প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। ইংল্যান্ডে ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলেছিল বাংলাদেশ, তার দু’বছর আগে আইসিসি ট্রফি জেতার সুবাদে। সেই থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশী ক্রিকেটভক্ত যেখানেই বিশ্বকাপের আসর বসেছে সেখানেই ছুটেগেছেন খেলা উপভোগ করার জন্য । ঠিক তার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারকার ২০১৯ বিশ্বকাপেও। ফ্রান্স থেকে লিমন ,ইতালি থেকে আফজাল, স্পেন থেকে রুহুলাআমিন,পর্তুগাল থেকে সিদ্দিক, ফিনল্যান্ড থেকে জাবেদ বেলজিয়াম থেকে মইনুল ,ডেনমার্ক থেকে কয়েছ, সুইডেন থেকে ফারুক সুইজারল্যান্ড থেকে মাহবুব , মাল্টা থেকে তানিম, পোলান্ড থেকে সোহাগ ছুটে গিয়েছেন বৃটেনের অভালে বাংলাদেশের ম্যাচগুলো সরাসরি দেখতে ।
বাংলাদেশের গত দুটি ম্যাচ উপভোগ করার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অনেকেই বলেন স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি খেলা দেখার আনন্দটাই অন্যরকম। তারা খুব উচ্ছসিত এবং খুব গর্বিত এই জন্যই যে, বাংলাদেশী টাইগারদের তারা সাহস জোগাচ্ছেন মাঠের মধ্যে উল্লাসিত হয়ে চিৎকার করে কিংবা আওয়াজ দিয়ে । তারা বলেন দেশ প্রেম এবং বাংলাদেশী টাইগারদের অনুপ্রেরণা যোগাতে তারা বারবার বিশ্বকাপের আসরে ছুটে যান । ওভাল স্টেডিয়ামের প্রত্যক্ষদর্শী লন্ডনের সিলেট প্রবাসী ইমরান শফি এবং পারভেজ আহমেদ জানান যে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী এসেছিলেন বাংলাদেশের সাথে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ খেলাটি উপভোগ করতে। এসময় স্টেডিয়ামে থাকা হাজার হাজার সিলেট তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেখা যায় বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে ।
ফ্রান্স থেকে ওভালে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী লিমন জানান স্টেডিয়াম কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল হাজার হাজার সিলেটি প্রবাসী দর্শকদের উপস্থিতিতে । আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী সিলেটের লন্ডন প্রবাসি আহবাব হোসেন বাপ্পি জানান, প্রথম ম্যাচে জয়ের উল্লাসে সিলেটী প্রবাসীরা স্টেডিয়ামের ভিতর যেভাবে বাধভঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল মনে হচ্ছিল যেন ইংল্যান্ডের বুকে ভেসে উঠছিল এক খন্ড সিলেট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু প্রবাসীরা বলেন এই ২০১৯ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে তাদের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে, অনেক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়তে হয়েছে কিন্তু শেষমেশ তারা খেলাটি উপভোগ করেছেন এবং এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তাদেরকে উল্লাসিত করেছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী কাজের চাপে ঈদের ছুটি না পাওয়ায় যেতে পারেনি তারা সরাসরি মেচ গুলি টেলিভিশনে উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে হাজার ব্যস্ততা ফেলে হলিডে নেয়ার চেষ্টা করছেন পরবর্তী ম্যাচ খেলা সরাসরি দেখার জন্য ইউরোপে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন । তারা বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়ে যাবে, স্বপ্ন হয়তো বাস্তবায়ন হবে । ফ্রান্সে বসবাসরত বেশ কয়েকজন সিলেটি প্রবাসী বলেন বাংলাদেশী টাইগারদের প্রাইজবন্ড হিসাবে কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন যদি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে ।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাইজ মানি দেয়া হচ্ছে এবার – চ্যাম্পিয়ন দল পাবে চার মিলিয়ন বা ৪০ লক্ষ ডলার, আর রানার্স আপ পাবে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলার। হেরে যাওয়া সেমিফাইনালিস্টরা পাবে ৮ লক্ষ ডলার করে। গত বিশ্বকাপের তুলনায় এবার প্রাইজমানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
২০০৩ সাল থেকে প্রায় প্রতি বারই ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রাইজমানি বেড়েছে। ২০০৩ সালে শিরোপাজয়ী দল পেয়েছিল ২০ লাখ ডলার।আর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সর্বমোট প্রাইজমানি দেয়া হচ্ছে ১৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর সাথে তুলনা করুন ১৯৭৫ সালের প্রথম বিশ্বকাপের। তাতে সর্বমোট প্রাইজ মানিই দেয়া হয়েছিল মাত্র ৯ হাজার ডলার।