নাহিদ হত্যাকারীদের বিচার চাইতে থাকেন। আমাদের কাছে নাহিদের মাকে শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা ছিল না। শুধু বলছিলাম ,আপনি শান্ত হন,নাহিদ চলে গেছে ঠিকই তার অবর্তমানে আমরা আপনার সন্তান হিসেবে সব সময় পাশে থাকবো।
এদিকে, নাহিদের মায়ের এই আহাজারি দেখে আমাদের ছাত্রলীগের কিছু নেতা কর্মী উত্তেজিত হয়ে ছুটে চলে যায় স্থানীয় চারখাই বাজারে। সেখানে ভোটের দিন পল্লী শাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট সেন্টারে যে কজন বিএনপির কর্মী পুলিশকে সহযোগিতা করছিল তাদেরকে খুঁজতে থাকে। তাদেরকে না-পেয়ে উত্তেজিত কর্মীরা বিএনপির স্থানীয় অফিস ভাঙচুর করে। আমরা যারা ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ নাহিদের বাড়িতে অবস্থানরত ছিলাম এই সংবাদ শুনে ছুটে চলে যাই চারখাই বাজারে এবং উত্তেজিত কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করি।
এখানে সকলের উপস্থিতিতে তখন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন বিয়ানীবজার উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক জনাব আবদুল বারী। তার বক্তৃতায় বলেন,আমরা নাহিদ হত্যার বিচার চাই। তবে তা হবে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।এবং আইন যাতে কেউ নিজের হাতে না তুলেন- সেই অনুরোধ জানান এবং সবাইকে শান্তভাবে যার যার বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন।
পরবর্তীতে যে পুলিশের গুলিতে নাহিদ নিহত হয়েছিল তাকে প্রধান আসামী এবং তার সহযোগী হিসেবে স্থানীয় ওহিদ তালুকদার ও ছাদন মেম্বারকে আসামী করে মামলা দায়ের হয়। আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। ছাত্রলীগের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিয়ানীবাজার উপজেলা পুলিশ প্রশাসন আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়টি আমলে না নিলে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের শত শত কর্মী বিয়ানীবাজার থানা ঘেরাও করে। তখন এভাবেই নাহিদ হত্যার বিচারের দাবীতে ছাত্রলীগের চলতে থাকে বিভিন্ন কর্মসূচী।
সিলেট ৬ আসন বিজয়ে শহীদ নাহিদ এর আত্নত্যাগ ছিল মূলমন্ত্র
এদিকে, নাহিদ হত্যার কিছুদিন পর শোক ও হত্যার বিচারের দাবীতে চারখাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল সভা। উক্ত সভায় সিলেট জেলা সহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন আবদুস সামাদ আজাদ, দেওয়ান ফরিদ গাজী,হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী,সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও নুরুল ইসলাম নাহিদ। নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় আমাদেরকে আশ্বস্থ করেন যে, দল ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন হলে নাহিদ হত্যার বিচারসহ তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার নামে কোন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হবে।
আমরা নেতৃবৃন্দের কথায় আস্থা রেখে গণমানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলন অব্যাহত রাখলাম।ইতোমধ্যে প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাহিদ সহ যে ২৩টি তাজাপ্রাণ ঝরেছিল,তাদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য হাত প্রসারিত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় ফান্ড থেকে নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা অনুদানের একটি চেক নাহিদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। জননেত্রীর এই অনুদান আমাদেরকে আরো উৎসাহিত করে মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে গতিশীল করতে।
অবশেষে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশব্যাপী গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন বিএনপি নিরেপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের মেয়াদকালে সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ১২ জুন ১৯৯৬। উক্ত নির্বাচনে জনগণের ম্যানডেট নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এবং আমাদের নির্বাচনী আসন সিলেট-৬, বিয়ানীবাজার- গোলাপগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদানকারী নুরুল ইসলাম নাহিদ নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হওয়াতে আমরা বিয়ানীবাজার আওয়ামী পরিবার আশান্বিত হয়েছিলাম যে, তার মাধ্যমে জননেত্রীর সহযোগিতায় শহীদ হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদের নামে বিয়ানীবাজার অথবা সিলেট বিভাগের যে কোন স্থানে কোন প্রতিষ্ঠান তার নামে নামকরণ করা হবে।
ভোটাধিকার আন্দোলনে সিলেট বিভাগের প্রথম শহীদ
