মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «   লন্ডনে চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্যবাহী মেজবানী ও মিলন মেলা  » «   কাউন্সিল অব মস্ক টাওয়ার হ্যামলেটসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান, দেড়শত হাজার পাউন্ডের বেশি সংগ্রহ  » «   লন্ডনে পেশাজীবীদের সেমিনারে বক্তারা : দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ পূনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে চায়  » «   মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এম সি এ) এর সদস্য সম্মেলন সম্পন্ন  » «   সাংবাদিক আব্দুল বাছিত রফির পিতা হাজী মো: আব্দুল হান্নান এর মৃত্যুতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  » «   ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মশালায় বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ  » «   হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

বিয়ানীবাজারবাসীর কাছে দানবীর পবিত্র নাথ দাসের খোলা চিঠি : আপনাদের ঐতিহ্যকে বাঁচান



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসী,

আমি আপনাদের স্বজন  পবিত্র নাথ দাস।  আমি দৈহিকভাবে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও আমার আত্মা আপনাদের সাথে মিশে আছে। পঞ্চখন্ডের সন্তান হিসাবে  আপনারা আমার আত্মার আত্নীয়। তাই জীবনের সকল সুখ- দুঃখ আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে কাটিয়ে দিয়েছি।

আমি  ইহলোক ত্যাগের পূর্বে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে শিক্ষার  আলো ছড়িয়ে দিতে পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় নামে যে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছিলাম  তার বয়স এখন একশত ছয় বছর ।

যে উদ্দেশ্যে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলাম  তার শতভাগ না হলেও সিংহভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে বিধায় আমার আত্মা শান্তিতে ছিল।

আজ কয়েকদিন থেকে আমার প্রতিষ্ঠানে অসুরের কালো থাবা দেখতে পেয়ে  আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাই এই সংকটময় সময়ে, আমার নাড়ি ও আত্নার  সম্পর্কের দাবি নিয়ে আপনাদের দুয়ারে দাঁড়িয়েছি। এই অসহায় আকুতি নিয়ে দাড়ানো- আমার জন্য নয়। এই অসহায় আকুতি এককালের নবদ্বীপ,পঞ্চখন্ড তথা বিয়ানীবাজারের বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মর জন্য। নেহায়েত কিছু অকৃতজ্ঞ, জ্ঞানপাপী, মানুষরুপি  অমানুষদের চরম ঔদ্ধত্য, ব্যক্তিগত স্বার্থ, দাম্ভিকতাকারীর প্রদক্ষেপ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। আমার আত্নার আকুল আকুতি-  আমার এই সংকটময় মূহুর্তে বিয়ানীবাজার বাসীকে কাছে পেতে চাই।প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসী,

আপনারা জানেন, আমি পূর্ব সিলেটের এক জমিদার পরিবারের সন্তান। জমিদার বা জমিদারিত্ব নিয়ে আমি এবং আমার পরিবার এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি অত্যাচার –অবিচার করেছি কী-না কিংবা  জমিদার হিসেবে আমি বা আমার পরিবার অহংকারী বা স্বার্থপর ছিলাম কী- না,ইতিহাস তার উজ্জ্বল স্বাক্ষী হয়ে আছে। কালের পঞ্চখন্ডের অগ্রজ বা বর্তমানের প্রবীন ও ইতিহাস ঘনিষ্টজনরা  এখনও এই অঞ্চল সম্পর্কে ইতিহাস বিষয়ক যেসব বর্ণনা দেন তা থেকেও আপনার জানতে পারবেন। আমি  ও  আমার পরিবার বিশেষ করে বিয়ানীবাজারবাসীদের জন্য  রেখে যাওয়া  কর্মগুলোও বিচারের দায়িত্ব আপনাদের উপর।

আমি পবিত্র নাথ দাস বা আমার সন্তান প্রমথ নাথ দাস এই বিয়ানীবাজারবাসীকে অন্তর দিয়ে ভালোবেসে আমাদের সম্পদ  এই অঞ্চলের শিক্ষা ও সামাজিক সার্বিক কল্যাণে  বিলিয়ে দিয়েছি। প্রমাণ হিসেবে পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ  বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ স্বমহিমায় এখনও  দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়াও আরো বহু সম্পদ সর্বসাধারণের সুবিধার্থে বিলিয়ে দিয়েছি।

