শুরুতে বলে দেওয়া ভাল যে পান্তা-ইলিশের বিরোধীতা করছি বলে আমাকে ঐতিহ্যবিরোধী, সংস্কৃতিবিরোধী এবং ‘বেজাত’ ভাবার কারণ নেই। মধ্যযুগের কবি শেখ আব্দুল হাকিম বলেছিলেন-
‘যেজন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী/
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন’ জানি’।
আমার কাছে বঙ্গ বাণী = বাংলার ভাষা, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি সব কিছু। কাজেই যারা নানান ধুয়া তুলে, নানা অজুহাতে বাঙ্গালীয়ানার বিরোধীতা করে তাদের জন্ম-ইতিহাস বলা বাহুল্য।
পয়লা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ বরণের দিনে পান্তা-ইলিশ খাওয়াকে বর্ষবরণের ‘ট্রেডমার্ক’ করার অপচেষ্টা দেখে আসছি। এটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক চালিয়াতি। ইলিশ এখন দুষ্প্রাপ্য মাছ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড চাহিদা সৃষ্টি করায় ইলিশ ধরতে গিয়ে নিধন করা হচ্ছে জাটকা (৯ ইঞ্চির ছোট ইলিশ)। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে বিপুল পরিমান জাটকা জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়েছে। কী ভয়াবহ অবস্থা!!. অথচ পান্তার সাথে ইলিশভাজা বাঙ্গালী সাধারণের খাদ্যতালিকায় কখনো ছিল না। মাটির সানকিতে পান্তার সাথে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ চলে। যদিও এখন মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায় পান্তার তেমন প্রচলন নেই। (সিলেট অঞ্চলে পান্তাভাত প্রচলিত ছিল না। বরং অনেকে পান্তাভাতকে গরীবী হাল হিসেবে দেখতেন।) পানি মেশানো ভাতের সাথে গরম ইলিশভাজা যায় না। এটি উদ্ভট রুচি। ইদানিং আইটেম বাড়ানোর জন্য পান্তা-ইলিশের সাথে শুটকিভর্তাসহ আরো কয়েক প্রকার ভর্তার যোগ হয়েছে। রুচি ও স্বাদের দিক থেকে পান্তাভাতকে ভর্তা না বানালেও ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। শ্রেফ ব্যবসাবুদ্ধিতে ইলিশীয় বর্ষবরণকে বাঙালিয়ানা বলা যায় না।
মাছ-ভাতের বাঙ্গালী আমরা ইলিশকে ছাড়তে পারব না। কিন্তু বর্ষবরণের নামে একদিন ইলিশ খেতে গিয়ে মাছবাজারে অনাসৃষ্টি ঘটাচ্ছি কেন? অস্বাভাবিক মূল্যে ইলিশ কিনে বাঙ্গালীয়ানা না দেখালেও চলে। ইলিশে নয়, আচার আচরণে, ভাবনা ও কর্মে বাঙ্গালীয়ানার ছাপ রাখা চাই। বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক উৎসব নববর্ষ বরণ উদযাপিত হোক আনন্দ, মিলন ও সম্প্রীতির জয়গানে।
শুভ হোক নতুন বঙ্গাব্দ। সবাইকে জানাই শুভ নববর্ষ। জয় হোক বাঙ্গালীর।
(সোশ্যাল মিডিয়া থেকে)