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে হয়, এই গণমানুষের ভোটধিকার আদায়ের আন্দোলনে সিলেট বিভাগে একমাত্র আত্মাহুতি দানকারী হলেন হুমায়ূন কবির চৌধুরী নাহিদ। নুরুল ইসলাম নাহিদ আমাদের সংসদীয় আসনের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ আমাদের সহযোদ্ধা শহীদ নাহিদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং পরবর্তী প্রজন্ম -শহীদ নাহিদ সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগাতে শহীদ হুময়ূন কবির চৌধুরী নাহিদের নামে বড় ধরনের একটি প্রজেক্ট গ্রহণের অনুরোধ জানাই। আমাদের নেতৃবৃন্দের একটি বিশ্বাস ছিল-শহীদ নাহিদের নামে কোন প্রজেক্ট গ্রহণ করলে আমাদের নির্বাচিত এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ তা বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে প্রতিটি জনসভায় মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করতেন ,শহীদ নাহিদের আদর্শ চিন্তা চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতেন। যা আমরা তার প্রতিটি জনসভায় উপস্থিত থেকে শুনতাম।যে মানুষটি তার নির্বাচনী প্রতিটি সভায় শহীদ নাহিদের সম্মানে তার আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাকে ভোট দেয়ার আহবান জানাতেন। তার উপরেই তো শহীদ নাহিদকে নিয়ে কিছু করার আস্থা রাখাটা স্বাভাবিক।
কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হয়, যে মানুষটি শহীদ নাহিদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিবার্চনী বৈতরণী পার হয়ে এমপি নির্বাচিত হলেন এবং পরবর্তীতে আরো দু-মেয়াদে এমপি ও মন্ত্রী হয়েও স্ব-উদ্যোগে শহীদ নাহিদের স্মৃতি ধরে রাখতে উল্লেখযোগ্য তার কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ গোটা বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী পরিবার ও এলাকার সাধারণ জনগণ । এমন অবহেলা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছ থেকে জনগণ আশা করেনি ।
নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব যখন প্রথম শিক্ষামন্ত্রী‘র দায়িত্ব গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যে সফরে আসেন, তখন তাকে যুক্তরাজ্যস্থ বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জবাসির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । তার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ইস্ট লন্ডনে ব্রিকলেনের একটি রেষ্টুরেন্টে নেতৃবৃন্দের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি মানপত্র লেখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সভায় আমি শহীদ নাহিদের স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামকরণের প্রস্তাব করলে সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয়।
মানপত্রটি যে দুজনকে লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়, এদের মধ্যে একজন ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এর ঘনিষ্টজন। অনুষ্ঠানের দিন নাহিদ সাহেবের উপস্থিতিতে যখন মানপত্র পাঠ করা হয়, তখন শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার সেই দাবিটি পাঠ করা হয়নি! আমি তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠি । মাইকে যখন আমাকে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান করা হয় তখন, শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার সর্বসম্মতিক্রমে ক্রমে অনুমোদিত দাবীটি কেন মানপত্রে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি- তা জানতে চাই । এবং সাথে সাথে শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া জন্য মাননীয় মন্ত্রীকে আহবান জানাই । শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার প্রস্তাব মানপত্রে না থাকার কথা জানতে পেরে সভায় উপস্থিত অনেকেই তখন নুরুল ইসলাম নাহিদের সামনে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারপরেও আমাদের সকলের বিশ্বাস ছিল যে, অনুষ্ঠানে পঠিত মানপত্রে দাবি উল্লেখ না থাকলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ যেখানে উপস্থিত থেকে আমাদের দাবি শুনেছেন, সেহেতু তিনি শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষায় একটি ইতিবাচক বক্তব্য রাখবেন ।
সভার শেষপর্যায় সংবর্ধিত অতিথি নুরুল ইসলাম নাহিদ তার বক্তৃতায় শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার পক্ষে কোনো কথা না বলায় আমাদের হতাশা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না। তখন বুঝতে আর সমস্যা হয়নি যে তারই ইঙ্গিতে মানপত্রে থেকে শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষার প্রস্তাবটি সরানো হয়েছে ।
দশ.