মানব কল্যাণে এই সম্পদ বিলিয়ে দেয়াই ছিলো আমাদের আনন্দের।প্রসঙ্গত  আমাদের সম্পদের উপর প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান আমি বা আমার সন্তান প্রমথ নাথ দাস এর নামে করিনি। আমরা ইচ্ছা করলে তা করে যেতে পারতাম। আমরা আজীবন  বিয়ানীবাজারবাসীর ভালোবাসার  মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য বিয়ানীবাজারের নামে আমাদের সম্পদ-অর্থ  বিলিয়ে দিয়েছি।

শুধুমাত্র  আমার নি:সন্তান চাচা হরগোবিন্দ এর স্মৃতি রক্ষায় আমার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি –‘ ‘পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামকরণ করেছি। এই নামকরণটি একমাত্র মানবিক কারণে করা। আমার বিশ্বাস, এই বিষয়টি আপনাদের সকলের জানা আছে।

এই প্রতিষ্ঠানের  শত ঐতিহ্য লালিত  পুরনো ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন ভবন করা হয়েছে- তাতে মনে অনেক কষ্ট হলেও, পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায়  মেনে নিয়েছি।

এই বিদ্যালয়ে আমাদের পরিবারের দ্বারা নির্মিত অবশিষ্ট একমাত্র ভবন,যেখানে অসংখ্য ভালো কাজের স্মৃতি বিজড়িত আছে ।  এবং এই ভবনটিতে  আমি বা আমার সন্তানের স্পর্শ রয়েছে- সেটি  একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র  (  শনিবার ২৫ মার্চ ২০২৩ )   ঘরের চাল খুলে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি করে সুপরিকল্পিতভাবে, লোক চক্ষুর আড়ালে অনেকাংশে ভেঙ্গে ফেলেছে।

আমি দেহগতভাবে  পঞ্চখন্ড তথা  এই অঞ্চলে নেই।তবে আমি বা আমার পরলোকগত পরিবার বিশ্বাস করে যে, আমার জন্মভূমির অগণিত মানুষের মাঝে কোন না কোন ভাবে বেঁচে আছি। তাই  এভাবে আপনাদের সামনে এসে প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কোন উপায় আমার নেই।প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসী,

এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার মতো সর্বজনীন কোন যুক্তি নেই। এই অঞ্চল সহ সিলেট বিভাগে এটি বরং শিক্ষা- ঐতিহ্য এর স্মারক হিসাবে আছে। গোটা বাংলাদেশে এই রকম বহু ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানকে সংরক্ষিত রাখতে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য  হলো- সময় এবং অতীতের আলোকিত কর্মকান্ডকে সমাজে উদাহরণ হিসাবে রাখা। যাতে মানুষ বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে সামাজিক কাজে অনুপ্রাণিত হওয়ার শিক্ষা নেয়।

এই রকম শবতর্ষি হাজারো  স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো  যেখানে দেশে-বিদেশে ঐতিহ্যের স্বারক হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখার দৃষ্টান্তও আছে।  এগুলো দেখতে অজস্র দর্শণার্থী আসেন এবং জ্ঞান অর্জন করেন ।

বিয়ানীবাজারের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সকল দিক বিবেচনায় নিলেও বলা যায় -এই ভবনটি এই অঞ্চলের জন্যে একটি আলোকবর্তিকা।

এমন একটি ঐতিহ্যবাহী ভবন গুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত কেমন করে নেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ  ? ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ের বর্তমান এবং প্রবীন কিছু শিক্ষার্থী তাদের অনুসন্ধানে পেয়েছে- একটি মহল  তাদের একজন রাজনৈতিক প্রভূর মনোবাসনা পূর্ণ করতে দীর্ঘ দিন থেকে চেষ্টা করছেন। সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল তথ্যগুলো বলছে যে- এই প্রতিষ্ঠানে একমাত্র দাড়িয়ে থাকা আমাদের পরিবারের ভবনটি থাকলে নাকি ইতিহাসের পাতায় তাদের প্রভূর  নামটি সামনে আসার কোন সুযোগ নেই!