অগণিত নেতাকর্মীর আদর্শিক উজ্জীবনের নাম শহীদ নাহিদ
শহীদ নাহিদ একটি আবেগ, একটি ভালোবাসা ও একটি স্পন্দনের নাম । জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সে নিজের জীবন দিয়ে হাজার হাজার আওয়ামী কর্মী ও সমর্থকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। তা সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদরা বুঝতে ভুল করেনি । তাই সময়ে, অসময়ে তাদের রাজনীতির প্রয়োজনে শহীদ নাহিদের কবর জিয়ারতের ভান করে ছবি তোলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে তারা সুবিধা ভোগ করতে কোন ত্রুটি করেননি ।
সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে শহীদ নাহিদের মৃত্যু বার্ষিকী সামনে রেখে নাহিদের কবরকে কেন্দ্র করে চারপাশ ঘিরে থাকা বছরের পর বছর রোদ বৃষ্টিতে শেওলা পড়া কয়েকটি পাকা খুটিতে চুনকাপ দিয়ে তা ফেইসবুকে প্রকাশ করে সুবিধা ভোগি এই চক্রটি ।
ভোটের মৌসুমে, মৌসুমী পাখির মতো, শহীদ নাহিদ প্রেমিদের এই ভালোবাসার দৃশ্য দেখে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসি বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নূর উদ্দিন লোদী লিখেছেন- ‘ভোটের মৌসুমে শহীদ নাহিদের কবরে চুনকাপেও ছিল ভেজাল ও অবমাননার স্পষ্ট ছাপ। কবরের আটটি পিলারের সবকটিতে চুনের প্রলেপও ভালো করে পড়েনি। শহীদ নাহিদ একটি আদর্শের নাম। ভোটের সময় তার কবর পরিস্কার বা চুনকাপ দিয়ে ঘটা করে ফেইসবুকে না দিয়ে তার নামে অন্তত একটি স্কুলের নামকরণ করলে তার আত্না শান্তি পেত, পাশাপাশি তার আত্নত্যাগটি জনগণের কাজে আরও প্রস্ফুটিত হতো।’
একই সময় ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র নেতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি ছরওয়ার হোসেন শহীদ নাহিদের অবমাননা ও তার আত্মার সাথে প্রতারণার প্রতিবাদে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন তার ফেইসবুক একাউন্টে ও ‘বিয়ানীবাজার বার্তায়‘। যার শিরোনাম ছিল- ” বিয়ানীবাজারে নির্মিত হোক অন্ধকার বিনাশী প্রাণস্পন্দনের তীর্থকেন্দ্র ” । তার লেখায় একটি দাবি ছিল -ছোট মনের নেতাদের বড়মন নিয়ে হয়তো কিছু করা সম্ভব নয়। তাই শহীদ নাহিদের স্মৃতি রক্ষায় চারখাই বাজারের গুল চত্বরটি যেন শহীদ নাহিদের নামে নামকরণ করা হয়।
শহীদ নাহিদের কবর রং দেয়ার প্রায় দু -সপ্তাহ পর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কবর জিয়ারতের নামে ভূয়া আবেগের মহড়ায় অংশনেন তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ তার কিছু সঙ্গী সাথীরা । শহীদ নাহিদের কবরে রঙ করা ছিল একটি লোকদেখানো আবেগের মহড়া। নির্বাচনকে সামনে নিয়ে একটি পূর্ব প্রস্তুতি মাত্র । চুনকাপের কাজটিতে ছিলো না ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মূল উদ্যোশ্য ছিল- নাহিদের কবর জিয়ারতের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ হলে যাতে মানুষের সমালোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি কৌশল । কিন্তু তাদের এই চতুরাতি কর্মকান্ড হয়ে যায় হিতে বিপরীত ।
যখন তাদের মাজার জিয়ারতের চিত্র বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয় তখন, আমার একটি প্রতিবাদি লেখা প্রকাশ হয়েছিল ফেইসবুকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। শিরোনাম ছিল ‘শুধু মাজার জিয়ারত নয়, চাই শহীদ নাহিদের যথাযথ মূল্যায়ন’। আমাদের এই লেখাগুলো প্রকাশের পর তখন মৌসুমী আবেগ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে ।
চারখাই শহীদ নাহিদ চত্বরের এই দাবি অনেক আগের
চারখাই শহীদ নাহিদ চত্বরের এই দাবি নতুন নয় । ২০১১ সালের সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তখন, সমগ্র বাংলাদেশ এর ন্যায় বিয়ানীবাজারের চারখাই বাজারেও সরকারি জমির উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় । এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পরবর্তিতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্বাবধানে রাস্তা প্রশস্তের কাজ করা হয় । এবং বিয়ানীবাজার – সিলেট ও জকিগঞ্জ – সিলেট রাস্তার সংযোগ স্থল চারখাই বাজারের একটি গুল চত্বর স্থাপন করে কাজ শেষ হয় । তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এলাকার লোকজন গুল চত্বরটি শহীদ নাহিদের নামে নামকরণের দাবি করে ।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই দাবি আরো জোরালো হয় । স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি র কাছেও আবেদন করা হয় । এই সময় স্থানিয় একটি পক্ষ এই চত্বরটি মুক্তিযোদ্ধা চত্বর করার প্রস্তাব করলে তা থমকে যায় ।
এই সময় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ব্যারিষ্টার আবুল কালাম চৌধুরী এই বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেন। আমি বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক জনাব আতাউর রহমান খান ও তৎকালিন বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালিক মায়ন সাহেবের সাথে কথা বলি। উভয়েই শহীদ নাহিদের নামে চত্বরটি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। আব্দুল খালিক মায়ন সাহেব বলেন, ‘চারখাই বাজারের গুলচত্বর মুক্তিযুদ্ধাদের নামে করার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে উত্তম ।তাই বলে প্রস্তাবিত শহীদ নাহিদ চত্বর হবে না ,তা হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় বিয়ানীবাজার শহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রয়েছে। প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় বিয়ানীবাজারের অন্যান্য জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করবো। তবে চারখাই বাজারের চত্বরটি হবে শহীদ নাহিদের নামে।‘
তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন । এই আলাপের কয়েকমাস পর আব্দুল খালিক মায়ন সাহেব পরলোক গমন করলে শহীদ নাহিদ চত্বর বাস্তবায়নের উদ্যোগ ভাটা পড়ে।
অবশেষে ২০১৮ সালে শহীদ নাহিদের মৃত্যু বার্ষিকীতে লোক দেখানো কবর জিয়ারতের প্রতিক্রিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠলে নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব
কে ঘিরে যে সমস্ত নেতারা দীর্ঘদিন থেকে শহীদ নাহিদ’কে অবহেলায় রেখে ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, তারা হঠাৎ করে জনরোষ থেকে বাঁচতে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে শহীদ নাহিদের নামে গোল চত্বর বাস্তবায়নে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেন ।
অবশেষে জনগণের চাপের মুখে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে শহীদ নাহিদের আত্মদানের দীর্ঘ ২২ বছর পর চারখাই বাজারে নির্মিত হয়েছে শহীদ নাহিদ চত্বর। গণ মানুষের স্বার্থে প্রাণ দেয়া একজন শহীদের মূল্যায়নে দীর্ঘ ২২ বছর অপেক্ষা, তা বিয়ানীবাজারের মত রাজনৈতিক সচেতন অঞ্চলের জনগণের জন্য লজ্জা ও অপমানের।
শহীদ নাহিদদের আদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিলে কী ক্ষতি হয়?
শহীদ নাহিদরা যুগে যুগে জন্মায়। তারা সমাজে সংখ্যাঘরিষ্ট হয় না। তবে তাদের আদর্শিক চিন্তা, চেতনা ও কাজ সমাজে অগণিত ভালো কাজেই ব্যয়িত হয়। এজন্যই সমাজ তাদেরকে অমরত্ব দান করে। আমাদের উচিত শহীদ নাহিদের মতো চেতনাবহ মানুষের আদর্শকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। যাতে করে যুগের পর যুগ এই আদর্শে দেশের সাধারণ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। তাদের দেখানো পথে সমাজে মানুষজন কাজ করতে প্রেরণা পায়।
আমাদের উচিত তাদের আদর্শ বাস্তবায়নে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করা। শহীদ নাহিদের আত্নদানের দীর্ঘ বাইশ বছরে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য নতুন ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মৃত্যুর পর নিজ ইউনিয়ন ও বিয়ানীবাজারে অনেক সরকারী অবকাঠামোও নির্মাণ হয়েছে।
শহীদ নাহিদের মৃত্যূতে তার চেতনার স্ফোলিঙ্গ ও সেই সময়ের আবেগকে ভর করে নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবং পরবর্তিতে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নুরুল ইসলাম নাহিদ এর নামে একাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্মিত নতুন ভবনের নামকরণ বিয়ানীবাজারে করা হয়েছে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে- শহীদ নাহিদের নামে তারই দলের সংসদ সদস্য এবং রাজনীতির নেতৃস্থানীয়দের কোন উদ্যোগ কেন নেই, বা নেয়া হয়নি। এই প্রশ্ন সচেতন মহল ও পাঠকরা-ই হয়তো বলতে পারবেন।
স্মৃতি রক্ষার অবহেলায় সমাজে শহীদ নাহিদরা হারিয়ে যায়না। তাদের কর্মই স্থান করে নেয় মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায়। ইতিহাস তারই প্রমাণ।
প্রিয় শহীদ নাহিদ,
আজ তোমার ২৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। এই দীর্ঘ সময়ে তোমার যথাযথ মূল্যায়ণ না করা আমাদের জন্য লজ্জা ও অপমাণের। আমাদের ক্ষমা করো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত প্রগতিশীল ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসাবে এই দায়ভার বহন করেই আমাদেরকে দিন পার করতে হচ্ছে এখনও। এর চেয়ে বড় কষ্ট ও অপমাণ আছে বলে অন্তত আমার কাছে মনে হয়না।
ছরওয়ার আহমদ:সাবেক ভিপি;বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ, স্যোসাল এক্টিভিস্ট। লন্ডন।