একটি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ভাঙ্গতে প্রসাশনিক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়- তাই বেশ কয়েক বছর থেকে তারা ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। স্কুল কর্তপক্ষের মিটিং থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন এবং সর্বশেষ এটি ভাঙ্গার জন্য নিলামের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে  করা হয়েছে।প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসী,

আমাদের পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত  এই ভবনটি প্রায় অর্ধেক  ভাঙ্গার পরের দিন( সোমবার,২৭ মার্চ ২০২৩) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম  সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন ,  -ভবনটি ভাঙ্গার জন্য শুরু থেকে- ভাঙ্গার অনুমোদন সর্বপরি নিলাম চুড়ান্ত করে ভাঙ্গার প্রক্রিয়াটি  এই স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জাতীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি অনুমোদন দিয়েছেন! তার জ্ঞাতার্তেই এমন ধ্বংসলীলা  হয়েছে। যা  আমাকে চরমভাবে আহত করেছে। আমি তার চেয়ে  বেশী আহত হয়েছি , শত  ঐতিহ্য লালিত এই ভবনটি  নিলামে বিক্রি করার জন্য।

তবে আমি আশান্বিত হয়েছি, এই স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী এবং এই স্কুল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা নেয়া বিয়ানীবাজারের অগণিত মানুষের প্রতিবাদি হয়ে  এই ধ্বংসলীলা বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য।

আমার আশার কথা হলো- ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজারে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। দেশে ও প্রবাসে এই ভবন ভাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। এবং ভবনটি ভাঙ্গার মাধ্যমে পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অতীতের সকল কর্মযজ্ঞ পরিকল্পিতভাবে মুছে ফেলার শেষ পেরেকটি মারার নানা উদ্যোগের খবরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।

অপরদিকে পরিতাপের বিষয় হলো- একটি চক্র এটি নিয়ে অব্যাহত মিথ্যাচার করছে এই বলে যে, এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য কিছু জানেন না। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছে যে, এই সিদ্ধান্তের জন্য এককভাবে দায়ী- বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

কিন্তু সরকারী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোন কাজ করতে যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার সেগুলো স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুমতিতে হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন।প্রিয় বিয়ানীবাজারবাসী,

আমি আপনাদের স্বজন  পবিত্র নাথ দাস।  পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা । শুধু তাই নয় আমার পরবর্তি প্রজন্ম এই বিদ্যালয় সহ আধুনিক বিয়ানীবাজারের অন্যতম রুপকার। জীবিত থাকতে আমাদের সাধ্য মতো আমার-আপনার জন্মভূমির উন্নয়নে সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছি। আমরা এখন প্রয়াত। দেহহীন। তবে আমাদের বিশ্বাস- আপনারা জ্ঞান ও ঐশ্বর্যে আলোকিত ও সচেতন।

এই ঐতিহাসিক স্থাপনায়  কে বা কাদের ইন্দনে  ধ্বংসলীলা চালানো  হয়েছে -তার তদন্ত বা কোন বিচার আমি চাচ্ছি না। আমি চাই- আমাদের স্মৃতি বিজড়িত ও শত বছরের ইতিহাস লালিত ভবনটি যেন পূর্বের আদলে পূন: নির্মাণ করে দিতে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা ।

বিনীত,

আপনাদের  পবিত্র নাথ দাস

২৮ মার্চ, ২০২৩ সাল।

ছরওয়ার আহমদ

হেড অব পাবলিক  অ্যাফেয়ার্স ;৫২বাংলা টিভি , সাবেক ভিপি ১৯৯৫-৯৬ সাল , বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ, সিলেট । সংগঠক, স্যোসাল একটিভিস্ট।

আরও পড়ুন:

গ্যালারি অব একসেলেন্স: ঘৃণা লজ্জা এবং সত্যের বিজয়


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক